সাধারনত দুর্গাপুজো শহরের প্রতিটি প্যান্ডেলে কতদিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়? ষষ্ঠী, সপ্তমি, অষ্টমি, নবমি এবং দশমি অর্থাৎ মোট পাঁচ দিন। কিন্তু এই বাড়িতে দুর্গাপুজো চলে দশ দিন ধরে। পুজো শুরু হয় প্রতিপদে। শেষ হয় দশমীতে। প্রতিপদ থেকেই প্রতিদিন হয় চণ্ডীপাঠ। হুগলির চুচুঁড়ার নন্দীবাড়িতে এভাবেই বহু বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে দুর্গাপুজো। শেফিল্ড টাইমস-এর রাজবাড়ির পুজোর আরও একটি নতুন পর্বে আজ এই বাড়ির দুর্গাপুজোর গল্প।
এবার ৯৫ বছরে পা দিল নন্দীবাড়ির পুজো। এ বাড়িতে অধিষ্ঠিত রয়েছেন মা অন্নপূর্ণা। রাধাকৃষ্ণ এবং নারায়ণও রয়েছেন। নিত্য ভোগ হয়। দুর্গাপুজোর সূচনা করেছিলেন এই পরিবারের নরেন্দ্রনাথ নন্দী। তাঁর আমলেই একচালার দুর্গাপুজো শুরু হয়। মা অন্নপূর্ণার জন্য রয়েছে আস্ত একটা রান্নাঘর। দুর্গাপুজোর সময় সেখানেই হয় ভোগ। এ বাড়িতে দেবীর অন্নভোগ হয় না। লুচি, ফল, ঘরে বানানো সন্দেশ দিয়েই হয় দেবীর ভোগরাগ।
{link}
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যান্ডেলের জিটি রোডের মানচিত্র পরিবর্তন করে ইংরেজদের নজরে আসেন নরেন্দ্রনাথ। তাঁর কাজে সন্তুষ্ট হয়ে পরে আরও সরকারি কাজের বরাত দেয় ব্রিটিশ সরকার। স্বাভাবিকভাবেই সাহেবদের যাতায়াত ছিল এ বাড়িতে। সাহেবদের আনুকূল্যে ঠিকাদারি থেকে এক সময় প্রচুর সম্পত্তির মালিক হয়ে ওঠেন নরেন্দ্রনাথ। দেবসেবার জন্য প্রচুর দেবত্র সম্পত্তি দিয়ে যান তিনি। সেই দেবত্র সম্পত্তির আয়েই ব্যয়ভার বহন হয় পুজোর। এখনও কুমোরটুলি থেকে এ বাড়িতে আসে দুর্গাপ্রতিমার সাজ। পুজোর দিনগুলিতে দূর-দুরান্ত থেকে আসেন এ বাড়ির আত্মীয়-স্বজন। আসেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। পুজো শুরুর সময় যে নিয়ম নিষ্ঠা মেনে পুজো হত, এখনও সেই নিয়মেই পুজো হয়। পঞ্জিকার নির্ঘণ্ট মেনে হয় পুজো। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবাই আসেন নন্দীবাড়ির পুজো দেখতে। স্থানীয় মানুষদের কাছে এই পুজোর মাহাত্ম ও জনপ্রিয়তা দুই-ই বিপুল। সেই কারনেই পুজোর দিনগুলিতে দর্শনার্থীদের ভিড় হয় বিপুল। যদিও গত বছরের ন্যায় এই বছরেও কোভিডের কারনে সেই চিত্রের পরিবর্তন ঘটতে পারার একটা সম্ভাবনা এখনও রয়েছে।
{ads}