পুজোর যে আনন্দ তাতে অনেকটাই প্রভাব বিস্তার করেছে করোনার মহামারী। মনের মধ্যে কাজ করছে আতঙ্ক, ভয় যে ছবিটা দেখা গিয়েছিল শেষ বছরেই। অতিমারী করোনা কেড়েছিল পুজোর জৌলুস। কিন্তু এবার পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। তাই এবারও ঘটা করে পুজো হবে তমলুকের নন্দকুমারের বনেদি বাড়িতে। বছর দুয়েক আগেও এ বাড়িতে পাত পড়ত কয়েক হাজার ভক্তের। করোনার জন্য তা বন্ধ থাকছে এবছরও। যদিও অন্নভোগই নিবেদন করা হবে দেবীকে।
{link}
পূর্ব মেদিনীপুরের বর্ধিষ্ণু অঞ্চল তমলুক। স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে এই জনপদের নাম। এই তমলুকেরই ব্যবত্তারহাট এলাকার ভট্টাচার্য ও চক্রবর্তী পরিবার গত চারশো বছর ধরে নিষ্ঠা সহকারে পুজো করে আসছেন দেবী দুর্গার। বছরের পর বছর সুচারুভাবে পুজো হয়ে এলেও, করোনা অতিমারীর কারণে তা যেন ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছে এই দু বছর।
তমলুকের রাজা তাম্বধ্বজের ব্যবস্থাপক ছিলেন এখানকার ভট্টাচার্য ও চক্রবর্তী পরিবারের পূর্বপুরুষরা। সেই থেকে এলাকার নাম হয় ব্যবত্তারহাট। এই ব্যবত্তা পরিবারের পূর্ব পুরুষ ছিলেন সার্থক রাম। একবার সার্থক রামের মা দুর্গাপুজোর অঞ্জলি দিতে গিয়েছিলেন পাশের একটি গ্রামে। সেখানে তাঁকে অপমান করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। মায়ের অপমান সহ্য করতে না পেরে বাড়িতেই দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন তিনি। সেই থেকেই নিরবচ্ছিন্নভাবে দেবীর আরাধনা হয়ে আসছে এ বাড়িতে। কালক্রমে সেই পুজোই হয়ে আসছে দুই পরিবারের পারিবারিক পুজো। সুপ্রাচীন প্রথা মেনে আজও দেবীকে নিবেদন করা হয় নিরামিষ অন্নভোগ।
{link}
এ বাড়িতে দেবীকে নিজের হাতে তৈরি বড়ি দিয়ে ভোগ দেন মহিলারা। ষষ্ঠী এবং সপ্তমীতে দেবীকে নিবেদন করা হয় এক মণ ছ সের চালের ভোগ। সঙ্গে থাকে নানা পদ। অষ্টমীতে ভোগের চালের পরিমাণ বেড়ে হয় এক মণ ৮ সের চাল। আর নবমীতে চালের পরিমাণ হয় এক মণ ন সের। রীতি মনে এখনও হয় সন্ধিপুজো। সেখানেও দেবীকে নিবেদন করা হয় খিঁচুড়ি ভোগ। দশমীতে হয় দধিকর্মা। সিঁদুর খেলার পর বিসর্জন হয় দেবীর। এ বাড়িতে হাজার খানেক সলতে পোড়ানো হয়।
জমিদার আমলের দুর্গামণ্ডপ ভেঙে তৈরি হয়েছে নতুন মণ্ডপ। এতদিন দেবীকে ভোগ নিবেদন করে প্রসাদ খাওয়ানো হত দর্শানর্থীদের। করোনার কারণে গত বছর থেকে তা বন্ধ। অন্য সমস্ত পুজোগুলির মতো বদল আনা হয়েছে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার রীতিতেও। আগে ফুল-বেলপাতা দিয়ে অঞ্জলি দেওয়া গেলেও, অতিমারী পরিস্থিতিতে হয়েছে শুধুই করজোড়ে প্রার্থনা। কিন্তু যা কমেনি তা হল পুজোর এই দিনগুলিতে ঘরে আসা মায়ের জন্য ভক্তি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। অপেক্ষা আর মাত্র কয়েকটা দিনের… তারপরেই আবার বছর ঘুরে মা আসবেন তমলুকের নন্দকুমারের বাড়িতে।
{ads}