শেফিল্ড টাইম্স ডিজিটাল ডেস্ক : আজ, ৭ নভেম্বর বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক মনস্ক মানুষদের কাছে একটা বিশেষ ঐতিহাসিক দিন। ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর সেই দিন, যেদিন সোভিয়েত রাশিয়ায় ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিকরা ক্ষমতা দখল করে এবং জারবাদী শাসনের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে। এটাই বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। স্বাভাবিক কারণেই সমাজতন্ত্রীদের কাছে এই দিনটি সত্যি ঐতিহাসিক দিন। লেনিনের নেতৃত্বে বলসেভিকেরা ক্ষমতা দখল করার পরে সেই দলের নাম দেয় 'সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টি'। সেই সময় জার শাসনে ক্ষত-বিক্ষত রাশিয়ার মানুষ। তীব্র অভাব, ভয়ঙ্কর শোষণ, নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে যে বিপ্লব ঘটেছিল, তা যেন মুক্তির হাওয়া এনে দিলো দরিদ্র শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণীর সামনে। তারা গঠন করলো নিজেদের সরকার। আর সরকারের প্রধান নীতি আগেই কার্ল মার্ক্স বলেছিলেন - 'দেশের মানুষ সাধ্য অনুযায়ী শ্রম দেবে আর রাষ্ট্রশক্তি তাদের জীবন-জীবিকার দায়িত্ব নেবে।' বিশ্বজুরে তৈরী হলো এক নতুন উন্মাদনা। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো সমাজতন্ত্রের বার্তা।
{link}
রাশিয়ায় ১৯১৭ সালের এই বিপ্লবের পটভূমি তৈরী হয়েছিল বহু বছর আগের থেকেই। বিশেষ করে ১৯০৫ সালটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জার শাসন ও শোষনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার শ্রমজীবী মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে জার শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবার করলে জারদের পুলিশের নির্মম অত্যাচারে কয়েকশো শ্রমিক হতাহত হয়। এটাই অন্যতম কারণ যে, জারদের বিরুদ্ধে শ্রমজীবী মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে। আর তখনই তারা তৈরী করেন 'সোভিয়েত' নামে এক কাউন্সিল। ওই ১৯০৫ সালেই জাপানের হাতে পরাজিত হয় জার শাসক ও তাদের বিপুল আর্থিক সংকট দেখা দেয়। এর পরেই রাশিয়া ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ ও ফরাসিদের মিত্র হয়ে জার্মাণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পর্যদুস্থ হয়। দেশে নেমে আসে আরও গভীর সংকট। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শ্রমিক ও কৃষকের মধ্যে ব্যাপক সংগঠন তৈরী করে বলসেভিকরা (পরে কমিউনিস্ট পার্টি)।
{link}
এর পরেই বিশ্বজুড়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলে কমিউনিস্ট আন্দোলেন। ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে নিজেদের অর্থাৎ জনগনের সরকার গড়ার আন্দোলনে সাফল্য আসে মাও-সে-তুঙয়ের নেতৃত্বে চিনে। তারপরে একে একে একে ফিদেল কাস্ত্রের নেতৃত্বে কিউবা,প্যাথ লাওয়ের নেতৃত্বে লাওস,হোচি মিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনাম সহ আরও বেশ কয়েকটি দেশে। আর লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার বহু দেশে গড়ে ওঠে কমিউনিস্ট পার্টি ও কমিউনিস্ট আন্দোলেন। স্বাভাবিক কারণেই ৭ নভেম্বর বিশ্বের 'সমাজতন্ত্রী' দের কাছে একটা বিশেষ সম্মানের দিন। কার্ল মার্ক্স যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাকে বাস্তবে রূপ দেবার জন্যই মহামতি লেনিন বার বার বলতেন - 'দুনিয়ার মজদুর এক হও' - তা আজও প্রাসঙ্গিক।
{ads}