header banner

হারিয়ে খোঁজার পথে(ধারাবাহিক)-নিখিল কুমার চক্রবর্তী{পর্ব-৭}

article banner

চাঁপাডাঙ্গার মোড়ে এসে আটকে গেল নিশা। চৌরাস্তার মোড় আটকে একটা জনসভা হচ্ছে। নিশার তর সইছিলো না। মনে মনে জনসভাটার উদ্দেশে বিষোদ্গার করছিল। এক একটা মিনিট এক এক ঘন্টা মনে হচ্ছিল। গাড়ির ভেতরে বসে ছটফট করছিল নিশা। সুমিতকে ফোনে একবার জানিয়ে দেবে ভাবল। নিজেকে সংযত করল। বারবার পরোক্ষ মাধ্যম ব্যবহার না করে  সামনাসামনি হওয়াই বোধহয় ভাল। ঘন্টাখানেক পরে রাস্তা খুলল। গাড়ি ছোটাল নিশা। সকালে বাড়ি থেকে শুধু এক কাপ গ্রিন টি খেয়ে বেরিয়ে পড়েছে। এখন খিদে পেয়েছে বুঝতে পারছে। কিন্তু কোথাও সময় নষ্ট করতে তার ইচ্ছা করছিল না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুমিতের সামনে যেতে হবে তাকে। যেতেই হবে।

আরামবাগে ঢুকে ট্রাফিক পুলিশের কাছে হাসপাতালের ঠিকানা জেনে যখন পৌঁছাল নিশা তখন দেড়টা বেজে গেছে। দূর থেকে দেখতে পেল সুমিত মেন গেটের দিকে হেঁটে আসছে। আগের সেই গোলগাল, মাথা নীচু করে হাঁটা সুমিত নয়, সুঠাম চেহারার মাথা সোজা রেখে হাঁটা সুমিত। নিশা ঠিক চিনতে পেরেছে। যতই পাল্টে যাক, নিশা সুমিতকে চিনবে না এমন হতেই পারে না। মনের মধ্যে একটা তোলপাড় অনুভব করল নিশা, একটা বেদনার শব্দ দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেরিয়ে এল। মোবাইলটা হাতে তুলে নিল। সুমিতের নম্বর ডায়াল করতেই দেখতে পেল সে ফোনটা কানে লাগাল।
--যেখানে আছিস ওখানেই দাঁড়া। তোকে এগোতে হবে না,আমি তোর কাছে আসছি।
সুমিতকে রাস্তার দিকে তাকাতে দেখল নিশা।
--তোর দিকে একটা গোল্ডেন কালারের গ্রান্ড আই টেন আসছে দেখ।
নিশা দেখতে পেল সুমিত দাঁড়িয়ে তার গাড়ির দিকে তাকাচ্ছে। তার কাছে গিয়ে গাড়িটা দাঁড়াতেই সুমিত পিছনের দরজা খুলে উঠে বসল। নিশাকে বলল
--গাড়িটা ঘুরিয়ে যেদিক দিয়ে এসেছিস সেদিকেই চল।
নিশা একটু হতভম্ব হয়ে গেল। সুমিত কি তাকে ফেরত পাঠাতে চাইছে? জিজ্ঞাসা করল
--ওদিকে কোথায় যাব?
--যেখানে যেতে বলছি, চল।
নিশা গাড়ি ঘোরাল। ড্রাইভ করতে করতেই বলল
---প্লিজ কোথাও একটু বসবি চল। আমার অনেক কথা বলার আছে তোকে। 
নিশার আকুতিটা সুমিত লক্ষ্য করল। আগের সেই তেজ, হুকুমের ভঙ্গী উধাও। বলল
--আমার ফ্ল্যাটে যাচ্ছি। যা বলার ওখানেই বলিস। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলাটা কি ঠিক হবে?
নিশাকে নিয়ে নিজের ভাড়ার ফ্ল্যাটটায় চলল সুমিত। ওখানে পৌঁছানর আগে আর কোন কথা ছিল না সুমিতের মুখে। নিশা ততক্ষণে আবার পুরনো ফর্মে ফিরে এসেছিল। বকবক করে যাচ্ছিল।
---কি হ্যান্ডু হয়েছিস রে তুই! ওখানে আর কেউ নেই তো? না কি কেউ ছিল, আমি আসব বলে ঘর ফাঁকা করে রেখেছিস? এখন নিজের জন্য একটা গাড়ি কিনতে পারলি না? এখানে কি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিস? নাকি কিনলি? 
সুমিত একবারই কথা বলল
--গেলেই সব বুঝতে পারবি। একটুখানি রাস্তা।

