header banner

হারিয়ে খোঁজার পথে(ধারাবাহিক)-নিখিল কুমার চক্রবর্তী {পর্ব-৮}

article banner

--মোহনকে যখন বিয়ে করব ঠিক করি তখন মোহনের প্রতি বলতে গেলে আমি এডিকটেড হয়ে ছিলাম। মোহনই প্রোপোজ করে। আমি হিপনোটাইজড হয়েই ছিলাম। এককথায় রাজী হয়ে যাই। তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কোনদিন কোন খোঁজ পর্যন্ত নিই নি। বাবা মাকে জানাতে তারা চমকে উঠেছিল। বাবা মোহনের বাড়ির খোঁজ খবর নিতে চেয়েছিল। তোর সাথে আলোচনা করতে বলেছিল। আমি ওদের কথা শুনিনি। বলেছিলাম, আমি মোহনকে চিনি, দ্যাটস এনাফ। তোকে শুধু জানিয়ে দিয়েছিলাম যে আমি মোহনকে বিয়ে করছি। শুনে তোর চমকে যাওয়াটা এখন খুব মনে পড়ে আমার। তুই কেন তখন বাধা দিলিনা আমাকে? 
--বাধা দিতে গেলে তুই শুনতিস না তখন। কোনদিন কারোর কথা শুনিসনি তুই। এটা একধরণের অহংকার। তোর মনে সবসময় প্লে করত, তুই যা করছিস সব ঠিক করছিস। তাছাড়া আমি তখন তোর সবকিছুই নিঃশব্দে মেনে নিতাম। প্রতিবাদ করাটাও যে জীবনধারণের একটা অঙ্গ তখন এই উপলব্ধিটা ছিল না।
কথাগুলো বলার সময় নিশাকে ভাল করে জরিপ করছিল সুমিত। লক্ষ্য করল নিশাকে বড্ড ক্লান্ত লাগছে। আসার পরেই দেখেছে মুখের সেই আগের ঔজ্জ্বল্য নেই। এটা সেই নিশা যেন নয়। তার ধ্বংসস্তূপ। নিশাও বারবার অবাক হয়ে সুমিতকে দেখছে। ভাবছে, এই সুমিতকে কি সে চেনে? এ তো যেন নতুন করে জন্ম নেওয়া সুমিত! 

{link}

সুমিত জানে নিশা ক্লান্ত হলে কফি খেতে ভালবাসে। বলল
--একটু বোস, আসছি আমি।
কিচেনে আবার ঢুকে গেল সুমিত। কিছুক্ষণ পরে দু হাতে দুটো কফিমগ নিয়ে হাজির হলে। নিশা আর কত অবাক হবে? বলেই ফেলল
--তুই কফি বানিয়ে আনলি? কি করে বুঝলি আমি এখন কফি খেতে চাইছিলাম?
--সব কিছু বলার দরকার হয় না। অনেক কিছু বুঝে নিতে হয়। তুই বুঝবি না। ওসব তোর ধাতে নেই। ছাড়। কি জন্যে এসেছিস বলে ফেল।
নিশাও তো বলতেই চাইছে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শুরু করল।
---মোহনকে চিনতে আমার ভুল হয়েছিল। দিনের বেলার সুন্দর মানুষটা যে রাত্রে একেবারে জানোয়ার হয়ে যেতে পারে ভাবিনি। রীতিমত অত্যাচার করত আমার ওপর। ওর ফিজিক্যাল নিডস এ রাজি না হলে প্রচণ্ড মারধর করত। প্রথম প্রথম দু একদিন সহ্য করে যাই। ভাবি ওসব সাময়িক। ভালবাসে যখন তখন নিশ্চয়ই বদলে যাবে। কিন্তু ও বদলায় না। উপরন্তু অত্যাচার বাড়তেই থাকে। আমি ভেবে পেতাম না, একটা লোকের এরকম দ্বৈত সত্ত্বা কিভাবে থাকতে পারে? একটা লোকের এত এবনরম্যাল ফিজিক্যাল নিডস কি করে থাকতে পারে? এদিকে লজ্জায় কাউকে জানাতেও পারছি না! বাবা মাকেও না। শেষে উপায়ন্তর না দেখে সব জানিয়ে থানায় জানাই। এফ আই আর করি। পুলিশ ওকে এরেস্ট করে। কিছুদিন পরে জামিনে ফিরে এসে আবার ও আমার সাথে থাকতে চায়। আমি ওর কথায় আর ভুলি না। ততদিনে আমি বুঝে গেছি যে মোহন একটা স্যাডিস্ট। জেনে গেছি, আমার আগে ও আরও একজনের সাথে লিভ ইন করত। আমি জানতে পারিনি। বলা ভাল, জানার চেষ্টা করিনি। আমার শরীর না পেয়ে ও পাগল হয়ে গেল। ভয় দেখাতে শুরু করল। রেপ করিয়ে দেবে, খুন করিয়ে দেবে এইসব বলতে লাগল। অথচ কলেজের সময়ে এত অমায়িক ব্যবহার যে কি বলব! নাম্বার ওয়ান ডিবচ একটা। আমিও একদিন বলে দিলাম যে আমার কাছে এলে আমিই ওকে খুন করে দোব। মেজাজ দেখিয়ে একদিন একটা চাকু নিয়ে তেড়েও গেলাম। মোহনকে বোঝার পর থেকে চাকুটা আমি সবসময় কাছে রাখতাম। যখন বুঝল ও আমাকে আর পাবে না তখন ও নিজেই মিউচুয়াল ডিভোর্সের প্রস্তাব দেয়। আমার কাছে খবর ছিল ও তখন অন্য আর একটা শরীরের ব্যবস্থা করে ফেলেছে। আমি তো তাই চাইছিলাম। রাজি হয়ে যাই। কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো ডিভোর্স পেয়ে যাব।

