“বাতাসে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা, কারা যে ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে” চতুষ্কোন সিনেমার এই গানের মতোই মিস্টি হাওয়ায় দুলতে থাকা আম্রমুকুল জানান দিচ্ছে দরজায় কড়া নাড়ছে ‘ঋতুরাজ” বসন্ত। ঋতুরাজ কেন? তার উত্তর হয়ত পাওয়া যাবে কবিদের কলমে লেখা কবিতার ছন্দে। কুহু কুহু কোকিলের কুহুতান থেকে শুরু করে গ্রামের পথের উপর ঝরাপাতার লেখা গল্প, সবেতেই বসন্ত তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমান দিয়ে আসছে প্রতি মরশুমে। আর বসন্তের কথা মাথায় এলেই বাঙালির মনে ভেসে ওঠে বোলপুর শান্তিনিকেতনের মেঠো রাস্তার ছবি। বসন্তে বাঙালির গন্তব্যের অন্যতম ঠিকানা এই শান্যিনিকেতন। কারনটা অবশ্যই এককথায় বসন্ত উৎসব। এই বসন্তেই রঙ ও আবিরে রাঙা হয়ে ওঠে কবিগুরুর শান্তিনিকেতন। বাতসের মধ্যে সুরেলা কণ্ঠে ভেসে ওঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত “ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগল যে দোল” শুরু হয় বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎসবের।
শ্রীকৃষ্ণের হাত ধরে বৃন্দাবনে শুরু হয়েছিল দোল উৎসব। কিন্তু তা যে ঠিক কবে শুরু হয়েছিল তা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসবের সূত্রপাত ঘটে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে। শান্তিনিকেতনে প্রথম বসন্ত উৎসব উদযাপিত হয়েছিল ১৯২৫ সালে। তখন থেকেই নিজে হাতে এই উৎসবের এক অতুলনীয় সুর বেঁধে দিয়েছিলেন কবিগুরু। আজও তার অন্যথা হয়নি বা কোথাও গিয়ে এক ফোঁটাও ম্লান হয়নি বাংলার এই উৎসবের ঐতিহ্য। পৌষ উৎসব পেরিয়ে যাওয়ার পর থেকেই ধীরে ধীরে বসন্ত উৎসবের আবহ গড়ে উঠতে শুরু করে শান্তিনিকেতনে। সকলে অপেক্ষা করে ফাল্গুনী পূর্নিমার। প্রস্তুতি শুরু হয় বহু আগে থেকেই, শেষের দিকে আর ফাঁকা পাওয়া যায়না কোন হোটেলেও ঘরও।
{ads}
বসন্ত উৎসবের দিন সকাল থেকেই আবিরে রাঙা হয়ে ওঠে শান্তিনিকেতনের রাস্তা। উৎসব হয় মূলত বিশ্বভারতীর মূলচত্বর ঘিরে। নাচ গান সহ নৃত্যনাট্য, একাধিক অনুষ্ঠানে মোহময় হয়ে ওঠে শান্তিনিকেতনের পরিবেশ। বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীরা তো থাকেই তার সাথে বাইরে থেকেও এসে বহু যুবক যুবতী অংশগ্রহন করে উৎসবে। উৎসব উপলক্ষ্যে বিদেশ থেকেও আসেন বহু মানুষ।
এবারে করোনার আবহে হয়ত কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে উৎসবের ছন্দে। তবুও বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ সামলে উঠেছে অনেকটাই। আবারও একবার আবিরের রঙে রঙিন হওয়া বসন্ত উৎসবের সাক্ষী হতে অধীর আগ্রহও কমেনি এক ফোঁটাও। আবারও একবার “ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল…” দিয়ে শুরু করে রবীন্দ্রসঙ্গীতের আবহে শেষ মুহুর্তের “রাঙিয়ে দিয়ে যাও, যাও যাওগো এবার যাওয়ার আগে…” এই মুহুর্ত যেন হাত বাড়িয়ে ডাকছে বাংলার মানুষকে।