শেফিল্ড টাইমস ডিজিটাল ডেস্ক: সুন্দরবন অঞ্চলে একটা প্রচলিত প্রবাদ হলো -' রাখে বনবিবি তো মারে কে?' এই বিশ্বাসের উপর ভরসা করেই বহু বছর ধরে কামারগতি গ্রামে চালু হয়েছিল বনবিবির পুজো। বিদ্যাধরী নদীর তীরবর্তী এই অঞ্চলে একদিন ছিল সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজে পরিপূর্ণ বনভূমি। বাঘ, হরিণ-সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর অবাধ আনাগোনা ছিল চারদিকে। তখন এলাকার মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল কাঠ, মধু সংগ্রহ ও মাছ ধরা। সেই বিপদসংকুল জঙ্গলজীবনের রক্ষাকর্ত্রী হিসেবেই লোকজন বিশ্বাস করতেন বনদেবী বনবিবিকে। গড়ে উঠেছে মন্দির। তবে মন্দিরটির সঠিক বয়স বা নির্মাণকাল সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য আজও কারও জানা নেই। জঙ্গলে যাওয়ার আগে ভক্তরা বনবিবির কাছে পুজো দিয়ে যেতেন, সেই রীতিই আজও অটুট রেখে কামারগাতি গ্রামের মানুষ প্রতি বছর আয়োজন করেন বনবিবির পুজো। দীর্ঘদিনের এই ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে একটি বড় মেলাও।
বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পাঁচ দিনব্যাপী এই বনবিবি মেলা বসে কামারগাতি গ্রামে। বয়োজ্যেষ্ঠরাও বলতে পারেন না, ঠিক কবে থেকে এই মেলার সূত্রপাত। তবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এটি এখন গ্রামবাসীর অন্যতম সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব। পাঁচ দিনের এই মেলা উপলক্ষ্যে ভিড় জমে দূরদূরান্ত থেকে। আলোকসজ্জা, দোকানপাট, খেলনা, নাগরদোলা, সব মিলিয়ে উৎসবের রঙে রাঙিয়ে ওঠে গোটা এলাকা। মেলার অন্যতম আকর্ষণ ‘হাজত’—মেলার প্রথম তিন দিন ভক্তদের মধ্যে বিশেষ প্রসাদ বিতরণের প্রথা। হাজত নিতে মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়, যা স্থানীয়দের কাছে ধর্মীয় ভক্তি ও আনন্দের বিশেষ অংশ। সব মিলিয়ে পুজো ও মেলাকে কেন্দ্র করে আনন্দে মেতে ওঠে কামারগাতি গ্রামের মানুষ। প্রাচীন বনজীবনের স্মৃতি, বিশ্বাস, ঐতিহ্য আর উৎসবমুখর পরিবেশ, সবকিছু মিলিয়ে আজও অটুট রয়েছে বনবিবির প্রতি এ অঞ্চলের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভক্তি।