জানা অজনা কতোই না রাজবাড়ির ইতিহাস আজও লুকিয়ে রয়েছে বঙ্গ জুড়ে। তার এক একটি এতোটাই চমকপ্রদ যে অবাক না হয়ে উপায় নেই। বাংলার এহেন এক ঐতিহাসিক ও সুপ্রাচীন রাজবাড়ির কথা আজ। রাজবাড়ির পুজোয় হয় দেবী দুর্গার নাম সংকীর্তন। সংকীর্তন করেন জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন। সাড়ে তিনশো বছর ধরে এটাই চলে আসছে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয়। রাজবাড়ির মন্দিরে দুর্গা নন, অধিষ্ঠিত রয়েছেন মা চণ্ডী। পুজোর চারদিন ঘটা করে পুজো হয় তাঁর। রাজবাড়ির এই পুজো এলাকায় গড়ের দুর্গাপুজো নামেও খ্যাত।
রাজবাড়ির এই দুর্গাপুজোকে ঘিরে রয়েছে নানা লোকশ্রুতি। শোনা যায়, তৎকালীন কাঁথির মশাগাঁ খাল পেরিয়ে দুর্গাপুজোর এক রাতে দেবী দুর্গা আসছিলেন গড়ের পুজোয়। খাল পেরনোর সময় দেবী এক জেলেকে ষোড়শী রূপে দেখা দেন। নৌকোর মাঝি ছিলেন জনৈক নরোত্তম। খাল পার হওয়ার পরে পারানি চান নরোত্তম। তখনই দেবী তাঁকে স্বরূপে দেখা দেন। নির্দেশ দেন, গড়ের দুর্গাপুজোয় গিয়ে দেবীর নাম সংকীর্তন করতে। সেই নাম সংকীর্তন করলে প্রচুর পয়সা পাওয়া যাবে বলেও জানিয়ে দেন দেবী।
দেবীর নির্দেশ পেয়ে ধন্দে পড়ে যান নরোত্তম। তিনি দেবীকে শুধোন, আমি তো মুর্খ। কতটুকুই বা জানি। কীভাবে তোমার নাম সংকীর্তন করব! দেবী আশ্বাস দিলেন, আমি তোর জিভে চণ্ডীমঙ্গল কীর্তন লিখে দেব। তুই গাইবি। নরোত্তমের জিভে দেবী লিখে দিলেন ওই পালাকীর্তন।
{link}
মন্দিরে গিয়ে গান গাইতে চাইলে বাধা দেন উপস্থিত সমাজের উঁচুতলার লোকজন। রাজবাড়ির সদস্যরাও তা মেনে নিতে পারেননি। তাঁদের বিস্ময়, জেলে নরোত্তম কিনা গাইবেন চণ্ডীমঙ্গল!
তবে হাল ছাড়েননি নরোত্তম। দেবীর আদেশ পালন করতে মন্দিরের পিছনে গিয়ে চণ্ডীমঙ্গল গাইতে শুরু করেন তিনি। শোনা যায়, তার পরেই মন্দিরে থাকা দেবীর ঘট ঘুরে যায় পশ্চিম দিকে। সেই থেকে এ বাড়ির পুজোয় ঘট থাকে পশ্চিমমুখী। এখনও প্রথা মেনে এখানে চণ্ডীমঙ্গল গান নরোত্তমের উত্তরসূরিরা। দেবীর ভোগে থাকে মহাপ্রসাদ। চিনি, কাজুবাদাম ও ছানা দিয়ে তৈরি হয় এই প্রসাদ। এক সময় মোষ বলি হত এ বাড়িতে। এখন অবশ্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে যা রয়েছে, তা হল নিষ্ঠা ও ভক্তি সহকারে দেবীর আরাধনা। মা এসে আজও অধিষ্ঠান করেন এই বাড়িতে। আনন্দমুখর হয়ে ওঠে বাড়ির প্রাঙ্গন। আনন্দ আসে গ্রামবাসীর মনেও। মা আসছেন, আনন্দ হওটাই তো উচিত…
{ads}