পরে একটা কাজ করল সুমিত। অবসর সময়ে আশে পাশের গ্রামের গরীব মানুষগুলোর জন্য একটা এন জি ও তে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করল। ও চিকিৎসা করে আর এন জি ও থেকে ওষুধের ব্যবস্থা করে দেয়। অদ্ভূতরকম এক ভাললাগার আনন্দ খুঁজে পায় সুমিত এই কাজটায়। নিশার কথা সত্যি। গ্রামের মানুষগুলো কৃতজ্ঞতায় কত কি যে এনে দেয়! আলু, পেঁয়াজ, শাক, সব্জী, হাঁস মুরগীর ডিম আরও কত কি! সুমিত বাধা দেয় না। এই ভালবাসার দানে সে আপ্লুত হয়ে যায়। অনেকে সুমিতের কাছে এসে নবজাতক বাচ্চার নাম রেখে দেওয়ার আব্দারও করে। ভাল লাগে সুমিতের এইসব। কলকাতায় থাকলে এই আনন্দের স্বাদ সে হয়ত কোনদিন পেতই না। এরই মধ্যে নিজেকে পাল্টানর আর একটা অধ্যায়ে ঢুকে পড়েছে সে। মর্নিং ওয়াক তো আছেই, একটা জিমেও ভর্তি হয়েছে। গোলগাল চেহারার ছাপ তাকে মুছতেই হবে।
আরামবাগে সুমিতের দিনগুলো আলাদা এক ছন্দে কেটে যাচ্ছিল। কলকাতায় গেলেও একদিনের বেশি থাকেনা। ফেরার জন্য ছটফট করে। মাস কয়েক পরে যখন প্রথম কলকাতায় গিয়েছিল নতুন চেহারার সুমিতকে দেখে তখন সবাই অবাক। সেই গাবলগুবলু চেহারা উধাও। বাবা মাও বিশ্বাস করতে পারেনি প্রথমে। এ এক নতুন সুমিত। চেহারায় চরিত্রে সবেতেই। বাবা মা নিঃসন্দেহে খুশী। কিছুদিন পরে তারা আরামবাগেও এসে দেখে গেছে ছেলের দিনযাপন। ভোলাকে সঙ্গে নিয়ে বাজার করে এনে বাবা মাকে রেঁধে খাইয়েছে সুমিত। সামনে আনন্দ দেখালেও আড়ালে চোখের জল ফেলেছে সুমিতের মা। বাবা গুম হয়ে থেকেছেন। সন্ধ্যে বেলায় এন জি ও থেকে ফিরে আসার পর সুমিত দেখেছে অনিমেষদা বাবা মার সাথে চুটিয়ে আড্ডা মারছে।
--আচ্ছা মাসিমা, সত্যি বলুন তো, এত সুন্দর চেহারা যার তার কোনো লাভার থাকবে না?
মা সুমিতের মুখের দিকে তাকিয়েছে। সুমিত ইশারায় কিছু বলতে বারণ করেছে। মা বলেছে
--দেখ, তোমরা যদি কিছু ব্যবস্থা করতে পার।
সুমিত খুব স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিয়েছে
--কাউকে ব্যবস্থা করতে হবে না মা। নিজের ব্যবস্থা নিজে করে নেওয়ার মত যোগ্যতা আমার আছে।
মা গম্ভীর হয়ে বলেছে
--হুম, সে তো দেখতেই পাচ্ছি। আমার ছেলেটা এতদিনে বড় হয়েছে।
অনিমেষ দত্ত হৈ হৈ করে বলেছে
--তাহলে আর ভাবনা কি মাসীমা! আমিও দেখি যোগ্যতার বহর কতটা!
{link}
আরামবাগের জীবনে যখন সুমিত মানিয়ে নিয়েছে তখনই একদিন ফোনটা এল। একটা আননোন নম্বর থেকে। তখন সুমিত রাউন্ডে। কোন পেশেন্টের বাড়ির ফোন ভেবে ধরতেই ও দিক থেকে তোড়ে ভেসে এলো কিছু কথা।
---আমাকে জ্বালানর জন্যই তুই এত দূরে চলে গেছিস, না? কি ভেবেছিস, যোগাযোগ রাখবি না? আরামবাগে চলে গেলে ভেবেছিস আমি তোর খোঁজ পাব না? তোর সাথে যোগাযোগ করতে পারব না?
