header banner

আমিষ ভোগের প্রথা ও করোনা সুরক্ষার নিয়মকানুন মেনেই হবে ঘটক বাড়ির দুর্গাপূজা

সৌভিক চোঙদার

থিম পূজার প্রচলনে শহর কলকাতা একবিংশ শতাব্দীতে তাঁর আভিজাত্য দেখালেও ২০২০ সালের করোনা প্রভাহ থিম পুজার আভিজাত্যকে ফিকে করে দিয়েছে ।এক পুনর্জীবনের মতো  ঐতিহ্যশালী বনেদি বাড়ির পুজার আভিজাত্য এই বছরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় । আট ফুটের এক চালচিত্রের প্রতিমা , অল্প আলোর ছোঁয়া আর ঢাকের বাদ্যি সাবেকিয়ানার পুজায় মানুষকে আবার কাশফুলের সৌন্দর্যে মেলে ধরতে বাধ্য করছে।

বনেদি বাড়ি বা রাজবাড়ির পুজার কথা এলেই চলে আসে এক ইতিহাসকে মেলে ধরা গল্পের কথা , কখনো ব্রিটিশদের অত্যাচারে বিদ্রোহের শপথে দেবী আরাধনা , কখনো রাজত্বের পথকে আরও দীর্ঘ প্রজন্ম অবধি বৃদ্ধির তাগিদে দেবী আনন্দময়ীর আগমন ।তেমনই একটি ইতিহাসের সাক্ষী দক্ষিণ যাদবপুরের রামগড়ের ঘটকবাড়ির দুর্গাপুজো ।কলকাতা শহরের দক্ষিণে ঘটকবাড়িতে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই।  রামগড়ের ঘটকবাড়ির পুজো এবার ৭৩ বছর পেরিয়ে ৭৪-এ পড়ল। তাঁদের সাবেক বাসগৃহ পূর্ববঙ্গ তথা অধুনা বাংলাদেশের বিঝারি গ্রামে দুর্গাপুজো শুরু হয় প্রায় আড়াইশো বছর আগে।পরিবারের সদস্য প্রসেনজিৎ ঘটক জানাচ্ছেন, আড়াইশো বছর ধরে এই পুজার প্রচলন হয়ে আসছে । এবার পুজোয় আর সকল আচার আয়োজনের সঙ্গে কোভিড সংক্রমণের সতর্কতাও পুরো মাত্রায় নিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।এই বছর ভক্ত আগমন বৃদ্ধি হয়ার সম্ভাবনা বেশী , পুজা অনেক সীমিত স্তানেই সম্পূর্ণ হতে চলেছে ।তাছাড়া ঘটক বাড়ির শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ দেবী মহামায়ার নিকট তিনদিনই বলিদান হয় এবং বলিদান করেন পরিবারের সদস্য । প্রতিদিন ভোগদান পর্ব হতে থাকে ,তিনশতর বেশী ভক্তগন অংশগ্রহন করেন এই অনুষ্ঠানে।

ঘটক বাড়ির ইতিহাসের সঙ্গে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার এক যোগসূত্র আছে , ১৯৪৭ সালেই ঘটক বাড়ির সদস্যরা বাংলাদেশ ত্যাগ করে কলকাতায় এসেছিলেন এবং সেই বছর থেকে আজ অবধি পুজা যথারীতি সুসম্পন্ন হয়েছে, এই বছরও তা সমান ভাবেই সম্পূর্ণ হবে।বিধুভূষণ ঘটক , ১৯৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন ।  বাংলাদেশের বিঝারিতে সংস্কৃত পন্ডিত পরিবার হিসেবে সুপরিচয় ছিল ঘটকদের। এঁরা পরবর্তীতে ঘটক উপাধি লাভ করেছিলেন। পরিবারের সদস্যরা স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন এমনও জানা যায়। বিধুভূষণ ঘটক , এই পরিবারের অন্যতম পরিচিত সদস্য যার নাম আজ ও ভারত-বাংলাদেশ উভয় জায়গাতেই খুবই জনপ্রিয়।

পুজার নিয়মাবলী দুই শত বৎসরের বেশী সময় ধরে একই চলে আসছে , এই পরিবারের আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এইখানে আমিষ ভোগই তিনদিন দেওয়া হয় মাকে ও ভক্তদের । তিন দিনই  মায়ের  মাছের পদ অপরিহার্য। পুজোয় অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মা দুর্গার বামে থাকেন গণেশ। আর কার্তিকের অবস্থান কলা বউয়ের পাশে মায়ের ডান দিকে।সে সময়কার তালপাতার পুঁথি ও ভুর্জ পত্র এবং তাল পাতাতেই লেখা চন্ডী আজো যত্নে রক্ষিত হয়ে আছে বাড়িতে।

পুজোর কূল পুরোহিত বংশানুক্রমিকভাবে মেদিনীপুরের নিকুশিনীর  ভট্টাচার্য পরিবার থেকেই আসছেন। পুজোর ক'দিন বাড়ির যাবতীয় ভোগ রান্না করে আসছেন পরিবারের মহিলারাই। প্রতিবছর একই শিল্পী পরিবারের সদস্যরা গড়ে আসছেন একচালা প্রতিমা। তন্ত্র মতে শাক্ত আরাধনায় ঘটক বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য আজও বজায় রাখার নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা।

নিউ নর্মালের ছোঁয়া লাগতে চলেছে এবার কলকাতার ঐতিহ্যবাহী এই বাড়ির পুজাও । করোনা সতর্কতা সমস্ত রকম মেনেই ভক্তদের অনুমতি দেওয়া হবে প্রবেশাধিকারের জন্য ।প্রত্যেক অতিথি ও দর্শনার্থীদের হাত স্যানিটাইজ করার ব্যাবস্থা ও  থার্মাল স্ক্যানিং বাধ্যতামুলক করা হয়েছে । সুরক্ষার তাগিদে মাস্ক পড়া আবশ্যিক ।দেশের ভিন্ন প্রান্ত থেকে ও বিদেশ থেকেও সদস্যরা আসেন এই ঐতিহ্যবাহী পূজায় নিজেদের আনন্দের সময়কে ভাগ করে নিতে ।  কলকাতার পারিবারিক পুজোর ঐতিহ্যে ঘটক পরিবারের পুজো উল্লেখযোগ্য স্থান করে নিয়েছে।

ভিডিও ও ফটো সুত্র ঃ ফাইল চিত্র 

durgapuja2020 kolkata howrah traditionalpuja covid19 kolkata howrah westbengal

Last Updated :