একসময় দেবীর আশির্বাদে মুক্তি মিলেছিল মহামারীর প্রকোপ থেকে। তাই আজও রীতি মেনে দেবী দুর্গার সঙ্গে সঙ্গে এ বাড়িতে পুজো হয় মহামারীরও। তিনশো বছরেরও বেশি সময় আগে যখন পুজো শুরু হয়, তখনও পুজো হত মহামারীর। প্রজাদের কল্যাণে প্রতিদিন পোড়ানো হয় দেড় কুইন্টাল খই। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের ঘোলাই গ্রাম পঞ্চায়েতের আঙ্গুয়া গ্রামের দাস মহাপাত্র বাড়ির এটাই রীতি। এখনও এবাড়িতে পুজোর দিনগুলিতে গাওয়া হয় চণ্ডীমঙ্গল, ভারতগান।
তিনশো বছর আগেও মহামারী হত। তখন চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল বেশ অনুন্নত। রোগের প্রকোপে উজায় হয়ে যেত গাঁয়ের পর গাঁ। তাই প্রজাদের মঙ্গলের জন্য মহামারীর পুজো শুরু হয় জমিদার দাস মহাপাত্রদের বাড়িতে। এবারও করোনা অতিমারীর হাত থেকে বিশ্বকে মুক্ত করতে প্রার্থনা করবেন এই পরিবারের সদস্যরা।
{link}
কটকের খোরদার থেকে এ রাজ্যের মুর্শিদাবাদের উদ্দেশ্যে আসছিলেন জনৈক বিরিঞ্চি মোহান্তি। দাঁতনের ঘোলাইয়ের কাছে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন তিনি। স্থানীয় এক ব্রাহ্মণ জমিদার তাঁকে উদ্ধার করেন। সুস্থ হয়ে জমিদারের সেরেস্তায় কাজ করতে শুরু করেন বিরিঞ্চি।
{link}
বয়সকালে কাশী যাবেন মনস্থ করেন জমিদার। জমিদারি লিখে দিতে চান বিরিঞ্চিকে। বিশ্বস্ত কর্মচারী বিরিঞ্চি জমিদারকে প্রস্তাব দেন অর্ধেক সম্পত্তি জমিদারের মেয়েকে দিয়ে বাকিটা তাঁর নামে লিখে দেওয়ার। সেই মতো অর্ধেক জমিদারি নিয়ে ঘোলাইয়ের পলাশিয়ায় থেকে যান বিরিঞ্চি।
{ads}
বিরিঞ্চির দুই ছেলের মধ্যে ভাগ হয় জমিদার। ছোট ছেলের জমিদারিতেই শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। এই ভাগের উত্তরসূরিদের মধ্যে রূপনারায়ণ দাস মহাপাত্র দুর্গাপুজো শুরু করেন। এর কয়েক পুরুষ আগে মোহান্তিরা ইংরেজদের কাছ থেকে উপাধি পেয়ে দাস মহাপাত্র হয়ে গিয়েছেন। এঁদের কেউ কেউ রাজার দেওয়া উপাধি চৌধুরীও ব্যবহার করেন।
প্রতিপদ থেকে পুজো শুরু হয় এ বাড়িতে। চলে দশমী পর্যন্ত। প্রতিদিনই পুজো হয় মহামারীর। পোড়ানো হয় খই। দেশবাসীর মঙ্গলের জন্য। এবারেও সেই নীতি মেনেই হবে পুজো। দেবীর আশির্বাদে করোনার প্রকোপ থেকে মুক্তি মিলুক পৃথিবীবাসীর এই প্রার্থনাই মায়ের কাছে করছেন সকলে।
{ads}