বাংলার কাছে সবচেয়ে উৎসব মুখর দিনগুলিতে যে ঠাকুরের পূজা সম্পন্ন হয়, তিনি নিজে মাতৃরূপে বাঙালির ঘরে আসেন। কিন্তু সেই মায়ের পুজোতেই পুজোর দিনগুলোতে মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ মহিলাদের। সংসারের এহেন নিয়ম দেখলে অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক। এবং এই রীতিই চলেও আসছে বহু বছর ধরে।
উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ শহরের সেনবাড়ির দুর্গাপুজোয় এটাই রীতি। মন্দিরের বাইরে দাঁড়িয়ে দেবী দুর্গার দর্শন করেন এই পরিবারের মহিলা সদস্যরা। জমিদারি এখন আর নেই। তাই সেই জাঁকও আর নেই। তবে পুজো হয় নিয়ম নিষ্ঠা মেনেই।
{link}
রায়গঞ্জ শহরের সুদর্শনপুরেই বাস সেনেদের। এক সময় এঁদের বাস ছিল বাংলাদেশের যশোরে। পুজোর সূচনা করেন সুরেন্দ্রনাথ সেন। পরে বাংলাদেশের পাট চুকিয়ে সেন পরিবার চলে আসেন রায়গঞ্জে, সুদর্শনপুরে। এখানে এই পুজো পড়ল ৭৬ বছরে। বাংলাদেশে যে রীতি মেনে পুজো হত, এখানেও তেমনটাই হয়। বৈষ্ণব নয়, এখানে পুজো হয় শাক্ত মতে। সপ্তমী থেকে নবমী প্রতিদিনই বলি হয়। এ বাড়ির পুজোয় ছেলেরা অংশ নিতে পারলেও, মেয়েরা পারেন না। তবে মন্দিরের চাতালে বসে দেবদর্শন করতে পারেন।
{ads}
কর্মসূত্রে বর্তমানে সেন পরিবারের সদস্যরা দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকেন। তবে পুজোর সময় সবাই একত্রিত হন। পরিবারের সদস্যদের দাবি, তিনশো বছর আগে পুজো শুরুর সময় থেকে এ পর্যন্ত একবারও পুজো বন্ধ হয়নি। পুজো চলাকালীন কোনও সদস্যের মৃত্যু হলেও, পুজো বন্ধ হয়নি। এ বাড়িতে দেবীকে অন্নভোগ নিবেদন করা হয় না। ফলমূল, লুচি-মিষ্টি দিয়েই পুজো হয়। একচালার প্রতিমায় পুজো হয়। এখানে দেবীর মহিষাসুরমর্দিনী রূপের পুজো হয়। দেবীর সঙ্গে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ সবাই থাকেন। এসব প্রত্যক্ষ দেবতা ছাড়াও আরও অনেক দেবতার পুজো হয়। নিয়ম মেনে হয় সন্ধিপুজোও। তবে কুমারি পুজো হয় না এ বাড়িতে। জমিদার বাড়ির পুজো দেখতে এখনও ভিড় করেন দূর-দুরান্তের মানুষ।
{link}
স্থানীয় বহু মানুষের এই মন্দিরে পুজোর সময় মহিলাদের প্রবেশ করা নিষিদ্ধ থাকলেও এর বিরুদ্ধে সেইভাবে আজ পর্যন্ত কেউ সেইভাবে প্রতিবাদ জানাতে আসেননি। বহু বছর ধরে চলতে আসা নিয়মের ছক ভাঙার চেষ্টাও করেননি কেউ। মহিলারাও মন্দিরের বাইরে থেকেই মায়ের আশির্বাদ নিয়ে চলে যান। হয়ত মায়ের ওপর আস্থা রয়েছে বিপুল, সেই কারনেই চেনা ছক ভাঙতে চান না তারা…
{ads}