রাজবাড়ির পুজো-র তৃতীয় পর্বে আজ হাওড়ারই এক রাজবাড়ির অভিনব উপাখ্যান। বাঙালির কাছে মা দুর্গা শুধুই তাদের আরাধ্যা দেবী নন, তিনি তাদের ঘরের মেয়েও বটে। সেই কারনেই বছরের যেই সময়টা ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে আসে তার জন্য এতো উৎসব, আয়োজন। অনেকটা এইরকমই আয়োজন হয় হাওড়ার এই সাঁকরাইল-এর এই বাড়িতে।
এ বাড়িতে দেবী দুর্গা পুজিত হন উমা রূপে। একশো নব্বই বছরেরও বেশি সময় ধরে এই রূপেই হাওড়ার সাঁকরাইলের পালবাড়িতে পুজিত হন দেবী। পুজো হয় দুর্গা দালানে। জমিদারি না থাকায় পুজোয় আর আগের জাঁক তেমন হয় না। তবে পুজো হয় শাস্ত্র মতে, নিষ্ঠা সহকারে।
{link}
পাল পরিবারের প্রাণপুরুষ রাজা রাম পাল। হাওড়ার আন্দুলের রাজবাড়ির দেওয়ান ছিলেন। ভালো কাজের পুরস্কার হিসেবে তাঁকে জমিদারি দেন রাজা। বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়ে রাজগঞ্জে গঙ্গার পাড়ে বাড়ি তৈরি করেন তিনি। সে বাড়ি যায় গঙ্গার পেটে। পরে ফের বাড়ি তৈরি হয়। তাঁর ছেলে রামধন বাড়ির অনতি দূরে তৈরি করেন নতুন জমিদার বাড়ি, ঠাকুর দালান। তখন থেকেই শুরু হয় দুর্গাপুজো। সেই পুজোই হয়ে আসছে আজও। রাম পালের দুই ছেলে। তাঁদের আমলেই পুজোর জাঁক বাড়তে থাকে।
পালবাড়ির পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। জন্মাষ্টমীর দিন হয় কাঠামো পুজো। মহালয়া থেকেই শুরু হয়ে যায় চণ্ডীপাঠ। অষ্টমীতে বিশেষ ভোগ হয়। যা বিলি করা হয় গোটা গ্রামে। দশমী নয়, এ বাড়িতে সিঁদুর খেলা হয় অষ্টমীর দিন। পুজোর সময় দেশ-বিদেশে থাকা আত্মীয়রা আসেন। গমগম করে জমিদার বাড়ি। তার পর ফের দুর্গা দালান অপেক্ষার প্রহর গোণে উমার আগমণের।
{link}
কেবল দুর্গা নন, এ বাড়িতে নিত্যপুজো হয় শ্রীধরজির। দুর্গা, কালী ও লক্ষ্মীপুজোও হয়। দেবত্র সম্পত্তির আয়েই পুজোর ব্যয় বহন করা হয়। জমিদারি না থাকলেও, এ তল্লাটে পালবাড়ির পুজো জমিদার বাড়ির পুজো হিসেবেই পরিচিত। পুজো দেখতে এখনও ভিড় করেন দূর-দুরান্তের মানুষ। দুর্গাদালানে তখন ধ্বনিত হয় যা দেবী সর্বভূতেষু... এখানেই তো মায়ের মাহাত্ম। বেশিরভাগ বনোদি পরিবারই আজ ভাগ হয়ে গেছে, পরিবারের এক একটি অংশ ছড়িয়ে পড়েছে ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে। কিন্তু যতোই বিচ্ছেদ-এর প্রসঙ্গ উঠুক না কেন, যখন মা আসেন তখন মাসের সাথে বাকি সবাই আসেন… একসাথে, এক ছাদের তলায়।
{ads}