“আশ্বিনেরও শারদপ্রাতে…”-এই দুই শব্দের মূল্য বাঙালির কাছে যে ঠিক কতোখানি তা শব্দের মধ্যে দিয়ে বর্ননা করা সম্ভব নয়। আর এই শরৎকাল মানেই বাঙালির কাছে যে দুই ছবি ভেসে ওঠে তা হল কাশফুল ও আকাশে ভাসতে থাকা পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। এই কাশফুল মানেই বাঙালির কাছে একটা আবেগ। কিন্তু কেন? বিশ্বকর্মা পুজোর ক্ষেত্রেও রয়েছে এর বিপুল মাহাত্ম।
বিশ্বকর্মা পুজোর অত্যাবশ্যকীয় অন্যতম পুজোপকরণ হল কাশফুল। এদিন চড়া দরে কাশফুল কিনে অর্পণ করা হয় শিল্পের দেবতাকে। জ্যোতিষশাস্ত্র বিশারদদের মতে, বিশ্বকর্মাকে কাশফুল নিবেদনের ফল হয় মঙ্গলদায়ক।
{link}
প্রতি বছর ভাদ্র সংক্রান্তিতে পুজো হয় দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, স্বর্গ নির্মাণ করেছিলেন তিনিই। যমপুরী, কুবেরপুরী সবই বহন করে তাঁর অসাধারণ কীর্তির স্বাক্ষর। উপবেদ, স্থাপত্য বেদ ও চতুঃষষ্ঠীকলার প্রকাশকও বিশ্বকর্মা। রামায়ণে বর্ণিত অপূর্ব শোভা ও সম্পদ বিশিষ্ট লঙ্কানগরীও বিশ্বকর্মার হাতে তৈরি বলে লোকবিশ্বাস।
বিশ্বকর্মার আশীর্বাদেই শিল্পীরা নির্মাণ করেন বিমান কিংবা ব্রিজ, কল-কারখানা কিংবা যন্ত্রপাতি। শাস্ত্র মতে, বিশ্বকর্মার জ্ঞান অগাধ। ঋগ্বেদে বিশ্বকর্মাকে সর্বদর্শী ও সর্বজ্ঞ বলা হয়েছে। হিন্দু শাস্ত্র মতে, তিনি ভক্ত কল্পতরু। ভক্তি সহকারে তাঁর আরাধনা করলে মানুষ লাভ করে কারিগরি বিদ্যা, স্থাপত্যবিদ্যা, উপবেদের অগাধ জ্ঞান। উন্নত ভবিষ্যৎ, কাজের নিশ্চয়তা, কর্মক্ষেত্রে সাফল্য এবং নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যও বহু মানুষ আরাধনা করেন দেবশিল্পীর। সেই কারণেই কলকারখানা থেকে শিল্পস্থান সর্বত্রই ঘটা করে পুজো হয় দেবশিল্পীর। বিশ্বকর্মার চার হাত। বাহন হাতি। কোথাও কোথাও তাঁর বাহন ঘোড়াও। তবে বিশ্বকর্মার সেই রূপের পুজো সর্বত্র হয় না। কোথাও তিনি তারুণ্যের প্রতীক। কোথাও আবার তিনি ‘বৃদ্ধ’।
যে রূপেই দেবশিল্পীর আরাধনা হোক না কেন, জ্যোতিষীদের মতে, বিশ্বকর্মাকে সাদা ফুল দিয়ে পুজো করলে বেশি ফল মেলে। শ্বেতপদ্ম দিয়ে দেবশিল্পীর আরাধনা বিশেষ মঙ্গলদায়ক। এই শ্বেতপদ্মের পাশাপাশি বিশ্বকর্মাকে নিবেদন করতে হয় কাশফুল। জ্যোতিষীদের মতে, দেবশিল্পীর পায়ে কাশফুল নিবেদন করলে সৌভাগ্য ফেরে। সমাজতাত্ত্বিকদের মতে, যেহেতু ভাদ্র সংক্রান্তিতে পুজো হয় বিশ্বকর্মার, এই সময় মাঠেঘাটে ফোটে কাশফুল। তাই কাশফুল নিবেদন করার প্রথা। তা হলে, কাশফুল মানেই কিন্তু শুধু ছবি তোলা আর দুর্গাপুজোর আগমনী নয়, মনে থাকবে তো?
{ads}