“পুরানো সেই দিনের কথা ভুলভি কি রে হায়
ও সেই চোখের দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়”
বয়স বাড়লেও স্মৃতির পরিমাণ ও বাড়তে থাকে। পুরনো স্মৃতি পুরনো ভালোবাসা একই থাকে। আর সময়ের সাথে ভালোবাসা আরও বাড়ে বই কমে না। এক দুই দিন নয় জীবনের মূল্যবান সময় একসাথে অতিবাহিত করেছেন একে অপরের চোখে চোখ রেখে। পঞ্চান্ন বছর আগে ১৬ই মাঘ এই দুই কপোত কপোতী এক হয়েছিল। এখন আবার এই চারহাত এক হলো এই বৃদ্ধ দম্পতির। একই দিনে, গোধূলি লগ্নে, নিজের প্রিয় মানুষটিকে সেই পুরনো সাজে নতুনভাবে পাওয়ার মজাই আলাদা। শুনে হয়তো অবাক লাগতেই পারে, হ্যাঁ যা শুনছেন তা একদম ঠিকই শুনছেন পাত্রের বয়স প্রায় আশি ছুঁই ছুঁই, আর পাত্রি সত্তোরের কাছাকাছি। গত শনিবার রাতেই ধুমধাম করে রায়গঞ্জে পুনর্বিবাহ সমপন্ন হয় এই “রায়” দম্পতির।
বছর পঞ্চান্ন আগে বাংলা নিরিখে ১৬ই মাঘ আত্রেয়ী নদীর পাড়ে অধুনা বাংলাদেশের এক গ্রামে দিলীপ কুমার রায়ের সাথে বিয়ে হয়েছিল গৌরী রায়ের।শুরু হয়েছিল একসাথে পথ চলা। সুখ-দুঃখে একে অপরের পাশে থাকা। তারপর কেটে গেছে বহু বছর। এখন তারা উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ শহরের মিলনপাড়ার বাসিন্দা। ছেলেমেয়ে নাতিনাতনি নিয়ে ভরা সংসার।শনিবার দাদু ঠাকুমার ৫৬তম বিবাহ বার্ষিকী অভিনব করে তোলার বিশেষ উদ্যোগ নেয় নাতি নাতনিরা।যেমন ভাবা তেমন কাজ।সুসজ্জিত ছাতনাতলায়, পুরোহিতের মন্ত্রচ্চারনে শুভদৃষ্টি, মালাবদল, অগ্নিসাক্ষী রেখে সিঁদুর দান পর্যন্ত সবটাই হল ধাপে ধাপে। শুধু বিয়েই নয় সাথে রিতিমত আত্মীয়স্বজনদের নিমন্ত্রিত করাও হয়েছিল।শনিবার বিয়ে আর রবিবার নৈশ ভোজেরও আয়োজন করা হয়েছিল। নাতিনাতনিদের কাছ থেকে এমন একটি সুন্দর উপহার পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলেন এই দম্পতি। ওনারা জানালেন, “নাতিনাতনিরা সকলে আনন্দ করছে, ওদের আনন্দেই আমাদের আনন্দ। নাতিনাতনি, ছেলে-বউমা সবাই যে এতটা ভালোবাসতো তা এতদিনে বুঝতে পারলাম”
আধুনিকতা আর যন্ত্রচালিত বর্তমান যুগে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যখন আন্তরিকতার অভাব দেখা যায় বা ব্যস্ততার কারনে বৃদ্ধ বাবা মা যখন ব্রাত্য হয়ে পড়েন অনেকের কাছে, ঠিক সে সময় রায় পরিবারের এই উদ্যোগকে সমাজে আলাদা বার্তা বহন করবে বলে জানিয়েছেন সমাজের অনান্য শ্রেণীর মানুষও।এদিন উপস্থিত পুরোহিত শঙ্কর চক্রবর্তী বললেন, এটা আমার জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা। এই ঘটনাটি এক বিশেষ বার্তা বহন করে আনে বিশেষ করে যারা মনে করেন বাবা-মা, দাদু দিদিমা তাদের মাথার ভার। আর সেই সঙ্গে ভালোবাসা কখনও থিতিয়ে পরে না তারও ছবি এই পুনর্বিবাহ।
{ads]