{link}

ফ্ল্যাটে এসে নিশাকে বসতে বলে রান্না ঘরে ঢুকে গেল সুমিত। নিজের হাতে দুটো প্লেটে পরোটা আর মাটন কষা নিয়ে নিশার কাছে এল। সুমিত জানে, নিশা এগুলো খেতে ভালবাসে। তাই ব্যবস্থা করে রেখেছিল। নিশা তখনও হাঁ করে সুমিতকে দেখে যাচ্ছে। এ কোন সুমিত! মেলাতে পারছে না। সুমিত সেন্টার টেবিলে প্লেট দুটো রেখে বলল
--সকালে নিশ্চয়ই কিছু খেয়ে বেরোস নি। আগে খেয়ে নে। তারপর কথা বলিস।
--তুই মনে রেখেছিস, আমার পছন্দের খাবারের কথা?
--এতে অবাক হওয়ার কি আছে? তুই আসবি বললি। খাওয়ার ব্যবস্থা তো করতেই হত। ভোলাকে বলে এই আইটেমগুলো করিয়ে রাখলাম।
--ভোলা কে?
--আমার রাঁধুনি, বাজার সরকার, ম্যানেজার সব কিছু। বলতে গেলে ও এই সংসারের ধারক।
নিশা খুব জোরে নিশ্বাস ফেলে বলল
--যাক বাবা বাঁচলাম।

সুমিত খাবারে হাত লাগিয়ে জিজ্ঞাসা করল
--বাঁচা মরার কি হল?
নিশা একমুখ হাসি ছড়িয়ে বলল
--মানে তোর ঘরে কোন মহিলার অস্তিত্ব নেই। কি আনন্দ! 
উত্তরে সুমিত যা বলল, সুমিতের কাছে এমন কথা কল্পনাও করেনি নিশা। খুব গম্ভীর ভাবে সুমিত বলল
--এতটা স্বার্থপর না হলেও পারতিস! সবসময় নিজের আনন্দের কথা চিন্তা না করে অন্যদের কথাও ভাবতে শেখ। কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নে। তারপর যা বলতে এসেছিস বলে ফেল।


সুমিতের কথাগুলো শোনার পর নিশা আর কিছু বলার মত অবস্থায় ছিল না। সুমিত এরকমভাবে রিয়্যাক্ট করবে বুঝতে পারেনি। তবে সুমিত তো ভুল কিছু বলে নি! সত্যিই কি সে নিজের আনন্দ বা স্বার্থ ছাড়া কারোর কথা ভেবেছে? ভেতর থেকে একটা অনুতাপের দহন অনুভব করছিল নিশা। এতদিন শুধু ভুলই করে গেছে। বাবা, মা, সুমিত কারোর জন্য চিন্তা করেনি। ভালবাসার মানুষগুলোকে চিনতে বড্ড দেরি করে ফেলেছে। আজও সুমিত তার পছন্দের কথা, ভাললাগার কথা মনে রেখেছে। অথচ সে কি জোর দিয়ে বলতে পারবে যে সে সুমিতের সবকিছু মনে রেখেছে! বলুক সুমিত, যা মনে আসুক বলুক। ওর অধিকার আছে বলার। আগের সুমিত হয়ত কিছু বলত না। এই সুমিতকে নিশাই তৈরি করেছে। তার কথা তো শুনতেই হবে। খেতে খেতেই ভেবে যাচ্ছিল নিশা। কখন খাওয়া শেষ হয়ে গেছে খেয়াল নেই। সুমিত ততক্ষণে খাওয়া শেষ করে হাত মুখ ধুয়ে চলে এসেছে। তার কথায় হুঁশ ফিরল।
--কি ভাবছিস এত? ভাবনাচিন্তা না করেই তো এতদিন কাটিয়ে দিলি। এখন এত না ভেবে আপাতত ওয়াশরুম থেকে ঘুরে এসে কি বলতে এসেছিস বল।

কিভাবে শুরু করবে ভেবে পাচ্ছিল না নিশা। ওয়াশরুম থেকে ঘুরে এসে সোফায় মাথা নীচু করে বসে রইল বেশ কিছুক্ষণ। সুমিত তার দিকে তাকিয়ে বসে আছে। অপেক্ষা করছে। তার মধ্যে কোন উত্তেজনা আছে কিনা নিশা বুঝতে পারছে না। নিজেকে একটু গুছিয়ে নিল। তারপর বলতে শুরু করল।

চলবে... 

{ads}

Literature Puja stories love story bengali love story Puja Sankhya Hariye Khojar pothe Episode 7 Nikhil Kumar Chakraborty Kolkata Tradition emotion love সাহিত্য পুজো সংখ্যা

Last Updated :

Related Article

Care and Cure 1
Care and Cure 1

Latest Article