হীরক রাজার দেশের পাঠশালা আজ বন্ধ ,মাস্টারমশাই আর নেই।বাঙালির হৃদয়ের অন্দরে মিশে থাকা কিংবদন্তী চিরবিদায় নিলেন পৃথিবী থেকে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, যার নাম শুনলেই মুখের সামনে ভেসে ওঠে একটি স্নিগ্ধ অম্লান হাঁসতে থাকা মুখ, কানে ভেসে আসে মুগ্ধ করা এক কণ্ঠ। অভিনয়ের মাধ্যমে যে মানুষটি বার বার আমাদের না হেরে গিয়ে হাজার প্রতিকূলতা ছাপিয়ে জীবনে বেঁচে থাকার জন্য অনুপ্রানিত করেছেন, আজ সেই অপুই বিদায় নিলেন তাঁর সংসার ছেড়ে। প্রায় একমাস লড়াইয়ের পর ৮৫ বছর বয়সে জীবনাবসান হল ফেলুদার।
১৯৩৫ সালের ১৯শে জানুয়ারি জন্মগ্রহন করেন এই প্রথ্যাত অভিনেতা। সত্যজিত রায়ের অপুর সংসার(১৯৫৯)-এ অপু চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে সিনেমার জগতে পদার্পন করেন তিনি। তাঁর অভিনীত দ্বিতীয় ছবি তপন সিংহের পরিচালিত ক্ষুধিত পাষান(১৯৬০)। মৃনাল সেনের সাথে থার প্রথম কাজ পুনশ্চ(১৯৬১) সিনেমাটিতে। ঝিন্দের বন্দি(১৯৬১) সিনেমায় তাঁর অভিনীত ময়ূরবাহন চরিত্র কিংবা সাত পাকে বাঁধা(১৯৬৩)-এ সুখেন্দুর চরিত্র সব চলচ্চিত্রেই নজর কাড়া অভিনয় করেন তিনি। বাংলা সিনেমার স্বর্নযুগের সমস্ত বিখ্যাত পরিচালকের সাথেই কাজ করেছেন তিনি।{ads}
সত্যজিৎ রায়ের পরিচালিত ১৪টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। অপুর সংসার ছবিতে সত্যজিৎ রায়ের সাথে প্রথম কাজ করেন তিনি। তবে সোনার কেল্লা ও জয় বাবা ফেলুনাথ সিনেমায় তাঁর ফেলুদা চরিত্রে অভিনয় সকল বাঙালি হৃদয়ে এক অন্যতম জায়গা করে নিয়েছে। সত্যজিৎ রায় নিজে বলেছেন এই সিনেমাগুলিতে ফেলুদার ভূমিকায় তাঁর থেকে ভালো অভিনয় আর কেউ করতে পারত না। এছাড়াও অরন্যের দিনরাত্রী, হীরক রাজার দেশে, চারুলতা সহ সমস্ত সিনেমাতেই তাঁর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সত্যজিৎ রায়ের দ্বিতীয় শেষ ছবি শাখাপ্রশাখায় তিনি তাঁর সাথে শেষ কাজ করেন।
এছাড়াও সাদা কালো পর্দা থেকে রঙিন পর্দায় এসেও একবিংশ শতাব্দিতেও তিনি আমাদের একের পর এক ছবিতে জীবনে ভালোবাসার অর্থ চিনিয়ে দিয়ে গেছেন। পোস্ত ছবিতে যেমন তিনি এক দাদু ও নাতির মধ্যে ভালোবাসার বাঁধন চিনিয়েছেন, তেমনই বেলাশেষে ছবিতে তিনি শিখিয়েছেন কিভাবে বারবার জীবনে একজন মানুষেরই প্রেমে পড়া যায়। বেলাশেষের চরিত্রে তিনি যেমন তাঁর স্ত্রীর প্রেমে পড়েছেন বারবার, ঠিক তেমনমনভাবে বাঙালি তাঁর আর তাঁর কণ্ঠের প্রেমে পড়েছে বারবার। আজ তাঁর প্রয়ানে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের মহাকাশের এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ নক্ষত্রের পতন হল। তবে তিনি চিরঅমর, তিনি অমর তাঁর কাজে,তিনি অমর প্রতিটা বাঙালি হৃদয়ে। মাস্টারমশাই না থাকলেও, পাঠশালা বন্ধ হবেনা…
চিত্র সৌজন্যঃ ফেসবুক
{ads}