তথাগত ঘোষঃ ম্যাচের সময় তখন ৬৯ মিনিট, প্রাক্তন লিভারপুল খেলোয়াড় কুটিনহোর গোলে ম্যাচে ২-০ গোলে লিড ন্যায় অ্যাস্টন ভিলা। সমস্ত স্টেডিয়ামে তখন ম্যাঞ্চেসটার সিটির সমর্থকদের মুখে হতাশার ছাপ। হারের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে স্টেডিয়াম জুড়ে। যদিও লিগের খেতাবের জন্য লড়াই করতে থাকা লিভারপুলও তখন ড্র করছে নিজেদের ম্যাচ। ৬৯ মিনিটে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পরেও একটা দূরন্ত কামব্যাকের যে ম্যাচ আজ সমগ্র ফুটবল বিশ্ব আজ দেখল তা এককথায় ঐতিহাসিক। সেই কামব্যাকের সুবাদেই অ্যাস্টন ভিলা কে ৩-২ গোলে পরাজিত করে লিগ টাইটেল নিজেদের নামে করল ম্যানচেস্টার সিটি। যে কৃতিত্বের দাবিদার অবশ্যই কোচ পেপ গুয়ার্দিওলার তো বটেই। কারন তার করা সাবস্টিটিউট ইকের গুন্দোয়ানের করা জোড়া গোলের সুবাদেই আজ ট্রফি এসেছে সিটির ক্যাবিনেটে। যে সাবস্টিটিউট কে ইতিমধ্যেই বিশেষজ্ঞেরা সাবস্টিটিউট অফ দ্যা সিজেন বলে অভিহিত করছেন।
{link}
আজ একটা রুদ্ধশ্বাস পরিসমাপ্তি দেখার উদ্দ্যেশ্যেই সমগ্র বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা আজ চোখ রেখেছিল প্রিমিয়ার লিগে। প্রিমিয়ার লিগও হতাশ করেনি, এক ঐতিহাসিক ও রুদ্ধশ্বাস পরিসমাপ্তি হয়েছে ২০২১-২২ সিজেনের। আজ লিগের শেষ ম্যাচে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিটি ও লিভারপুলের পয়েন্টের পার্থক্য ছিল মাত্র ১। দুই দলই মরিয়া হয়ে ঝাঁপায় ট্রফির জন্য। সিটি প্রথম ধাক্কা খায় ম্যাচের ৩৯ মিনিটে ১-০ গোলে লিড ন্যায় অ্যাস্টন ভিলা। খেলায় নিয়ন্ত্রণে থাকলেও প্রথমার্ধে গোল করতে ব্যার্থ হয় গুয়ার্দিওলার সিটি। দ্বিতীয়ার্ধেও খেলার শুরু থেকেই চাপ বাড়াতে শুরু করে ফিল ফোডেন রা। যদিও অ্যাস্টন ভিলার প্রতি আক্রমনও বেশ চাপ সৃষ্টি করছিল সিটির ডিফেন্সে। ম্যাচের ৬৯ মিনিটে কুটিনহোর গোলে ২-০ গোলে লিড ন্যায় তার দল। দেখে মনে হচ্ছিল সিটি ক্যাবিনেটে ট্রফি ঢোকানোর রাস্তা বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর স্টিভেন জেরার্ড ও তার দল। ম্যাচের ৬৮ মিনিটে সমতা ফেরানোর লক্ষ্যে বার্নার্দো সিলভাকে তুলে পেপ গুয়ার্দিওলা মাঠে পরিবর্ত হিসেবে নামিয়েছিলেন ইকের গুন্দোয়ান কে। এই পরিবর্তনই সিটিকে ফিরিয়ে আনে ম্যাচে। ৭৬ মিনিটে রহিম স্টার্লিং-এর ভাসানো বল দুরন্ত হেড দিয়ে জালে জড়িয়ে দেন গুন্দোয়ান। তার দুই মিনিটের মধ্যেই ফের চমক। ৭৮ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শটে খেলায় সমতা ফেরান রদ্রি। স্কোরলাইন ২-২ হওয়ায় আরও প্রানবন্ত হয়ে ওঠে সিটির পাসিং ফুটবল। ৮১ মিনিটে গোল করে সিটিকে ম্যাচে ৩-২ গোলে এগিয়ে দেন সেই গুন্দোয়ান। তবে তৃতীয় গোলটির ক্ষেত্রে কেভিন দে ব্রুইনের অ্যাসিস্টের তারিফ না করে পারা যায় না। যদিও তিনটি গোলের ক্ষেত্রেই তার গুরুত্বপূর্ণ যোগদান ছিল। কেন তাকে প্রিমিয়ার লিগের প্লেয়ার অফ দ্যা টুর্নামেন্ট এর খেতাব দেওয়া হয়েছে এবং কেনই বা তাকে বর্তমান সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্লে মেকার বলা হয় তা আরও একবার প্রমান করেছেন তিনি। ৩-২ স্কোরেই শেষ হয় খেলা।
খেলার শেষের বাঁশি বাজতেই উল্লাসিত সিটির দর্শকেরা ঢুকে পড়েন স্টেডিয়ামের মধ্যে। জল দেখা যায় কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা সহ একাধিক প্লেয়ারদের চোখে। দূরন্ত লড়াই শেষে তাদের প্রাপ্য সম্মান পেয়েছেন তারা। অন্যদিকে জয় এলেও ট্রফি এলো না লিভারপুলের ঘরে। এতিহাদ স্টেডিয়ামে যেন আরও একবার ফিরে এলো সেই ২০১১ সালে আগুয়েরোর ৯৩:২০-র রুদ্ধশ্বাস পরিসমাপ্তির স্মৃতি। শেষ ৫ বছরের মধ্যে ৪ বছর লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পেপ গুয়ার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি। আজ ফুটবল আরও একবার প্রমান করল তার শ্রেষ্ঠত্ব। এই মুহূর্তগুলির সাক্ষি হওয়ার জন্যেই তো বেঁচে থাকে বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবল ভক্তেরা।
{ads}