নিজস্ব সংবাদদাতা: কাতার বিশ্বকাপে ফের রচনা হল আরও এক এশীয় রূপকথার। ইরানের দুরন্ত লড়াইয়ের সামনে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হল নিয়তি। ম্যাচের সময় তখন ৯০ মিনিট পেরিয়ে একেবারে অতিরিক্ত সময়ের শেষের দিকে, একাধিকবার বারপোস্টে লেগে ফিরে এসেছে বল। নিজেদের সবটুকু দিয়ে তখন নিজেদের গোল রক্ষা করছে ওয়েলস। একের পর এক আক্রমণ আটকে যাচ্ছে ফাইনাল পাসের আগে কিংবা গোলকিপারের হাতে। মরিয়া লড়াই চলছে গোল করার। এইরকম সময়েই গোলবস্ক থেকে ক্লিয়ার হয়ে আসা বল বাঁ পায়ে রিসিভ করে ডান পায়ের দুরন্ত শটে বক্সের বাইরে থেকে বল জড়িয়ে দিলেন জালে। রউইসবে চেসমি, শুধু গোল করলেন না, স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজারও ইরানি দর্শকের চোখে স্বপ্নের আনন্দ অশ্রু এনে দিলেন। যেন বার্তা দিলেন, বড়ো মঞ্চে আমরাও পারি। কাতার বিশ্বকাপে একটা দেশ, যার প্রথম ম্যাচে মহিলাদের পোশাক পরনের স্বাধীনতা না দেওয়ার প্রতিবাদে খেলোয়াড়েরা জাতীয় সংগীত উচ্চারন করেননি, প্রতি ম্যাচে হাতে ব্যানার নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন একাধিক ইরান সমর্থক, সেই দেশের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে এনে দিলেন উৎসবের আনন্দ।
{link}
যদিও ম্যাচের শুরু থেকেই লড়াকু মনোভাব নিয়েই খেলা শুরু করেছিল ইরান। ৪-৪-১-১ ফর্মেশনে দল সাজিয়েছিলেন ইরানের কোচ কার্লোস কুয়েইরোজ। একাধিক সুযোগ পেলেও উল্লেখযোগ্যভাবে কোন দলই গোল করতে পারেনি। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র ৯ সেকেন্ডে ব্যাবধানে দুইবার পোস্টে লেগে বল ফিরে আসে ইরানের। কিন্তু ম্যাচের মূল টার্নিং পয়েন্ট ৮৬ মিনিট। সারা ম্যাচ ধরে দুরন্ত ছন্দে থাকা ওয়েলসের গোলকিপার হেনেইসি বক্সের বাইরে ফিফটি ফিফটি পজিশনে বাজে ফাউল করে বসেন। রেফারি প্রথমে হলুদ কার্ড দিলেও, ভার প্রযুক্তি দেখে এসে লাল কার্ড দেন। ওয়েলস ১০ জনে হয়ে যাওয়ার পরেই আক্রমণে আরও চাপ বাড়ায় ইরান। কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের গোল আসে অতিরিক্ত সময়ের ৮ মিনিটে। খেলায় সমতা ফেরাতে মরিয়া ঝাঁপায় ওয়েলস। সেই মুহূর্তেই পুনরায় কাউন্টার অ্যাটাকে দক্ষতার সাথে দলকে ২-০ গোলে এগিয়ে দেন রহিম রেজিয়ান। গোলকিপার ও ডিফেন্ডার উপর দিয়ে ডান পায়ের ছোট্ট টোকায় অসামান্য ফিনিশ করেন তিনি।
{link}
সৌদি আরব, জাপানের পর আজকে ইরান। কাতার বিশ্বকাপ কার্যত স্বপ্নপূরনের বাস্তব মাটি হয়ে উঠেছে এশিয় দেশগুলির কাছে। তবে ওয়েলসের স্টার খেলোয়াড় গ্যারেথ বেল-এর দিকে আজ স্পটলাইট থাকলেও তাকে কার্যত সেইভাবে খেলার সুযোগই করতে দেয়নি ইরান। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বড়ো ব্যাবধানের হারের পর প্রত্যাবর্তনের লড়াইয়ের নিদর্শন তৈরি করল ইরান। তাদের এই জয় দেশজুড়ে কিছুটা হলেও আনন্দ ফিরে আনতে সক্ষম হবে…
{ads}