header banner

হারিয়ে খোঁজার পথে(ধারাবাহিক)- নিখিল কুমার চক্রবর্তী{পর্ব-১০}

article banner

ঘরে ঢুকে নিশাকে দেখে প্রাথমিকভাবে একটু অবাক হলেও পর মুহূর্তেই স্বাভাবিক হয়ে গেলেন অনিমেষ দত্ত। একমুখ হাসি ছড়িয়ে বললেন
--নমস্কার ম্যাডাম। আপনিই তাহলে সুমিতের হাসপাতালে না যাওয়ার কারণ। ওদিকে হাসপাতালে হই হই হচ্ছে। ডাক্তার গায়েব!
নিশা কিছু বলল না। শুধু হাত জোর করে নমস্কার করল। সুমিত বলল
--অনিমেষদা বসুন। আমি আর এক রাউন্ড কফি নিয়ে আসি। নিশা ক্লান্ত থাকলে বারেবারে কফি খায়। 
সুমিত কিচেনে ঢুকে গেল। অনিমেষ দত্ত নিশাকে বললেন
--কিছু একটা রিলেশন যে আছে তা সুমিতের আগ্রহ দেখে বুঝেছিলাম। কিন্তু একেবারে আরামবাগে চলে আসার মতো রিলেশন বুঝতে পারিনি। সুমিত দেখলাম আপনার অভ্যাস সম্বন্ধেও ওয়াকিবহাল। তা, আপনি কেমন আছেন এখন?
--মোটামুটি আছি। 
--ভাল থাকতেই হবে। অতীতকে আঁকড়ে থাকলে ভাল থাকা যায় না ম্যাডাম। অতীত থেকে শিক্ষা নিলে তবেই ভাল থাকা যায়। আপনি চাকরি ছেড়ে দিলে জায়গাটা থেকে দূরে থাকতে পারবেন, কিন্তু নিজের থেকে দূরে থাকবেন কি করে? 
নিশা এবারে সরাসরি অনিমেষ দত্তর মুখের দিকে তাকাল। খুব ধীরে ধীরে বলল
--যা ঘটেছে আপনি সবই জানেন। এরপরেও কি ছাত্রছাত্রীরা আমাকে সম্মান দিতে পারবে?
--সম্মান কেউ কাউকে দেয় না ম্যাডাম। নিজেকে অর্জন করতে হয়। কলেজে আপনার সুনাম ভাল পড়ানোর জন্য। ছাত্রছাত্রীরা আপনাকে ভালবাসে আপনার ব্যবহারের জন্য। আপনার জীবনে কি ঘটছে সেটা সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। জীবন আর জীবিকা এক জিনিষ নয় ম্যাডাম।

{link}

একটা ট্রেতে তিনটে কফিমগ নিয়ে সুমিত এসে বসল। ওদেরকে একটা করে কফিমগ হাতে দিয়ে নিজেও একটা নিয়ে নিশার পাশে বড় সোফা সেটটায় বসল। অনিমেষ দত্ত ততক্ষণে সিঙ্গল সেটটায় বসে পড়েছেন। কফিতে চুমুক দিয়ে সুমিত বলল
--অনিমেষদা, আপনাকে বলতে পারিনি যে নিশাকে আমি চিনি। একপাড়াতে আমরা বড় হয়েছি, একসাথে পড়াশোনা করেছি। ও একচুয়ালি একেবারে ছোট্টবেলা থেকে আমার সাথে ছিল। পাস্ট টেন্স ইউজ কেন করছি তা আপনি ভাল করেই জানেন। তবে ওর কাছে আমি ঋণী। ও মোহনকে বিয়ে করে আমাকে ছেড়ে চলে না গেলে আজকের সুমিতের জন্ম হত না। ওর কথা অনেকবার আপনাকে বলার ইচ্ছে হয়েছে, কিন্তু হাসির খোরাক হবার ভয়ে বলিনি।
সুমিতকে থামিয়ে অনিমেষ দত্ত বললেন
--এতদিনে দাদাকে এই চিনলে ভায়া? সবার জীবনেই কিছু না কিছু দুর্বল জায়গা থাকে। আমি মনে করি সেসব কথা সবাইকে না জানানই ভাল। সবাই সমানভাবে নিতে পারে না। তবে নির্ভরযোগ্য কারোর সাথে শেয়ার করতে পারলে ভাল হয়। জানলাম, তুমি আমাকে নির্ভরযোগ্য ভাবতে পার নি।
সুমিত উঠে অনিমেষ দত্তর কাছে গিয়ে তার হাত দুটো ধরে বলল
--আপনি এরকম বললে আমার অপরাধের শেষ থাকবে না। বুঝতে পারছি, আপনাকে না বলে ভুল করেছি। প্লিজ ক্ষমা করে দিন।
অনিমেষ দত্ত সুমিতকে ধরে নিয়ে এসে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বললেন
--ওসব নিয়ে মন খারাপ করে লাভ নেই। যা বুঝলাম নিশা ম্যাডাম তোমার ছোটবেলার সঙ্গী। তোমাকে ছেড়ে মোহনকে বিয়ে করে চলে যাওয়াতে তোমার কষ্ট হয়েছিল। তুমি নিজের খোলনলচে বদলে ফেলেছ। মানে, তুমি নিশাকে খুব ভালোবাস। তা, ওকে কোনদিন বলেছ ভায়া যে, তুমি ওকে ভালবাসো?
--সেটাও কি মুখে বলতে হয় দাদা? ও বুঝতে পারে নি কেন?
--বলতে হয় ভায়া। অনেক কথা যেমন বলতে নেই, তেমনি অনেক কথা সময়ে বলতে হয়। ভালবাসার লোককেও বলতে হয় "আমি তোমাকে ভালবাসি।" "শক্তি" বলে একটা হিন্দী মুভি থেকে আমি এটা শিখেছিলাম। শেষ দৃশ্যে পুলিশ বাবা স্মাগলার ছেলেকে গুলি করার পর ছুটে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিয়ে বলছে,"তুই আমাকে ছেড়ে যাস না। তোকে ছেড়ে আমি বাঁচব না।" উত্তরে ছেলে বলছে, "বাবা, এতদিন একথা তুমি বল নি কেন? তাহলে তো আমি স্মাগলার হতাম না।" ছেলে ভাবত বাবা তাকে ভালবাসে না। তাই বলছি ভায়া, শুধু ম্যাডামকে দোষ দিয়ে তো লাভ নেই। দোষ তোমারও আছে। ভাষায় ভালবাসার প্রকাশটা খুব জরুরী।

