header banner

গরমিল- সঞ্জয় ঘোষ

article banner

দিন কয়েকের ছুটি নিয়ে অনেক দিন পর বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায়ে ফিরলাম I বেশ কয়েক বছর ধরে আমার ঠিকানা কলকাতা থেকে বেঙ্গালুরুতে শিফ্ট হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে ওখানকার জীবনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখেছি। তবে রোজ সকালে বাংলা কাগজ পড়ার জন্য মনটা ছটফট করত। ইংরেজি কাগজ পড়ে মনে ঠিক শান্তি আসত না। কলকাতায় এসে তাই রোজ বাংলা খবরের কাগজ  গিলে খেতে লাগলাম I এই নাহলে খবরের কাগজ!  হটাৎ  একদিন খবরের কাগজের  একটা ছবিতে চোখ আটকে গেলো I প্রিজন ভ্যানে এক মহিলাকে তোলার ছবি দিয়ে খুব বড় করে খবর করা হয়েছে। এখন এক নতুন স্টাইল হয়েছে খবরের! অভিযুক্তের নাম সচরাচর প্রকাশ করা হয় না। বারবার ছবিটা দেখলাম। খুব চেনা।  অনেকটা আমাদের কলেজের রূপার মতো দেখতে I  খবর পড়ে জানতে পারলাম, বেহালা থানার একটা খুনের ঘটনা I রিপোর্টারের নাম দেখলাম। আরে, এত আমার পূর্ব পরিচিত। একসময় বেঙ্গালুরুতে পোস্টেড্ ছিল I ফোনে ধরলাম তাকে I হ্যালো বলতেই  চিনে ফেললো I একটা দুটো কথা বলে আসল কথাতে এলাম, জানতে চাইলাম ঘটনাটা কি ? যা শুনলাম, তারপর মুখ দিয়ে আমার আর কোনো কথা বেরুলো না I   

ঠিক অনুমান করেছি। মহিলাটি আমাদের কলেজের রুপা I নামের সঙ্গে মানানসই ছিল তার চেহারা I সত্যি রূপা সুন্দরী ছিল। তার বাবা কাজ করতো পুলিশে, পয়সার কোনো অভাব ছিল না I খুব ধুমধাম করে বিয়ে হয়েছিল এক ডাক্তারের সঙ্গে I রতন।  বন্ধুদের কাছে শুনেছিলাম খুব ভালো আছে রূপI আর রতন I স্বামী বাচ্চা নিয়ে সুখের সংসার তাদেরI তবে রতন তার ডাক্তারি নিয়ে ব্যস্ত থাকে সারাদিন। রূপাকে সময় দিতেই পারে না। সংসারের কাজ সামলেও রূপার হাতে অঢেল সময় I হাতের  এন্ড্রোইড ফোন তার সঙ্গী। সেও ব্যস্ত হয়ে পড়ছিল ফেসবুকে। নতুন নতুন ফ্রেন্ড জোগাড় করতে I জুটে যাচচ্ছিল হরেক রকম বন্ধু I যুক্ত হলো  সাহিত্য চর্চার গ্রুপে  I আর সেখানেই আলাপ হল পেশায় ইঞ্জিনিয়ার আগরপাড়ার  বাসিন্দা অমলের  সঙ্গে  I অমলের অসাধারণ কবিতা লেখার ক্ষমতা I যে কোনো লোককে  মোহিত করে দিতে পারে  তার কবিতাI  রূপা তার কবিতা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়ত। সে নিজেও একসময় নিয়মিত সাহিত্যচর্চা করত। তার লেখা কবিতাও অনেকের প্রশংসা নিয়ে আসত। এই সাহিত্যচর্চা করতে করতেই তার অমলের সাথে সম্পর্কের সূত্রপাৎ I প্রথমে তারা ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপে কথাবার্তা বলত। অমল তখন বিবাহিত। কিন্তু তার বৌ গভীর  রোগে  আক্রান্ত এবং বাঁচার আশা খুব  ক্ষীণ। অমলের প্রতি সহানুভূতিতে রূপা আবিষ্ট হয়ে যায়। অমলও রূপাকে সহানুভূতির মোহতে নিজের দিকে টানতে আরম্ভ করে। নিঃসঙ্গ রূপা অমলের সঙ্গ পাওয়ার কামনায় তার সাথে দেখা করে। নতন জীবনের আশা দেখায় অমল। রূপাকে সে নুতন জীবন দেবে বলে কথা দেয় I এমনকি, বৌয়ের মৃত্যুর পর রূপাকে বিয়ে করবে বলে কথাও  দেয়। রূপা অমলের কথায় ভুলে যায়। অমলের মেকি ভালবাসাকে আসল বলে ভাবতে শুরু করে। ক্রমশ অমলের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। রতনের অগোচরে তারা প্রায়ই একসঙ্গে ঘোরাঘুরি করতে শুরু করে। একদিন এক মন্দিরে গিয়ে তারা আংটি বদল করে। অমলের সঙ্গে এক নতুন জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখে রূপা। কেষ্টপুরে একটি বাড়ি ছিল অমলের।  রতনকে মিথ্যা বলে যেখানে এসে মাঝে মাঝে অমলের সাথে সময়  কাটাতেI রূপা। নিজেকে সম্পূর্ণভাবে অমলের কাছে সমর্পণ করে সে। বিভিন্ন মলে, রেস্তোরাঁয় নিয়মিত যাতায়াত শুরু হয় অমল আর রূপার। বুক ফেয়ারে যাওয়া, সিনেমা দেখা কিছুই বাদ যেত না। অবশ্যই সবকিছু রতনকে না জানিয়ে। রতন যখন মেডিকেল কনফারেন্সে বাইরে যেত তখন চলত রূপার উদ্দাম অভিসার I বাপের বাড়ি যাচ্ছে বলে রাত কাটাতো অমলের ফ্ল্যাটে I কখনও কখনও বাড়ি ফাঁকা থাকলে নিজের বাড়িতেও অমলকে ডেকে নিত সে। আস্তে আস্তে ব্যভিচারিতার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল রুপা I এমনকি ঘরে বাইরে ড্রিংক করাও শুরু করে দিয়েছিল I 

