কেউ যদি প্রশ্ন করে বাংলা ও বাঙালির সর্ববৃহৎ উৎসব কোনটি, তাহলে এককথায় উত্তর আসবে একটিই, দুর্গাপুজো। দুর্গাপুজো মানের অনেক আনন্দ ভালোলাগা ও আনন্দের সংমিশ্রণ। রাত জেগে ঠাকুর দেখা বড়ো বড়ো প্যান্ডেল হপিং, থিম পুজোর রমরমা। কিন্তু এসবের মাঝেই আমরা বাংলার একটা পুরোনো সংস্কৃতিকে প্রায় ভুলতে বসেছি। সেটা বাংলার সমস্ত ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক সমস্ত বহুকাল থেকে চলে আসতে থাকা বনোদি ও রাজবাড়ির পুজোগুলি। এহেন এক পুজোরই আশ্চর্য উপাখ্যান আজ রইল শেফিল্ড টাইমসের রাজবাড়ির পুজোর আরও একটি নতুন পর্বে।
উল্লেখযোগ্যভাবে এ বাড়িতে দেবী দুর্গার সঙ্গে পুজো পান আরও একুশ দেবতা। এঁরা প্রত্যেকেই হাজির জমিদার বাড়িতে। সেজন্য মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের জমিদার বাড়ির পুজো ‘বাইশ পুতুলের পুজো’ নামে খ্যাত।
ইদানিং ধুলিয়ানে দুর্গাপুজো হলেও, পুজোর সূচনা হয়েছিল মালদহের দেওনাপুরে। এ পরিবারের প্রয়াত সদস্য রাঘবেন্দ্র রায় ছিলেন জমিদার। গঙ্গার ভাঙন ও বন্যার জেরে দুর্ভোগ পোহাতে হত পরিবারের সদস্যদের। বাধ্য হয়ে পাততাড়ি গুটিয়ে ১৮২৫ সালে ধুলিয়ানে চলে আসেন জমিদার পরিবার। নির্মাণ করা হয় দালানকোঠা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সঙ্গে সপরিবারে আসেন দেবী দুর্গাও। সেই থেকে পুজো হচ্ছে ধুলিয়ানে।
পুজো শুরু হয় কৃষ্ণা নবমীতে। বিসর্জন হয় দশমীতে। অন্যত্র যেমন সন্তান-সন্ততি নিয়ে পুজো পান দেবী দুর্গা, এখানেও তেমনি। তবে এ বাড়িতে পুজো পান আরও ষোলোটি দেবদেবীর মূর্তি। এঁদের মধ্যে সবার ওপরে রয়েছেন মহাদেব। তাঁর দুপাশে থাকেন নন্দী ও ভৃঙ্গি। তাঁরও ওপরে থাকেন গঙ্গা। দেবীর বামদিকে থাকেন বিজয়া এবং নরসিংহ। দেবীর সঙ্গেই থাকেন রাম, লক্ষ্ণণ। থাকেন বিষবাহন। আরও কিছু প্রতিমাও থাকে। প্রাচীন রীতি মেনে প্রতিমার কাজ শুরু হয় রথের দিন।
পুজো হয় সূচনা লগ্নের সময়কার নিয়ম মেনে। বিসর্জনের দিন ঢাক বাজান পুরুষেরা। সিঁদুর খেলায় মাতেন মহিলারা। কাঁধে করে দেবী মূর্তি নিয়ে গিয়ে আজও বিসর্জন দেওয়া হয় গঙ্গায়। প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে এখনও হয় বাইচ প্রতিযোগিতার। এক সময় বাইশ পুতুলের পুজো দেখতে আসতেন দূর-দুরান্তের মানুষ। এখন আর আসেন না। তবে এলাকাবাসী একবার হলেও দর্শন করে যান জমিদার বাড়ির মা-কে। দেবী মা-ও প্রত্যক্ষ করেন জমিদারদের ‘প্রজা’দের, হয়তবা তার আশির্বাদও লাভ করেন কেউ কেউ।
সারা বাংলা জুড়ে এহেন অসংখ্য অবাক করা বনোদি ও রাজবাড়ির পুজোর উপাখ্যান রয়েছে। যার বেশ কয়েকটি বা বলা চলে অধিকাংশই জানা এবং হয়ত বেশ কিছু অজানাও রয়েছে। মায়ের আসতে আর মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা....
{ads}