header banner

থামল মরোক্কর ঐতিহাসিক দৌড়, কাতারে ফাইনালে মেসির সামনে এমবাপের ফ্রান্স

article banner

নিজস্ব সংবাদদাতা: কিলিয়ান এমবাপে, ফ্রান্সের হয়ে ২০১৮ সালে কার্যত বিদ্যুতের ঝলক দেখিয়েছিলেন মাঠে। ২০২২-এও অব্যাহত সেই 'ইলেকট্রিক বয়'-এর দূরন্ত ফুটবল। ২০০৬-এর পর কোন চ্যাম্পিয়ন দল তাদের পরবর্তী বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বও টপকাতে পারেনি, তবে কাতারের মঞ্চে তা পেরেছে ফ্রান্স। শুধু তাই নয়, ফাইনালে সামনে ট্রফি রিটেইন করার হাতছানি। সেমিফাইনালে ফ্রান্সের দাপুটে জয়ে ভঙ্গ হল মরোক্কর আফ্রিকান রূপকথার। দূরন্ত লড়াই শেষে তারা হার মানল ফ্রান্সের কাছে। নির্ধারিত সময়ে খেলা শেষ হয় ২-০ ব্যবধানে। চ্যাম্পিয়নস দের সামনে এখন পুনরায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন। 

'অ্যালেজ লেজ ব্লুজ!' ফ্রান্স ফুটবল সমর্থকদের স্লোগান, যার ইংরাজি অর্থ গো ফ্রেঞ্চ টিম। সেমিফাইনালে খেলার শুরুতে কার্যত নিজেদের শুরুটাও খানিকটা এহেনই করেন কিলিয়ান এমবাপে রা। ফ্রান্স, শেষ বারের চ্যাম্পিয়ন দল, সেমিফাইনালে নিজেদের গোল করতে সময় নিল মাত্র ৫ মিনিট। শুরু থেকেই হাই প্রেসিং আক্রমন। এমবাপের নেওয়া শট রিবাউন্ড হয়ে এসে পড়ে থিও হার্নান্ডেজের পায়ে। ঠাণ্ডা মাথায় সেই বল হোল্ড করে অ্যাক্রোব্যাটিক শটে মরোক্কর গোলকিপারকে পরাস্ত করেন তিনি।  ম্যাচে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ১৭ মিনিটে জিরুর নেওয়া শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। সুযোগ মিস করে আফসোসে জার্সি কামড়ে ধরেন দূরন্ত ছন্দে থাকা অভিজ্ঞ ফরাসি স্ট্রাইকার। এরপর গোলের সুবর্ন সুযোগ আসে ৩৫ মিনিটে, টুচামেনির পাস থেকে এমবাপের মারা শট হাকিমির পায়ে ক্লিয়ার হয়। সেই লুজ বল থিও হার্নান্ডেজ সোজা বাড়িয়ে দেন জিরুর পায়ে। সম্পূর্ণ ফাঁকা অবস্থায় কোন মার্কিং ছাড়াই বল পেয়েও তা গোলে রাখতে পারেননি তিনি। প্রথমার্ধের একেবারে শেষের দিকে কার্যত কাতারের মঞ্চে সেরা স্বপ্নের গোল পোস্টে আটকে যায় মরোক্কর খেলোয়াড় এল ইয়ামিকের। কর্নার থেকে ক্লিয়ার হয়ে আসা বলে গোলবক্সের সামান্য ভিতর থেকে নিখুঁত ব্যাকভলি করেন তিনি। কিন্তু স্বপ্নের শট আটকে যায় পোস্টে।  প্রথমার্ধের খেলা শেষ হয় ১-০ স্কোরলাইনেই। 

যদিও দ্বিতীয়ার্ধে শুরু থেকেই ম্যাচে ফেরার জন্য প্রানপন ঝাঁপায় মরোক্ক। সম্পূর্ন খেলার দখল নিয়ে নেয় মরোক্কর খেলোয়াড়েরা। তবে খেলায় নিজেদের ছন্দ খুঁজে পেলেও হচ্ছিল না মূল বিষয়টিই, গোল। বারংবার মরোক্কর একাধিক আক্রমন আটকে যাচ্ছিল ফ্রান্সের গোলবক্সের সামনেই। ফ্রান্সের রক্ষন কোনভাবেই ভাঙতে পারছিলেন না হাকিম জিয়েচ রা। তাদের স্বপ্নের মূল রাস্তার উপর কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন উপেমেকানো, কুণ্ডে রা। সারা ম্যাচ জুড়ে দূরন্ত খেলেছেন রক্ষনের নিদর্শন দিয়েছেন উপেমেকানো, মেন্ডির মতো খেলোয়াড়েরা। তার উপর ফ্রান্সের এই ম্যাচে 'কী প্লেয়ার' গ্রিজম্যান। একসময় ইতালিও খেলোয়াড় আন্দ্রে পির্লোর খেলা দেখে ক্রীড়া বিশেষজ্ঞেরা বলতেন, 'যেখানে বল, সেখানেই পির্লো' আজ মাঠে কার্যত সেই ভূমিকাতেই ছিলেন গ্রিজম্যান। একাধিক মরোক্কর আক্রমনের শীড়দাঁড়া ভেঙে দেওয়া ছাড়াও ম্যাচে দুরন্ত প্লে মেকিং খেলোয়াড়ের দক্ষতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তিনি। তবে ৭৯ মিনিটে মরোক্কর কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দেওয়ার কাজটি করেছেন সেই এমবাপ্পে। প্রথমে বল রিসিভ করে অনবদ্য টার্নে নিজের মার্কিং কে বোকা বানিয়ে বক্সের ভিতর তিন, চার জন খেলোয়াড়কে ডচ করে কার্যত গোলের পাস সাজিয়ে দেন পরিবর্ত হিসেবে নামা রন্ডাল কোলো মুয়ানি কে। গোল করতে ভুল হয়নি তার। সুযোগ এসেছিল মরোক্কর কাছেও, তবে অতিরিক্ত বল হোল্ড করার খেসারত দিতে হল তাদের, কোনভাবেই খোলা গেল না, ফ্রান্সের গোলের মুখ। ২-০ গোলে জিতে ফাইনালে চ্যাম্পিয়নসরা।

খেলা শেষের কিছু আগে থেকেই চোখে জল দেখা যায় একাধিক মরোক্ক সমর্থকদের চোখে। দলের অদম্য লড়াইয়ের মনোভাব যেন তখনও তাদের মন কে মানতে দিচ্ছিল না, যে বিদায় আসন্ন। সারা ম্যাচ জুড়ে পুনরায় নজর কেড়েছে মরোক্কর লড়াই, হার না মানা মনোভাব। যা কার্যত চোখে পড়েছে সমগ্র টুর্নামেন্ট জুড়েই। যে ইতিহাস তারা কাতারের মঞ্চে তৈরি করে গেছেন, তা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাবে সমগ্র আফ্রিকা ও এশিয়াকে। অন্যদিকে ফ্রান্সের ও তাদের ট্রফির মাঝে এখন শুধুই মেসি ও আর্জেন্টিনা।  কে হবে চ্যাম্পিয়ন? 

{ads}

News football Morocco France FIFA World Cup সংবাদ

Last Updated :