অমলের সঙ্গে তার এই গোপন সম্পর্কের কথা জানতে পেরেছিল রূপার মা ও বোন। অবাক হয়ে গিয়েছিল তারা। রূপা কখনও এমন হবে তা তাদের চিন্তার বাইরে ছিল।তাদের পরিবারে রূপাকে নিয়ে আলোচনা হত, রোজই। সমস্যা বাড়তে থাকল ক্রমশ। রূপা এসবের ধার ধারত না। তার পরেও অমলের সাথে সম্পর্ক ধরে  রেখে ছিল । যদি অমল বৌয়ের মৃত্যুর পর রূপাকে  সামাজিকভাবে বিয়ে করে, এই আশায় I তারা সবসময় স্বামী স্ত্রীর মত থাকতে শুরু করল। রূপাকে ভোলাবার জন্য একদিন মন্দিরে গিয়ে অমল তাকে বিয়ে করে ফেলেI কিন্তু এ বিয়ের তো আইনগত মান্যতা নেই। অতএব রতনের থেকে ডিভোর্স চাই। রতনের থেকে ডিভোর্স নিয়ে অমলের সঙ্গে ঘর বাঁধবে রূপা I  এরই মাঝে ছন্দপতন ঘটল। একদিন অন্য ফেসবুকবন্ধুদের মাধ্যমে   রূপা জানতে পারল,  অমলের সঙ্গে আরও অনেক মহিলার এইরকম  সম্পর্ক রয়েছে এবং অমলের একটি অবৈধ সন্তানও আছে। আসলে সে একটা প্লে বয়। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই সম্পর্ক ভেঙে বেরিয়ে আসতে চায় রূপা। কিন্তু তখন  অনেক দেরি হয়ে গেছে I নিষিদ্ধ সাইটে তাদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি আর ভিডিও আপলোডর মাধ্যমে পয়সা রোজগার করা শুরু করে দিয়েছিলো অমল I রূপা তখন অমলের হাতের পুতুল হয়ে গেছে। 

(পরের অংশ ২য় পর্বে)

{ads}

news short story story literature poet poem love story Sanjay Ghosh writing প্রেমের গল্প গল্প ছোট গল্প রচনা সংবাদ

Last Updated :