header banner

দেবীর নামে বানিজ্য তরির সমস্ত সম্পত্তি, আজও স্বমহিমায় বিষ্ণুপুরে জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো

article banner

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁকুড়াঃ পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটা অংশের মাটির ভিন্ন ভিন্ন ইতিহাস বর্তমান। সেই ইতিহাসের একাধিক কোনায় কোথাও তিনশো, কোথাও পাঁচশো বা কোথাও তারও বেশি সময় ধরে অংশ হয়ে রয়েছেন দেবী দুর্গা। দুর্গাপুজোর সময় এলেই একাধিক গ্রাম কিংবা শহরাঞ্চলের ঐতিহাসিক বাড়ির সাথে জড়িয়ে থাকা অবিশ্বাস্য সমস্ত গল্প শোনা যায় প্রৌড়দের গলায়। বঙ্গভূমীর ইতিহাসও তার একাধিক অংশে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের কথা বর্ননা করে। 

{link}
সাল ১৭১২-৪৮, বিষ্ণুপুরের গোপাল সিংহ ও চৈতন্য সিংহের আমল। ঠিক সেই সময় বর্ধমানের নীলপুর গ্রাম থেকে ভাগ্যান্বেষণে বেরিয়ে বর্তমান পাত্রসায়রের হদলনারায়নপুর গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন জনৈক মুচিরাম ঘোষ। জনশ্রুতি, নীলের ব্যবসা করে মণ্ডলরা তখন বেশ ফুলে ফেঁপে উঠেছেন। ঠিক সেই সময় নীল বিক্রি করে প্রচুর ধন সম্পদ নিয়ে বজরায় করে গ্রামে ফেরার পথে কোন এক জায়গায় জল দস্যুদের কবলে পড়েছিলেন মণ্ডল বাড়ির তৎকালীন এক সদস্য। জল দস্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন উপায় না পেয়ে দেবী দুর্গার স্মরণাপন্ন হন তিনি। মানত করেন বেঁচে ফিরলে বজরায় থাকা যাবতীয় সম্পত্তি দুর্গা র নামে দেবোত্তর করে দেবেন। পরে তিনি সুস্থ শরীরে বাড়ি ফিরে এলে ওই বজরায় থাকা সমস্ত ধন সম্পদ দিয়ে বিশাল দুর্গা দালান, রাস মঞ্চ, রথ মন্দির, নাট মন্দির, নহবত খানা তৈরি করে মানত শোধ করেন। এমনকি বংশ পরম্পরায় পুজা পরিচালনার  জন্য বহু জমি ও পুকুর কিনে সেগুলি দুর্গা র নামে দেবোত্তর করে দেন। এক দিকে নীল কুঠির বিপুল আয় অন্যদিকে বিশাল জমিদারির খাজনায় ফুলে ফেপে ওঠে রাজকোষ। প্রত্যাশিতভাবে তার প্রভাব পড়ে দুর্গোৎসব পরিচালনাতেও। সেই সময় পুজোয় টানা সাত দিন নহবৎ খানায় বসত নহবৎ। দুর্গা মন্দির সহ সমস্ত মন্দির সাজানো হত বেলজিয়াম গ্লাসের বিশাল বিশাল ঝাড়বাতিতে। বসতো পুতুল নাচের আসর, হতো যাত্রাপালাও। দুর্গা পুজার প্রতিটি নির্ঘণ্ট ঘোষিত হত তোপ ধ্বনির দ্বারা। দূর দূরান্তের অসংখ্য মানুষ আর প্রজারা হাজির হতেন মণ্ডলদের জমিদারবাড়িতে। 

{link}
আজ আর নেই সেই নীল কুঠি, নেই জমিদারীও। সময় ও ইতিহাসের সাক্ষি হয়ে দাঁড়িয়ে বিশাল জমিদার বাড়ি। কিন্তু বর্তমান সময়েও বিশাল দেবোত্তর সম্পত্তির আয়ে দুর্গা পুজায় আয়োজনের ত্রুটি রাখেন না মণ্ডল বাড়ির বর্তমান প্রজন্ম। আজও পুজো এলেই মণ্ডল জমিদারবাড়ির নহবৎ খানায়  বেজে ওঠে সানাই।  ভাঁড়ার ঘর থেকে পুরানো দিনের সেই ঝাড়বাতি বের করে তার ধুলো ঝেড়ে দুর্গাদালানে টাঙ্গানো হয়। এমনকি কর্মসূত্রে দেশ বিদেশে ছড়িয়ে থাকা পরিবারের সদস্য রা আজও  পুজোর দিন গুলিতে পূর্ব পুরুষের ভিটেয় ছুটে আসেন শুধুমাত্র ইতিহাস কে আরো একবার ছুঁয়ে দেখার লোভে। মা আসছেন বাড়িতে, ফিরে তো আসতেই হবে।

{ads}

news Durga Puja History Bankura Zamindar West Bengal সংবাদ

Last Updated :

Related Article

Care and Cure 1

Latest Article