সাধারনত অধিকাংশ মাতৃ প্রতিমাতেই দেবী দুর্গার হাত থাকে দশটি। কিন্তু বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় এর ব্যাতিক্রম। যেমন এ বাড়িতে দেবী দুর্গার দুটি হাত। অসুর নিধনও করছেন না তিনি। তাই নেই অসুরও। তবে সন্তান-সন্ততি নিয়ে দেবী রয়েছেন সিংহস্কন্ধারূঢ়া। তাঁর সেই রুদ্রমূর্তি নেই। দেবীর মুখে স্মিত হাসি, ঝরে পড়ছে প্রশান্তি। তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরে দুর্গার এই রূপেরই পুজো হয়ে আসছে মেদিনীপুরের মুখোপাধ্যায় পরিবারে।
কোনও এক বিধবা মহিলার হাত ধরে সূচনা হয়েছিল এ পুজোর। বর্তমানে পুজো করেন পার্থপ্রতীম মুখোপাধ্যায়। পুজো শুরুর সময় যে রূপে দেবীর আরাধনা করা হত, এখনও তাই হয়। দেবীর যে প্রচলিত রূপ আমরা দেখি, সে রূপের পুজো এ বাড়িতে হয় না। দেবী দুর্গার হাতের সংখ্যা দুটি। একটি হাতে তিনি বরাভয় প্রদান করছেন। অসুর নেই। তাই অসুর বধের প্রশ্নও নেই। দেবীর বাহন সিংহ। তবে তার রং সাদা। দেবীর সঙ্গে লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী রয়েছেন। তবে লক্ষ্মীর পেঁচা কিংবা সরস্বতীর হাঁস নেই। এই পরিবারের দেবী অভয়া দুর্গা নামে পরিচিত। জানা গিয়েছে, অসুর বধের পরে মা দুর্গা যখন স্বর্গে ফিরে যান, তখন তাঁর এই অভয়া মূর্তিই দর্শন করে ভক্তরা।
{link}
জন্মাষ্টমীর দিন রুপোর থালায় করে মাটি নিয়ে আসা হয় কংসাবতী নদীর পাড় থেকে। সেই মাটি দিয়েই প্রতিমা তৈরি হয়। এ বাড়িতে মায়ের প্রবেশ হয় ষষ্ঠীর দিন। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে পুজো হয় পঞ্জিকার নির্ঘণ্ট মেনে। দশমীর পুজো শেষে হয় বিসর্জন। দেবী ফিরে যান কৈলাসে। দেবীর আগমনের প্রতীক্ষার প্রহর গুণতে থাকেন মুখোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা।
সেই কারনেই হয়ত বাংলার মানুষ বলে থাকেন বাংলায় মা দুর্গা শুধু আরাধ্য দেবীই নন, তিনি বাংলার ঘরের মেয়েও বটে। অপেক্ষা তো আর মাত্র কয়েক দিনের… মা আসছেন।
{ads}