header banner

দুই আমাবস্যায় ‘মহিষাসুরমর্দিনীর’ দুই আগমন

সৌভিক চোঙদার

চিরাচরিত বাঙালির উন্মাদনা , মাতৃ আরাধনা মহালয়ার মাধ্যমেই শুরু , মহালয়ার সকাল মানেই এক নতুন আশা , আনন্দ , উন্মাদনা , খাওয়া দাওয়া , ঘুরতে যাওয়া আর পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো । ২০২০ মানুষের কাছে একটি না ভোলা স্বপ্ন ।করোনার আবহাওয়া আর বন্দিদশার মুক্তি বাঙালির কাছে দুর্গাপূজা এবং যার সুত্রপাত মহালয়ার মাধ্যমে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস এই বছর মহালয়ার ৩৪ দিন পর দেবী বোধন , যা মানুষের কাছে এক দুঃখ চিত্রে পরিনত হয়েছে।যে প্রথা মেনে তাঁর জীবনচক্র চালিত হয়েছে তাঁর পুনঃর পরিচালনার জন্য প্রয়োজন আর এক মহালয়ের সূচনার , এক ভিন্ন মহালয়ের সূচনা যার পরিচিতির প্রকাশ ঘটাতে চলেছে শেফিল্ড টাইমস ।

এক  অপেক্ষায় এক বছর , অপেক্ষায় এক সকাল , নিদ্রাহীন এক রাত তার পরই ঘুম -ভাঙানিয়া শাঁখের নিনাদ ফুরোতেই মন্ত্র স্বরে ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর ’ শুনেই এক অফুরন্ত আশা জেগে ওঠে । এক সকাল যার অপেক্ষায় সূর্য উদয়ের আগে মানুষের গঙ্গাবক্ষে পিতৃ স্মরণ কালীন সময়ের অপেক্ষা , এক সকাল যার সুত্র হয়ে ওঠে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে , শুরু হয় শুভ শক্তির সূত্রপাত ও অশুভ শক্তির বিনাস । মানুষ বদলেছে , বদলেছে তার পরিচিতি , বদলেছে তাঁর চাহিদা কিন্তু বদলাইনি তাঁর স্রোতা মন যে মন একবিংশ শতাব্দীতে বলে বেতারে চণ্ডীপাঠ ছাড়া মনে হয় না যে মহামায়ার আগমন।‘মহিষাসুরমর্দিনী ’ আগমন পূর্ণতা পায় আগমনী সুরে ।

করোনা মহামারির আতঙ্ক ও মৃত্যু মিছিল সমাপ্তি করতে পারিনি সনাতন চাহিদা ।২০২০ সালের মহালয়া পরে দেবী বোধন কালে বিরতি প্রায় ৩৪ দিন , এক আমাবস্যায় মহালয়া পরের আমাবস্যায় বোধন।তাই সময়ের তারতম্যে বোধনের প্রাক্কালে মহালয়া ২০২০ সালে কার্যত সম্ভব নয়।

কিন্ত প্রশ্ন থেকেই যায় চিরাচরিত অভ্যাস কি মানুষ ছাড়তে পারবেন ?  পুরোহিতদের একাংশের মতামত তর্পণ আবার সম্ভব মহালয়ের সময়কালকে আবার স্মরণ করা উচিত এই অক্টোবর মাসের আমাবস্যা সময়কালে।হয়তো বেতারে ‘মহিষাসুরমর্দিনীর’ অনুষ্ঠান বেজে উঠবে না , কিন্ত গঙ্গাবক্ষের সাক্ষী রেখে মানুষ মহালয়া পালন করতে পারেন।

