“ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মোটি” সিনেমাটি মনে আছে? যা একটু হলেও নাড়িয়ে দিয়েছিল সমাজের প্রচলিত চিরাচরিত ব্যাবস্থাকে। যেখানে আমরা সবাই দেখেছিলাম গল্পের নায়িকা একটি নারী হওয়া সত্তেও স্রোতের বিপরীতে গিয়ে পুরোহিতের কাজ করছেন। সামনে এসেছে অনেক বাধা বিপত্তি কিন্তু হার মানতে দেখা যায়নি তাকে। মেয়রা নাকি অসূচি, দুর্বল, মাসিকে অধিকার নেই ঠাকুরের কাজ করার, যেখানে আমরা যে মায়ের পুজা করি তিনিও একজন নারী।এখন হয়তো শুনতে পাওয়া যায় নারী পুরুষ সমান। আর এটা প্রমাণিতও হচ্ছে বার বার কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সমাজ কি আদৌ তা মেনে নিচ্ছে? বিজ্ঞানের দিক দিয়ে মেনে নেওয়া হলেও যখন ব্যাপারটি পূজা বা ধর্মচারনের ক্ষেত্রে হয় তখন এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এখনও মেয়েদের অনেক ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে মনে করে।কিন্তু যেখানে বৈদিক গ্রন্থে কিছু নারী ঋষি বা মুনির কথা উল্লেখ আছে। একজন নারী ঋষি হওয়ার অর্থ তিনি বৈদিক মন্ত্র উচ্চারন করে সমস্ত দেবদেবী পূজা আর্চা ও যাগযজ্ঞ করতেন। কিন্তু মধ্যযুগীয় পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের সেই মান মর্যাদাকে দমিয়ে রেখে সমাজের বহু জায়গা থেকে তাদের পেছনে ফেলে রাখা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান আধুনিক সভ্যতার যুগে নারীরা শক্তিতে বলীয়ান হওয়ার পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরে পুরুষদের সাথে সমান তালে তাল মিলিয়ে চলছে এযুগের নারী। এতদিন পুজো পাঠ যাগযজ্ঞ বিবাহ অন্নপ্রাশনের মতো সামাজিক মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতেন পুরোহিতেরা। যারা হলেন পুরুষ। এখন থেকে সেই ধ্যান ধারনা পালটে দিয়ে সমাজের মহিলারাও এগিয়ে এসেছেন পুরোহিতের কাজে। পূজো পাঠ যাগযজ্ঞের পাশাপাশি এবার বিবাহ কার্যও সম্পন্ন করছেন মহিলা পুরোহিতেরা।হ্যাঁ এটি ঠিক ওই সিনেমাটিরই মতো। উত্তর দিনাজপুর জেলার সদর রায়গঞ্জ শহরের মোহোরকুঞ্জ ভবনের একটি বিয়ে বাড়ির ছবি ধরা পড়লো যেখানে সুলতা মণ্ডল নামে এক মহিলা পুরোহিত বিবাহ সম্পন্ন করলেন।
{ads}
রায়গঞ্জের বীরনগরের বাসিন্দা শিপ্রা রায়ের মেয়ে ঋতুপর্ণা রায়ের সাথে হেমতাবাদের বারুইবাড়ির পাত্র ধীরেন্দ্র নাথদের বিবাহে পুরহিতদের কাজ করলেন গঙ্গারামপুরের মহিলা পুরোহিত সুলতা মণ্ডল। বিয়ের অধিবাস থেকে শুরু করে নারায়ন শিলার পূজো এবং বৈদিক মন্ত্রোচ্চারনের মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন করলেন মহিলা পুরোহিত। মহিলা পুরোহিত সুলতা মন্ডল জানালেন সমাজে যে মহিলারা কোনও অংশেই কম নয়, তারাও যে পুরুষদের সাথে সমান তালে সব কাজ করতে পারে এই বার্তা দিতেই তিনি পুরোহিতের পেশাককে বেছে নিয়েছেন। মহিলা পুরোহিত দিয়ে নিজের বিয়ে হওয়া প্রসঙ্গে পাত্রী ঋতুপর্ণা বলেন, “আমি নিজে একজন মেয়ে হয়ে পরিবার চালাতে অংশগ্রহন করছি। যে আমাকে জন্ম দিয়েছেন, বড় করে তুলেছেন সেও একজন মহিলা। একজন মহিলা পুরোহিত তাঁর বিবাহ কার্য সম্পন্ন করাতে তিনি যেমন খুশী তেমনই গর্বিত”। ঋতুপর্ণার মতো খুশী তাঁর পরিবার ও আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব।
বিবাহ অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত থেকে অতিথি অভ্যাগত এবং পরিবারের মহিলারা গর্বিত একজন মহিলার এই পুরোহিত পেশায় যুক্ত হওয়ায়। সমাজের কোনও কাজেই যে মহিলারা আজ আর পিছিয়ে নেই এটা অনুভব করতে পেরেই গর্বিত তাঁরা। লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ এই বিভেদ গুলো যেদিন সমাজ থেকে উঠে যাবে সেইদিনই একটি সুন্দর সমাজ গড়ে উঠবে।
{ads}