header banner

কলকাতা ও ট্রামকথা

article banner

“চল রাস্তায় সাজি ট্রামলাইন, আর কবিতায় শুয়ে কাপ্লেট…” অটোগ্রাফ সিনেমায় শ্রেয়া ঘোষালের গাওয়া এই গান হয়ত কিছুটা হলেও বর্ননা করে কলকাতার রাস্তার সাথে ট্রাম লাইনের সম্পর্ক। কলকাতার সাথে ট্রামের সম্পর্ক ১৪৭ বছরের পুরোনো। সেই সম্পর্কই আজও আব্যাহত রেখে কলকাতার উপর দিয়ে এক পুরোনো প্রেমিকের ন্যায় ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছে ট্রাম। প্রতিনিয়ত সময়ের সাথে বয়ে চলা এই ঐতিহ্যবাহী গল্পের সাক্ষী হয়ে রয়ে যাচ্ছে এই শহরবাসী।
কলকাতা ও ট্রামের এই গল্পের সূত্রপাত ইংরেজ আমলে, লর্ড কার্জনের হাত ধরে কলকাতায় প্রথম ট্রাম চালু হয় ১৮৭৩ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি। আর্মেনিয়া ঘাট থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত ৩.৯ কিলোমিটারের যাত্রাপথে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম চালু হয় এই ট্রাম। কিন্তু যাত্রীর অভাবে  বন্ধ হয়ে যায় এই পরিষেবা। এরপরে ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কম্পানি নামে একটি লন্ডন ভিত্তিক কম্পানি কলকাতায় আবার ট্রাম পরিষেবা চালু করে। এই সময় ঘোড়ায় টানা ট্রাম ব্যাবহার করা হত। ট্রাম কম্পানির হাতে সেই সময়ে ১৭৭টি ট্রাম ও ১০০০টি ঘোড়া ছিল। তারপর ট্রাম চালানোর জন্য স্টিম ইঞ্জিন ব্যাবহার করা হত। এরপর ১৯০২ সালে এশিয়ার প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রাম পরিষেবা চালু হয় কলকাতায়। উনিশ শতক থেকে বিশ শতকের মধ্যে ভারতে ক্রমশ প্রসারিত হতে শুরু করে ট্রাম লাইনের মানচিত্র। সেই সময় করাচি চেন্নাই দিল্লী, কানপুর, পাটনা প্রভৃতি যায়গায় ট্রামের পরিষেবা চালু হলেও পরে তা ধীরে ধীরে উঠে যায়। ট্রামের অস্তিত্ব থেকে যায় শুধুমাত্র তিলোত্তমার মাঝে, এবং তা সদর্পে আজও বিরাজমান। 
বর্তমান সময়ে কলকাতা আর ট্রামের সম্পর্ক আব্যাহত থাকলেও সেই প্রেমের বাঁধন আজ যেন বয়সের টানে অনেকটাই আলগা হয়ে পড়েছে। এখন কলকাতার রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় কমবেশি ৩০টি ট্রাম, কলকাতার রাস্তায় আগে এই প্রায় ছয়গুন বেশি ট্রাম নিত্য যাতায়াত করত। বন্ধ হয়ে গেছে একাধিক ট্রামলাইন, যেগুলি চলছে তাও যেন কেমন মনমরা। বর্তমানে ওলা উবের থেকে দ্রুত গতিতে ছুটে চলা মেট্রো রেলের যুগে তীব্র বেগে ছুটে চলা মানুষকে নিয়ে একটু ধীর গতিতেই চলাফেরা করে ট্রাম। তাই হয়ত আজকের দিনে সে তার প্রানবায়ু যাত্রীদের অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে। চলতি ট্রামের অধিকাংশ সিটই আজ ছোঁয়া পায়না যাত্রীর। তবুও তিলোত্তমার রাস্তায় ট্রামের ঢং ঢং করে দেওয়া ডাক না শুনলে শহরকেও যেন ভীষনভাবে একা একা লাগে। ভিক্টোরিয়া কিংবা সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালের মতো এই শহরের এক ঝাঁপি ঐতিহ্য নিজের সঙ্গে করে বয়ে নিয়ে চলেছে এই ট্রাম ও ট্রামলাইন। ধীর গতিতে হলেও পরিবেশেরও কোন ক্ষতি না করে তারও খেয়াল রাখতে জানে সে। তাই শহরবাসি হয়ত কখনোই চাইবে না শহরের কাছ থেকে তার এই সবচেয়ে কাছের একজন বন্ধুকে। সবশেষে আবেদন একটাই, এ পৃথিবীতে তিলোত্তমার অস্তিত্ব যতদিন ততোদিন যেন রাস্তায় ট্রামলাইওনও তার গল্প লিখে যেতে পারে। তিলোত্তমা ও ট্রামের এই প্রেমকে অমরত্ব দান করার কর্তব্য দিনের শেষে কিন্তু সেই শহরবাসীর হাতে।
যদি এ জন্মে এই ভালোবাসার শহরে ট্রামের অস্তিত্ব কে মনে গভীর ভাবে যায়গা দিতে এক জন্ম লেগে যায় তাহলে আবার দেখা হবে কোন এক ট্রামলাইনে এক অজানা ট্রামের দুই জানলার দুই ধারে…    
{ads}

Tram Kolkata News History Tredition Lord Curzon West Bengal India

Last Updated :