{link}

এতগুলো কথা একটানা বলার পর নিশা একটু থামল। বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল। সুমিত সোফার আর এক প্রান্তে বসে চুপ করে শুনে যাচ্ছিল। নিশা আবার শুরু করল
--জেল থেকে আসার পর কলেজ অথরিটি ওকে যখন ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলল, তখন আমার মতামত চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম, এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। এর সাথে যদি কলেজে পড়ানোর সম্পর্ক থাকে তাহলে কলেজ অথরিটি ডিসিশন নেবে। আমার কিছু বলার নেই। কলেজ থেকে একটা মিটিং ডাকে। অথরিটির সামনে আমরা দুজনেই হাজির হই। আমি পরিষ্কার জানিয়ে দিই, কলেজের স্বার্থে, ছাত্র ছাত্রীদের স্বার্থে যা ডিসিশন নেওয়া হবে আমি তাতেই রাজী। সবাইকে অবাক করে দিয়ে মোহন নিজেই চাকরি ছেড়ে দিতে চায়। এক কথায় সবাই মেনে নেয়। পরে জেনে ছিলাম এর মধ্যে কলেজ অথরিটি ইনভেস্টিগেট করে মোহন আর আমার সম্বন্ধে সব জেনে নিয়েছে। এর পরে ও আমার কাছে মিউচুয়াল ডিভোর্সের কথা তোলে। কেস ফাইল করা হয়। কলেজ ছেড়ে ও শহরেই থাকতে আরম্ভ করে। শুনেছি অনেক টিউশন করে এখন। আমি ঠিক করেছি চাকরি ছেড়ে দোব। কলেজ অথরিটিকে জানিয়েছি। ওরা ছাড়তে চাইছে না। কিন্তু আমি নিরুপায়। ওখানে আমি আর থাকতে পারছিনা। তাই তোর সাথে  আলোচনা করতে এসেছি। তাছাড়া যে কাজ আমি করেছি তার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করতে চাইলে তোর কাছেই আগে আসাটা জরুরী বলে মনে হয়েছিল আমার।
নিশা থামল। সুমিত বলল
--ঘটনার যা বিবরণ তুই দিলি তা আমার অজানা নয়। সবই জানি। তুই কি শুধু এইসব বলার জন্যেই এসেছিস, নাকি অন্য আরও কিছু বলার আছে?

{ads}

Puja stories Durga Puja literature love story puja sankhya Kolkata Hariye Khojar Pothe episode 8 Tradition Culture West Bengal India পুজো সংখ্যা হারিয়ে খোঁজার পথে

Last Updated :

Related Article

Care and Cure 1
Care and Cure 1

Latest Article