{ads}

নিশা দুজনের কথোপকথন শুনে যাচ্ছে। অনিমেষ দত্তকে নতুন রূপে দেখছে এখানে। কলেজে এডমিনিস্ট্রেটর হিসাবে তার রূপ দেখেছে। এখানে তার রূপ এক অভিভাবকের। সত্যিই সে যেন সুমিতের দাদা। সে যদি এরকম এক দাদা পেত তাহলে হয়ত তার জীবনটা এভাবে তছনছ হত না। একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস হালকাভাবে নিশার বুকের ভেতর থেকে বেরিয়ে এল। অনিমেষ দত্ত যাই বলুন না কেন সুমিতের থেকে তার অপরাধ অনেক বেশি। সুমিতের ডেডিকেশনে তার প্রতি ভালবাসা যথেষ্টই প্রকট ছিল। সেই বুঝতে পারেনি। বোধহয় এত ভালবাসার যোগ্য সে নয়। নিজের দোষে সে নিজের জীবন শুধু নষ্ট করেনি সুমিতের জীবনটাও শুকনো করে দিয়েছে। নিজের অজান্তেই তার দুচোখ ছাপিয়ে জলের ধারা নেমে এল।

{link}
অনিমেষ দত্ত পোড় খাওয়া লোক। জীবনে অনেক বাঁক, অনেক তরঙ্গের মুখোমুখি হয়েছেন। নিজের জীবনে এমন না হলেও অনেকটা একই রকম অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন। কলেজ জীবনের প্রেম সংসারে বাস্তবায়িত হয়েছিল।  ডাক্তারি পড়তে কলকাতায় গিয়েছিলেন অনিমেষ দত্ত। উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে হলেও পড়াশোনায় কোন অবহেলা ছিল না তাঁর। কলকাতার কলেজে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে হস্টেলে না থেকে মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতেন। ওঁর যখন ফাইনাল ইয়ার তখন রুনিরা ঐ বিল্ডিঙের অন্য ফ্ল্যাটে আসে। রুনিরও তখন গ্র্যাজুয়েশনের ফাইনাল ইয়ার। ওরা আগে দমদমে থাকত। ওর বাবা মা দুজনেই করপোরেট সেক্টরের এমপ্লয়ি। ওদের পুরো পরিবারটাই অন্যরকম জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিল। যে যাপনে আবার অনিমেষ দত্তরা অভ্যস্ত নয়। দমদমের পরিবেশ বসবাসের উপযোগী না হওয়ায় ওরা নাকি এখানে উঠে আসে। তখন ওসব নিয়ে কিছু ভাবেই নি অনিমেষ দত্ত। এখন মনে হয় ভাবা উচিত ছিল। তবে মফস্বলের ছেলেকে কি কারণে কলকাতার রুনি মুখার্জী ভালবেসেছিল তা আজও অনিমেষ দত্তর কাছে অজানা। আদৌ ভালবেসেছিল কি? সেটাও তো অজানা এখনও। ভালবাসলে বিয়ের ছ মাসের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়ে গেল কেন? 

{ads}

news Puja Durga Puja stories love stories bengali love story story love Bengali news episode-10 West Bengal India গল্প বাংলা গল্প বাংলা প্রেমের গল্প পুজো সংখ্যা ১৪২৮

Last Updated :