মধ্যবিত্ত পরিবারে থেকেও নিজের প্রতিটা স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব, করা সম্ভব বিশ্বজয়। টাকা পয়সা দিয়ে নয় শুধু মাত্র জ্ঞান ও আধত্মাতিক গুণের অধিকারী হয়ে রাজ করেছিলেন বিশ্ববাসীর ওপরে। তিনি আর কেউ নন যুগ যুগ ধরে যুব সম্প্রদায়ের অনুপ্রেরণা আমাদের সকলের প্রিয়, বাংলার ঘরের ছেলে নরেন। তাই এই ১২ ই জানুয়ারি দিনটিকে জাতীয় যুব দিবস হিসাবে চিহ্নিত করেছে এবং পালিত হয় গোটা দেশ জুড়ে। জাতীয়তা ও আন্তর্জাতিক এই দুটি শব্দকে একই সুতোয়ে বেঁধেছিলেন তিনি। ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্তেও মানসিকভাবে ছিলেন বিশ্বনাগরিক। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের অধিবাসী তাঁর ভাই ও বোনের মত। ১৮৯৩ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর আমেরিকার শিকাগোর আন্তর্জাতিক ধর্ম সভায় তিনি তার বক্তৃতা শুরুতেই বলেছিলেন –“সিস্টার অ্যান্ড ব্রাদারস অফ আমেরিকা”, যে বাক্য শোনার পর সভার কান ফাটানো হাত তালির শব্দের কথা উঠলে আজও গর্বে ফুলে ওঠে বাঙালি সহ সমগ্র ভারতবাসীর বুক।
আমি বাংলা খুব ভালো একটা বলতে পারিনা বা বুঝতে পারিনা- এই কথাটি অনেককে প্রায় গর্বের সাথে বলতে সোনা যায়। কেন তার উত্তর সঠিক জানা নেই কিন্তু এই বাংলাভাষাকেই বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করে বিশ্বের নজির গড়েছেন বহু লেখক। স্বামী বিবেকানন্দ সেই অর্থে কোন সাহিত্যিক ছিলেন না ঠিকই, কিন্তু বাংলাভাষাকে পরিশোধিত রুপদানে তাঁর অবদান অপরিহার্য। বাংলা গদ্যের গতিরুপ নির্মাণ করেছিলেন, ঘটিয়েছিলেন প্রবন্ধের মাধ্যমে বাংলা ভাষার আধুনিকরন। বাঙালি মনোজগতকেও সঠিক দিশা দেখাতেই তিনি বাংলা সাহিত্যে অংশ নিয়েছিলেন। সাহিত্য, দর্শন, ও ইতিহাসের প্রতিও তিনি ছিলেন যথেষ্ট অনুরক্ত। শুধু সাহিত্য বা ভাষার দিকে নয়, তিনি আধত্মাতিক দিকদিয়ে জগতকে দেখেছিলেন। সঙ্কীর্ণ সাম্প্রদায়িক বোধবুদ্ধিই মানবসমাজকে বারে বারে বিপর্যয়ের মূখে ঠেলে দিয়েছে, এই সত্যটি উপলব্ধি করেছিলেন বলেই ধর্মান্ধতা দূর করে সংস্কার মুক্ত মানবতা যুক্ত এক সমাজ ব্যাবস্থা গড়ে তূলতে চেয়েছিলেন নরেন্দনাথ। যে কাজে তিনি সহায় হিসাবে গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন যুব সম্প্রদায়কে। ওনার কাছে নারী ও পুরুষ সবাই সমান ছিল। তাই তৎকালীন সমাজের উন্নতির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেছিলেন “জগতের কল্যাণ স্ত্রী জাতির অভূদ্যয় না হইলে সম্ভবনা নাই”
মানুষের সেবাই যে ঈশ্বরের সেবা সেই বার্তা যে মানুষ রূপী ভগবান আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছেন সামনের ১২ই জানুয়ারী তার ১৫৮ তম জন্মবার্ষিকী। যার করা ভবিষ্যৎ বানী আজও প্রতি মুহূর্তে মিলে যাচ্ছে বর্তমান সময়ে মানুষের এগিয়ে চলা জীবনের সাথে। স্বামীজির দেখানো সূত্র আজও আমাদের এগিয়ে চলার দিশা দেখায়, তার জীবনকাহীনি আমাদের প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধ করে জীবনে হার না মেনে এগিয়ে চলার মন্ত্রে। বিশ্বব্যাপী খ্যাতি ও সারা বিশ্বের দরবারের এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাম হয়ে উঠলেও নরেন কিন্তু আজও প্রতিটা বাঙালির হৃদয়ে তাদের ঘরের ছেলের মতোই অবস্থান করছেন। বাংলার মানুষ সেই শিকাগো ধর্মসভায় বক্তৃতা দেওয়া স্বামীজিকে যেমন ভালোবাসে তেমনই ভালো বাসে গাছতলার বন্ধুদের সাথে খেলতে থাকা ছোট্ট নরেনকেও।
{ads}