header banner

উপলব্ধিঃ উপহারের বহর- নিখিল কুমার চক্রবর্তী

article banner

শুনেছি, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নামে কটুক্তি করেছে এমন এক ব্যক্তি সম্বন্ধে না কি তিনি বলেছিলেন, "আমি তো তার কোন উপকার করিনি, তাহলে সে আমাকে গালিগালাজ করছে কেন?" কথাটার মানে কি দাঁড়াল? কারোর উপকার করলে বিনিময়ে সে গালাগাল ফেরত দেবে। কেন? সোজা সাপটা একটা উত্তর দেওয়া যায়। যাতে উপকারী বিনিময়ে তার কাছ থেকে কোনও উপকার ফেরত না চায়! উপকারীর উপকার মনে রাখলেই তো তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। এখানে আর একটা প্রশ্ন মনে জাগা স্বাভাবিক। উপকার বলতে কি বুঝি আমরা? ব্যাপারটা আপেক্ষিক নয় কি? আমি হয়ত ভাবলাম কারোর জন্য কিছু বলে বা করে তার উপকার করলাম। কিন্তু যার জন্য এটা বলা বা করা হল তার কাছে এটা উপকার বলে প্রতিপন্ন নাও হতে পারে। উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা হয়ত আরও পরিষ্কার হবে। একটা রিক্সাচালক রিক্সা টানার সময় প্রচণ্ড কাশছে, অথচ তার ঠোঁটে সবসময় বিড়ি ঝুলছে। আপনি তার রিক্সা দাঁড় করিয়ে যদি বিড়ি না খাওয়ার অনুরোধ করেন তারই ভালর জন্য, তাহলে সে আপনাকে গালাগাল দেবে না? তার তখন রোজগারের সময়। শরীরের কথা ভাবার উপায় নেই। রিক্সা টানা ছেড়ে আপনার লেকচার শোনার সময় কোথায় তার? আপনি ভাবছেন, তার উপকার করছেন। কিন্তু সে তা ভাবছে না। আবার দেখুন, এই লক ডাউনের সময় ঘরবন্দী ছেলে বুড়ো সবার হাতেই মোবাইল। অন্তর্জাল জীবনের অঙ্গ হয়ে গেছে। পড়াশোনা, বিনোদন, বাজার হাট, অফিস সবকিছুই এই অন্তর্জালের আওতায়। বুড়োদের কথা বাদ দিলাম। তাদের ভাল মন্দ যা হওয়ার হয়ে গেছে। যা হয়ে গেছে তার ঐতিহ্য বয়ে বেড়ানোই তাদের জীবনের উদ্দেশ্য। নতুন করে কোন অভ্যাস তৈরি করা তাদের পক্ষে কঠিন। ছোটদের তো আর তা নয়। লকডাউনও চিরকাল স্থায়ী হবে না, নিশ্চয়ই। আবার জীবন একদিন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে। নচিকেতার গান সত্যি হয়ে দেখা দেবে। "একদিন ঝড় থেমে যাবে/পৃথিবী আবার শান্ত হবে।" তাই ছোটরা যদি এত মোবাইল বা অন্তর্জাল নির্ভর হয়ে যায় তাহলে ভবিষ্যতে অসুবিধা হবে - এই ভেবে আপনি কোন কিশোর/কিশোরী/যুবক/যুবতীকে যদি মোবাইল তথা অন্তর্জালের বেশি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে বলেন তাহলে সে/তারা কি চুপ করে থাকবে? আপনাকে গালাগাল দেবে না? তাদের পড়াশোনা, বিনোদন সবইতো ওখানেই আটকে আছে। ব্যাপারটা তাহলে এরকম দাঁড়ালো। এখন দুমদাম করে উপকার করার আবেগ নিয়ে চললে হবে না। স্থান, কাল, পাত্র বিশেষে উপকার করতে হবে। তবেই সেই উপকারের মূল্য বোঝা যাবে। আর উপযাজক হয়ে উপকার করা? নৈব নৈব চ। এর কোন মূল্যই নেই। প্রমাণ চান? আপনার লেখা বা আপনার প্রিয় কোন বই কোন পুস্তকপ্রেমিককে(?) "সৌজন্য সংখ্যা" হিসাবে না চাইতেই দিয়ে দেখুন। আপনার ভাগ্য খুব ভাল না হলে কিছুদিনের মধ্যেই বইটি পুরনো বই এর দোকানে খুঁজে পাবেন। এবং নিশ্চিতভাবে অপঠিত অবস্থায়। ব্যতিক্রম নেই তা বলছি না। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমনটাই হতে দেখেছি। আরও একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। কি পরিমাণ উপকার করা উচিত? কারোর হয়ত দশ টাকার দরকার পড়েছে। আপনি তাকে পঞ্চাশ টাকা দিলেন। সে ভাববে, "বেটার নিশ্চয়ই দু নম্বরী রোজগার আছে। না হলে এত বেশি বেশি টাকা ওড়ায়?" আপনি ভেবেছিলেন, যে জন্য টাকাটা চাইছে তা তো দশ টাকায় হওয়ার নয়। বেশিই দিই। আপনার সদুদ্দেশ্য জলে গেল। আবার কারোর পঞ্চাশ টাকা দরকার। দিলেন দশ টাকা। অবধারিতভাবে "কিপ্টে" আখ্যা পাবেন। এখন একটা কথা মনে আসতেই পারে। এত ভেবে চিন্তে কি উপকার করা যায়? মানুষের ভাল করাও কি নিক্তি মেপে হয়? হ্যাঁ, হতে হবে। সবকিছুই সময়ের সাথে পাল্টায়। উপকারের বহরও সময়ের সাথে পাল্টাবে, এতে আর আশ্চর্যের কি আছে? দেখছেন না, দলে দলে নেতা, অভিনেতা সবাই কেমন মানুষের উপকারের জন্য দিনের আয়েশ, রাতের ঘুম বিসর্জন দিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে? আজ বটগাছের নীচে, কাল বাবলাগাছের নীচে, পরশু তেঁতুলগাছের নীচে আশ্রয় নিচ্ছে? কে নেতা, কে অভিনেতা সব গুলিয়ে দিচ্ছে? এটাই এখন দস্তুর। আর এই দস্তুর মেনে চলতে পারলে আপনি যোগ্য, নাহলে অযোগ্য। ডারউইন তো বহুকাল আগেই "যোগ্যতমের বিবর্তন" এর কথা শিখিয়ে গেছেন। তাই না?

{ads}

news page of literature story short story essay realization. Nikhil Kumar Chakravarty West Bengal India উপলব্ধি উপহারের বহর

Last Updated :