header banner

কমছে আকর্ষন, স্মার্টফোনের যুগের মোহে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী সার্কাস

article banner

সুদেষ্ণা মন্ডল, দক্ষিন ২৪ পরগনা: একটা সময় ছিল যখন বাঙালির শীত মানেই পিঠে-পুলি আর সার্কাস। দিন বদলেছে। পাল্টে গিয়েছে বিনোদনের মাধ্যম। কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘরে বসে নতুন ওয়েব সিরিজ দেখাই এখন ট্রেন্ড। আর শতাব্দী প্রাচীন সার্কাস শিল্প এখন হয়ে উঠেছে হারানো নস্টালজিয়া।

{link}
শীতের মরসুম এলেই সারা দেশের সার্কাসের দল এসে তাঁবু ফেলত কলকাতার পার্কসার্কাস, মার্কাস স্কোয়্যার, টালা পার্ক, সিঁথির মোড়ের বড় বড় ময়দানগুলিতে। রঙিন তাঁবু, ঝলমলে আলোয় সেজে থাকত ডিসেম্বরের শহর।একুশ শতক বদলে দিয়েছে বিনোদনের রসদ। স্মার্টফোনের বাড়বাড়ন্ত, নিত্যনতুন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে সার্কাস শিল্পের দিকে। এখন ইচ্ছে হলেই তো সবই হাজির হয়ে যায় মুঠোফোনের ছোট্ট স্ক্রিনে। তার মধ্যেই যেন কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দিয়েছে কোভিড পরিস্থিতি। বিনোদনের বহু মাধ্যমের মাঝে টিকে থাকার লড়াই চালাচ্ছে সার্কাস শিল্প। কিন্তু সেটাও আর কত দিন! এ প্রশ্ন ভাবাচ্ছে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার মানুষকে। সীমান্ত ডেকার মতো সার্কাস শিল্পীরা সংসার চালাতে বেছে নিচ্ছেন অন্য পেশা।

{link}
গত ২০০০ সালের পর শুধুমাত্র ভারতবর্ষেই ১৭টির বেশি সার্কাস কোম্পানি তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। | ওই বছর বা তার আগে পর্যন্ত সার্কাসগুলি অতি জনপ্রিয় ছিল। একটা সময় সার্কাসের জীবনকথা নিয়ে তৈরি সংখ্যা। সেই জায়গায় করে নিয়েছে আধুনিক সার্কাসে আগের জৌলুস কমাতে দু-একটি তাঁবু পড়লেও গ্রামগঞ্জে আর দর্শক টানে না। বিদেশে যেখানে ধনা নাইমানের আসর। যেমন করে হারিয়ে একপ্রকার প্রায় বন্ধ করেছেন বেশিরভাগ মানুষজন। আর সেই আকর্ষণ কমেছে বাঘ, সিংহ, বাঁদর, ভালুক সহ জীবেদের সংরক্ষণের জন। সার্কাসের কারনে খাঁচা বন্দি শিশুদের উপর অত্যাচার বন্ধ করিয়েছে সরকার। এখানেই হারিয়েছে একটি বড়ো অংশ। এটাই বাস্তব। এই বাস্তব বুঝেই সার্কাস কোম্পানিগুলি পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে। 

{link}
আগে যেখানে ১০-১২ জন মিলে সার্কাসে জোকারের ভূমিকা পালন করত এখন সেখানে একজন। লিন্টন দাস বলেন, আগে যেখানে সার্কাসে ১০- ১২ জন মিলে জোকার সেজে দর্শকদের আনন্দ দিতাম সেখানে এখন আমি একা! মনটা ভালো নেই, ভালো লাগছে না কিন্তু তেইশ বছর ধরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত আমি। স্মার্টফোনের যুগে মানুষ সার্কাসের দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ডায়মন্ড সার্কাস এর ম্যানেজার মাধব বাবু ।  তিনি জানান, আমরা গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে শীত পড়লেই সারকাজ নিয়ে যেতাম। ২০০২ সালে বহু মানুষ সার্কাসের টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতো। কিন্তু সেই চিত্র অনেকটাই বদলেছে। সার্কাসে এখন টিকিট বিক্রি হয় না। যদিও হাতে গোনা কয়েকটি টিকিট বিক্রি হলেও সার্কাস দেখতে আসা দর্শকেরা বলে সার্কাসের আগের মতন জৌলুষ আর নেই বিভিন্ন পশুপাখির খেলা সেটি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। এখন আমাদের সেই ভরসা আফ্রিকান শিল্পীরা। বিদেশীদের ওপর ভরসা করে এখন সার্কাস চালাচ্ছি আমরা। সার্কাসের আগামী ভবিষ্যৎ কি হবে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না সরকার যদি মুখ তুলে না থাকায় তাহলে এই বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম সার্কাস হারিয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে আরও একটি সংস্কৃতির ঐতিহ্য়। হারিয়ে যাবে কয়েক লাখ মানুষের ছেলেবেলা ও তার স্মৃতি। 
{ads}

news Circus West Bengal Culture সংবাদ

Last Updated :