সুমিত আন্দাজ করতে পারছিল ফোনটা নিশার। কিন্তু তবুও বলল
--কে কথা বলছেন জানতে পারি?
--সেকি রে? আমার নম্বরটা তুই ডিলিট করে দিয়েছিস নাকি? আমি নিশা বলছি।
সুমিত সত্যিই নিশার নম্বরটা ডিলিট করে দিয়েছিল। আরামবাগ আসার সময়। এখানে ওর নতুন জীবন। নতুন করেই শুরু করতে চেয়েছিল সব কিছু। তাছাড়া কি হবে নিশার নম্বর রেখে? ও তো তখন অন্য জীবনে ঢুকে গেছে। মায়া বাড়িয়ে কি লাভ?
খুব শক্তভাবে জবাব দিল সুমিত
--না, নম্বরটা মোবাইলে নেই।
---আমি জানি, তুই আমার ওপর রাগ করে আছিস। তাই বলে নম্বরটাও মুছে দিলি? পারলি তুই?
--আবার ভুল হচ্ছে। আমার কোন রাগ নেই। নম্বরটার প্রয়োজন ছিলনা তাই মুছে দিয়েছি। ফোন করেছিস কেন বল?
--আমি কলকাতায় এসেছি। তুই চলে আয়।
--আমার পক্ষে যাওয়া এখন সম্ভব নয়। এখানে অনেক কাজ।
---আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমি তোর মাথা ফাটিয়ে দোব। নাহলে নিজের মাথা ফাটাব। আমাকে তুই ভাল করেই জানিস। তোর কত কাজ আমার জানতে বাকি নেই। চলে আয়।
--আমার যা বলার বলে দিয়েছি। আর কিছু বলবি?
নিশা অবাক। এটা সত্যিই সুমিত তো? নিশার ডাক আজ পর্যন্ত কবে এড়িয়েছে সুমিত? এত দৃঢ়ভাবে সুমিতকে কোনদিন কথা বলতে দেখেনি নিশা। আর একবার অনুরোধ করার চেষ্টা করল
--আয় না রে একবার। কিছু কথা ছিল। সত্যি খুব জরুরী রে!
সুমিতের মত পাল্টাল না। বলল
--সম্ভব নয়। আর যদি কিছু বলার না থাকে ফোন রাখতে পারিস। আমি রাউন্ডে ব্যস্ত আছি।
হতভম্ব নিশা কিছু বলতে পারল না। সুমিত ফোন কেটে দিল।
নিশা কল্পনা করতে পারছে না, এমন ঘটনা ঘটতে পারে। সুমিত এত কঠিন কি করে হয়ে গেল? গলার স্বরে আগের সেই মোলায়েম ভাবটাই নেই। নিশার মুখের ওপর ফোনটা কেটে দিল। বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল। সত্যিই তার সুমিতকে অনেক কিছু বলার আছে। জীবনের যে সন্ধিক্ষণে সে এখন উপস্থিত হয়েছে সেখানে সুমিত ছাড়া আর কার ওপরে সে ভরসা করবে? আবার একবার সুমিতকে ফোনে ধরার চেষ্টা করলো নিশা। অনেকক্ষণ ধরে রিং হয়ে গেল। সুমিত ফোন ধরল না। কিছুক্ষণ হতাশ হয়ে বসে থাকার পরে আবার নিজের মূর্তিতে ফিরে এল নিশা। মেবাইলটা হাতে তুলে নিল। ফটাফট হোয়াটস অ্যাপে একটা মেসেজ টাইপ করল।
"আরামবাগে কি কোন সুন্দরী পেয়েছিস যে আমাকে পাত্তা দিচ্ছিস না? আমি কি করতে পারি তোর থেকে ভাল আর কেউ জানে না। এখন আমার তোকে খুব দরকার। যে ভাবেই হোক, তোর সাথে কথা বলতে হবে। তোর সাজেশন চাই। এবং তোকে সময় দিতেই হবে।"
চলবে...
{ads}