header banner

সাহিত্যের পাতাঃ উপলব্ধি- নিখিল কুমার চক্রবর্তী

article banner

আপাতত যেখানে বাসস্থান ঠিক তার পাশ দিয়ে কালো পিচ ঢালা চওড়া রাস্তাটা সোজা চলে গেছে চিত্তরঞ্জন হাসপাতালের দিকে। অনর্গল, অহরহ গাড়ির যাতায়াতের আওয়াজে কানের অবস্থা যতটা খারাপ তার চেয়ে প্রথমদিকে মনের অবস্থা আরও খারাপ হত। বিল্ডিংয়ের তিনতলায় বাস। রাস্তাটা দিয়ে কোন ভারী গাড়ি গেলেই পুরো বিল্ডিংটা কেঁপে ওঠে। এতে সুবিধে অসুবিধে দুই আছে। সুবিধে এই যে একবার ধাতস্থ হয়ে গেলে ভুমিকম্পের সত্যি কাঁপনেও মনে ভয় জাগে না। একেবারে পরীক্ষিত সত্যি এটা। নিউজ চ্যানেলগুলো থেকে জানতে পারা যায় যে ভুমিকম্প হয়েছিল। অনুমান করতে হয়, ও আচ্ছা - ঐ সময়টায় বিল্তিংটা কেঁপেছিল বটে। অসুবিধে এই যে, মাঝে মাঝে রাতে এত জোরে কেঁপে ওঠে যে ঘুম ভেঙে যায়। ভয় হয়, এটা অন্য কিছু নয় তো? তো, এই নিয়ে অভ্যস্ত হতে হতেই নতুন ভাইরাস, নতুন রোগ এসে গেল। সবার নজর সেদিকে। রোজ রোজ রোগের ধাক্কা আর অগ্রগতিতে মানুষ দিশেহারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে সবাই আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। যে কোন নতুন জিনিসের আগমনে যেমনটা হওয়া উচিত তেমনই হচ্ছে। আগন্তুককে না চিনলে তার স্বভাবও চেনা যায় না। সবাই নতুন রোগের স্বভাব জানার আন্তরিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা বেয়ারা রোগ ও বলিহারি! সেও নাকি নিজের চরিত্র পাল্টে যাচ্ছে। যত এসব সংবাদ মাধ্যমে শুনছি তত অবাক হচ্ছি। এমন বিতিকিচ্ছিরি ভাইরাস কোত্থেকে এল রে বাবা! এরমধ্যে শুরু হল লকডাউন। হঠাৎ করে নীরব, নিষ্কম্প হয়ে গেল আমার চারপাশ। গাড়ির আওয়াজ নেই, বিল্ডিঙে কাঁপন নেই। গাড়ির তীব্র হর্ণ আর রাস্তায় ভারী চাকা ঘষটানোর আওয়াজ না পেয়ে এই প্রথম মন খারাপ করতে লাগল। বিল্ডিংয়ের কাঁপনকে মনে হতে লাগল পাল্কির দুলকি চালের রোম্যান্টিক কাঁপন। যেন সব হারিয়ে ফেলেছি এমন মন খারাপের দিন সামনে হাজির। প্রচণ্ড রকমভাবে ফিরে পেতে চাইছিলাম সেগুলো। চুপচাপ দাঁড়াতাম জানলাটার সামনে। জানলার বাইরে দিয়ে দৃষ্টি উধাও হয়ে যেত দূরে। অনেক দূরে। ফিরে যেতে চাইতাম পুরনো স্বাভাবিক দিনগুলোতে। অনুভব করলাম আস্তে আস্তে চোখের সামনে প্রকৃতি অন্য কিছুর সম্ভার নিয়ে উপস্থিত। গাছের পাতার সবুজ আরও বেশি সবুজ লাগছে না? ও মা! কৃষ্ণচূড়া তো আর লাল, আরও উজ্জ্বল! রাধাচূড়ার হলুদ রং যেন কাঁচা হলুদ বেটে ছেনে আনা! গাছে অনেক বেশি করে মুকুল আসতে দেখলাম। কতরকমের পাখির কূজন! কতদিন শুনিনি একসাথে এত পাখির কনসার্ট! যাক, সবকিছু হারিয়ে যায় নি। কিছু তো নতুন করে পেয়েছি! এরই মাঝে কানকে ভারাক্রান্ত করে বাজতে থাকে এম্বুলেন্সের সাইরেন। যখন তখন। দিন রাত। নিজেকে ফিরে পাওয়ার আকুতিতে মানুষের ছুটে যাওয়া হাসপাতালের দিকে। সাইরেনটা যেন সতর্কবার্তা ছড়িয়ে যায়। বলে যায়, নিয়ম মানো, সাবধান হও, সতর্ক হও। নিজের অজান্তেই প্রার্থনা করি, মানুষগুলোকে রোগমুক্ত করার প্রয়াস সার্থক হোক। সার্থক হোক পৃথিবীর টিকে থাকার লড়াই।

{ads}

Bengali Stories Stories Saturday News Feature Special Sheffield Ttimes Nikhil Kumar Chatterjee সাহিত্য প্রবন্ধ গল্প ছোটগল্প বাংলা ছোটগল্প বিশেষ রচনা

Last Updated :