header banner

বাঁকুড়ার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে দেবী দুর্গার বাহন বাঘ, রূপোর পালকিতে স্নানে যান নবপত্রিকা

article banner

আচ্ছা আমরা সচরাচর কি জানি? মা দুর্গার বাহন কে? যাকেই প্রশ্ন করবেন সেই এককথায় বলবে সিংহ। কিন্তু যদি কেউ উত্তরে বাঘ বলে বসে! বসে পড়বেন তো… এক্কেবারে যুক্তি তক্কো বেঁধে যাবে, খুলে বসে পড়বেন জ্ঞানের ঝুলি। স্বাভাবিকই তো, এ আবার হয় নাকি! মা দুর্গার বাহন বাঘ! বললেই হলো! কিন্তু সত্যি বললে এক ক্ষেত্রে এটাই হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। মা দুর্গা মর্তে আসেন বাঘের পিঠে চড়ে।


এ পরিবারে দেবী দুর্গা সিংহবাহিনী নন, তাঁর বাহন বাঘ। তিনি ব্যাঘ্রবাহিনী। দুশো বছরেরও বেশি সময় ধরে বাঁকুড়ার অযোধ্যা গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে এই রূপেই পুজো পেয়ে আসছেন দেবী দুর্গা। রূপোর পালকিতে চড়ে স্নানে যান নবপত্রিকা। রূপোর থালায় খান দেবী দুর্গা। 

{link}
শ্রীরামপুরের এক নীলকর সাহেব অসুস্থ হয়ে পড়েন কলেরায়। মহামারী এই রোগের ভয়ে সাহেবকে ছেড়ে পালান তাঁর নিকটজনেরা। পড়ে থাকেন অযোধ্যার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সন্তান রামমোহন। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ভাগ্যান্বেষণে বেরিয়ে ওই সাহেবের কাছে এসে পড়েন তিনি। নিরন্তর তাঁরই সেবা করতে থাকেন রামমোহন। পুরস্কারস্বরূপ সাহেব তাঁকে দান করেন অর্জিত সম্পত্তির অর্ধেক। এর কিছুদিন পরেই কলেরায় ভুগে মারা যান সাহেব। আক্ষরিক অর্থেই কপাল ফেরে রামমোহনের। 

{link}
নীলকর সাহেবের সম্পত্তির সাহায্যেই রামমোহন বিশাল সম্পত্তির মালিক হন। কাশী, বেনারস ও তৎকালীন বিহারের বিভিন্ন জায়গায়ও এই পরিবারের জমিদারি এক সময় ছিল। এই জমিদারির বিশাল আয়েই অযোধ্যা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় জমিদার-এস্টেট। দালানকোঠা টাঙানোর পাশাপাশি তৈরি হয় দেবত্র এস্টেট। এই এস্টেটের মধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয় দ্বাদশ শিব মন্দির, গিরি গোবর্ধন মন্দির, রাসমন্দির, ঝুলন মন্দির ও দুর্গাদালান। ঘটা করে শুরু হয় দুর্গাপুজো। 

{link}
বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দেবীর সঙ্গে তাঁদের সন্তান-সন্ততিরা থাকলেও, দেবীর বাহন এখানে আলাদা। অন্যত্র দেবী দুর্গা সিংহা-আরূঢ়া। আর বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দেবীর বাহন বাঘ, সিংহ নয়। একচার প্রতিমা। অন্যত্র ছাঁচেই তৈরি হয় দেবীর মুখ। তবে এ বাড়িতে দেবীর মুখ গড়তে হয় শিল্পীকে। বংশ পরম্পরায় প্রতিমা শিল্পীরাই একাজ করেন। এক সময় এ বাড়ির পুজোয় আনন্দ করতে আসতেন দূর-দুরান্তের বহু নামীদামি ব্যক্তিত্ব। 


জমিদারি গিয়েছে সেই কবেই। তবে আজও নিয়ম নিষ্ঠা মেনেই পুজো হয়ে আসছে এখনে। দেবী আসার সঙ্গে সঙ্গেই ভাঁড়ার থেকে চলে আসে নবপত্রিকা স্নানের রূপোর পালকি, পুজোর রূপোর বাসনকোসন। পুজো শুরু হলেই গমগম করে দুর্গা দালান। সকলে অভিনব আনন্দে মেতে ওঠেন দুর্গাপুজোয়। সত্যি অবাক হওয়ার মতোই বিষয় না? এখানেই তো বাংলা ও বাঙালির দুর্গাপুজার মাহাত্ম। 
{ads}

Durga Puja Historical Durga Puja Kolkata Howrah Bankura Tradition Culture West Bengal India দুর্গাপুজো বনোদি বাড়ির পুজো ঐতিহাসিক পুজো জমিদার বাড়ির পুজো

Last Updated :

Related Article

Care and Cure 1

Latest Article