সিনেমা এবং বাস্তব জগতে বরাবরই আমরা কিছু মানুষকে ভিলেন বলে পরিচয় দিয়ে থাকি। কিন্তু পৃথিবীর সমস্ত কঠিন ও নিষ্ঠুর মানুষের মধ্যেও থাকে একটা কোমল হৃদয়, সবশেষে সেও তো একজন মানুষ। সময়ের সাথে সেই কঠিন হৃদয়ে যখন কেউ এসে স্নিগ্ধ হাওয়ায় ভাসতে থাকা এক পালকের মতো অনুভূতির ছোঁয়া দিয়ে যায়, সেইখান থেকেই জন্ম নেয় প্রেম। তখনই সারা পৃথিবীর কাছে চেনা ছকে আবারও নিয়তি তুলে ধরে লৌহ- কাঠিন্যের আবরণে ঢাকা মানুষটি সেও প্রেমের জালে আবদ্ধ হতে সক্ষম। আজ সেইরকমই এক খলনায়ক প্রেমিকের গল্প…
{link}
অ্যাডলফ হিটলার, বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ ও খলনায়ক হিসেবে যার পরিচিতি। একসময় জার্মানির একছত্র এই অধিপতির নাম শুনলেই থরহরি কম্প হত তামাম পৃথিবীর। তার নাৎসি বাহিনীর দাপটে বাংলা অনুবাদ অনুযাই বলা চলে, ‘বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেতো’। প্রবাদ আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শিশুদের ঘুম পাড়াতে বিশ্বের মায়েরা বর্গীর গল্প করতেন না, তাদের শোনাতেন হিটলারের কথা। কিন্তু লৌহকঠিন সেই মানুষটির মধ্যেও ধরা দিয়েছিল প্রেম। যে ভালোবাসার স্বাদ পেয়েছিলন অসাধারণ রূপসী ইভা ব্রাউন। হ্যাঁ, এই অসামান্য জার্মান সুন্দরীরই প্রেমে পড়েছিলেন হিটলার। জীবন একদম শেষ লগ্নে এসে মেই ক্যাম্ফ-এর রচয়িতা তাঁকে দিয়েছিলেন স্ত্রীর মর্যাদা।
জার্মানির মিউনিখ শহরের এক অনুষ্ঠানে প্রথম হিটলারকে কাছ থেকে দেখেন বছর সতেরোর ইভা ব্রাউন। তিনি তখন এক ফোটোগ্রাফারের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। প্রথম দর্শনেই প্রেম। সে প্রেম গাঢ় হয় আরও দু বছর পরে। একটি অনুষ্ঠানে ফের হিটলারের সঙ্গে দেখা হয় ইভার। এই সময়েই ইভা সাহস করে হিটলারকে করে বসেন প্রেম নিবেদন। রাজি হয়ে যান হিটলার। ওইরকম দাপুটে ও গুরুগম্ভীর মানুষকে প্রেম নিবেদন, সাহস বলিহারি! তারপর থেকেই স্নিগ্ধ গতিতে চলতে শুরু করে হিটলার ও ইভার প্রেমের ফিটন গাড়ি। এরপর টানা ষোলো বছর একজন আর এক জনের পাশে থেকেছেন সময়ে-অসময়ে-দুঃসময়ে।
১৯৪৫ সালের ২৮ এপ্রিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একদম শেষের দিক। রুশ সেনা ঘিরে ফেলেছে বার্লিন শহর। পালানোর জো নেই। এ বিপদ এক সপ্তাহ আগে আঁচ করেছিলেন হিটলার। কাছের জনেদের ডেকে বলেছিলেন, শিয়রে বিপদ। তোমরা এবার আমাকে ছেড়ে চলে যাও। আমি কিছু মনে করব না। যে যেখানেই যাও না কেন, ভালো থেকো। এই সময় বার্লিন শহরের সচিবালয়ের মাটির নীচের একটি লোহার বাঙ্কারে ঘনিষ্ঠজনেদের নিয়ে বাস করছিলেন হিটলার। তাঁর সঙ্গে তখনও ছায়ার মতো লেপ্টে রয়েছেন প্রিয় পোষ্য কুকুর বন্টি, ইভা, প্রধান সচিব গ্রয়বেলস এবং আরও কয়েকজন। যাঁরা চরম বিপদ জেনেও ছেড়ে যাননি হিটলারকে। মূলত এরাই ছিলেন হিটলারের আপনজন।
{link}
সেনা হিটলারের খোঁজে পাগলপারা। মাটির ৫০ ফুট নীচে বসেও সে খবর নিয়মিত পাচ্ছিলেন হিটলার। মৃত্যু আসন্ন। এই সময়েই প্রেমকে পরিণতি দেওয়ার দায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তার মাথায়। হিটলার প্রধান সচিবকে ডেকে বললেন, আজই আমিকে ইভাকে বিয়ে করব, ব্যবস্থা কর। নিকষ কালো অন্ধকার রাতে যখন নিশ্চুপ গোটা বার্লিন শহর, তখন ম্যারেজ রেজিষ্ট্রার এলেন বাঙ্কারে। সময়, রাত ১২.৩৫ দীর্ঘ ষোলো বছর ধরে যিনি ছিলেন প্রেমিকা, তিনি পেলেন স্ত্রীর মর্যাদা। পূর্নতা পেলো তাদের প্রেম। এর ঠিক আগের দিন হিটলার হত্যা করেছেন প্রিয় পোষ্যকে। খাবারে পটাসিয়াম সায়ানাইড মিশিয়ে।পটাসিয়াম সায়ানাইডের বাকি অংশ হিটলার নিজে হাতে তুলে দেন প্রিয় স্ত্রীর হাতে। এর ঠিক পরের দিন বিপদ দোরগোড়ায় বুঝে নিজের হাতে নিজেকে গুলিকে চিরতরে শেষ করে দেন হিটলার। চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষকে মরতে দেখে স্থির থাকতে পারেননি ইভা। স্বামীর দেওয়া পটাশিয়াম সায়ানাইডের সবটুকু খেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন ইভা হিটলার ব্রাউনও। পরের দিন হিটলারের মৃত্য সংবাদ ঘোষণা করে জার্মান রেডিও এবং বিবিসি। উপেক্ষিত থেকে যান ইভা, উপেক্ষিত থেকে যায় হিটলারের প্রিয় পোষ্য বন্টিও।
কিন্তু এতো বছর পরেও তাদের প্রেম কাহিনী হারিয়ে যায়নি পৃথিবীর বুকে, অক্ষয় অমর হয়েছে। যে হিটলার হাজার হাজার ইহুদীকে নিষ্ঠুরভাবে নিজ হাতে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েছেন, তিনিই আবার এক মহিলার প্রতি প্রেমেও আসক্ত হয়েছেন। যেন দর্পন এক আর প্রতিফলন দুই…
{ads}