দেবী আহ্বানের যথার্থ সময় কখন ? চিরাচরিত প্রথার সঙ্গে বাস্তব ভাবনায় যে ভুল তাঁর বিশ্লেষণ করলেন দেবব্রত মুখোপাধ্যায় ।মহালয়া , সভ্যতার আদি প্রাচীন কাল থেকে মানুষের কাছে এক শুভ আরম্ভ , কিন্ত বাস্তব রুপে তা এক কঠিন বিষাদ মানুষের জীবনচক্রে হারিয়ে যাওয়া পিত্র পুরুষদের  জল ও পিণ্ড দান করা আমাবস্যা তিথিতে। আমাবস্যা তিথিতে দেবী আরাধনা কার্যত অসম্ভব তাই মহালয়া ও মহিষাসুরমর্দিনীর সমতুল্য বিবেচনা কার্যত ভুল।মহালয়ার বিশ্লেষণে বলা হয়েছে প্রতি বছর পূর্ণিমা পক্ষের পরের পনেরো দিন আমাবস্যা সময়ে তর্পণ করা ও শ্রাদ্ধ শান্তি অনুষ্ঠান পালন করা হয় , তাই এই সময়কালে কার্যত কোন শুভ অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়।আমাবস্যার ভোর রাতে দেবীর আহ্বান করা হয় কিন্ত কার্যত উচিত পরের দিন ভোর রাতে।দেবী আরাধনা কখনো মহালয়ার পর থেকে আবার কখনো মহাষষ্ঠীতে বোধনের মাধ্যমে হয়।চিরাচরিত বনেদি বাড়ি ও রাজপরিবারের প্রথা অনুসারে ভিন্ন রুপে দেবী আরাধনা হয়ে থাকে।দেবী আরাধনার ভিন্ন সময় প্রকাশে দেবী বাসন্তী পুজা রুপেও মহামায়ার আরাধনা হয়ে থাকে কিন্ত শহর উৎসবের প্রধান পুজা হিসেবে দেবী মহিষাসুরমর্দিনীর পুজাই বেশী প্রচলিত ।শরতের সময়কাল দেবী আরাধনার শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে , কারন এই সময়ে প্রতি ঘরে ঘরে শস্য শ্যামল পরিপূর্ণতা পায় , মানুষের জীবনে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।  

মহালয়ের ৩৪ দিন পর দেবী আরাধনার যে কার্যক্রম তাঁর পরিপেক্ষিতে আমাদের পঞ্জিকা নানান সময়কালের কথা প্রকাশ করেছে , সৌর মাস ও চন্দ্র মাসের পরিপেক্ষিতে নানান দিনের বিবেচনা করা হয়। আমাদের যে মলমাসের কথা ভিত্তিতে এই মহালয়ের পর দুর্গাপূজা তাঁর কারন এক সৌর মাসে যখন দুটি আমাবস্যা তৈরি হয় অর্থাৎ এক সংক্রান্তি থেকে আর এক সংক্রান্তিতে যখন দুটি আমাবস্যা হয় সেটিকে আমরা বলি মলমাস বা অধিক মাস।প্রতি আড়াই বছর অন্তর এই মলমাস হয়ে থাকে। প্রতি আড়াই মাসে আড়াই দিন করে বৃদ্ধি হতে হতে তা আক্তি সম্পূর্ণ অধিক মাসে পরিনত হয়ে থাকে। এই অধিক মাস যে আশ্বিন মাসেই হবে তাঁর কোন গানিতিক কারন নেই , তা পরিবর্তন হতে থাকে , কখনো কার্ত্তিক মাস কখনো অগ্রাহায়ন।

করোনা আবহের সঙ্গে মানুষের মনে এই মলমাসের এক চিন্তা সৃষ্টি হয় যে এই মলমাসের কি কোন কু প্রভাব হতে পারে , পুরান বা শাস্ত্র মতে মলমাস খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয় যার কোন পারিপার্শ্বিক প্রভাব স্বাভাবিক ভাবে নেই বললেই শ্রেয়।২০২০ সালের দেবী দলায় আগমন ফল মড়ক , তাঁর প্রভাব বিগত ছয় মাস প্রতি মানুষের জীবনে অতি স্বাভাবিক ভাবেই পরেছে।

শেফিল্ড টাইমস তাঁদের যাত্রার সূত্রপাত করছেন এই দ্বিরুপ মহালয়ের কাল্পনিক ভাবমূর্তির প্রকাশে , এক অন্য মহালয় , এক অন্য বোধন , এক রুপে দশভুজা আরও এক রুপে শেফিল্ড টাইমস।

Durga puja West Bengal Kolkata Mahalaya Tarpan Covid 19 Global Pandemic Howrah Molmash India

Last Updated :