সুদেষ্ণা মন্ডল, দক্ষিন ২৪ পরগনা: বসন্ত এসে গেছে। চারদিকে কোকিলের কুহু কুহু রব। ধূলো মেশানো বাতাস। আর বসন্ত মানেই রঙীন আবিরে নিজেদের রাঙিয়ে নেওয়া। যে আবিরে আপামর বাঙালি সমাজ রাঙিয়ে তুলবে নিজেদের, তা তৈরীতে এখন ফুরসৎ নেই আবির তৈরীর কারখানার শ্রমিকদের। গত দু'বছরে করোনার জেরে আবির ব্যবসায় আর্থিক ধাক্কা খাওয়ার পর এবছর স্বাভাবিক হতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার আবির ব্যবসায়ীরা । প্রয়োজনের সঙ্গে জোগান দিতে প্রস্তুত আবির কারখানার শ্রমিকরাও।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজারের আচনা গ্রামে নাওয়া খাওয়া ভুলে শেষবেলায় আবির তৈরিতে ব্যস্ত শ্রমিকেরা। বাহারী রঙ এবং সুগন্ধি মিশিয়ে তৈরী করা হচ্ছে বিভিন্ন রঙের আবির। আবির তৈরীর পর তা প্যাকেটজাত করা হচ্ছে যুদ্ধ কালীন তৎপরতায়। প্রসিদ্ধ আচনা গ্রামের সুগন্ধী আবির পাড়ি দেয় জেলা সহ গোটা রাজ্যের বাজারে । করোনা মহামারীর পর সাধারণ মানুষের মধ্যে হোলির চিত্রটা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। রংয়ের বদলে মানুষ বেশি ঢলে পড়েছে আবিরে। কেমিক্যাল যুক্ত রঙে ত্বকের ক্ষতি হয় সেই জন্য রংয়ের চাহিদা আগের থেকে অনেকটাই কমে গিয়েছে এমনটাই মনে করছে ব্যবসায়ীরা। বাজারে এখন ভেষজ আবীর ও সুগন্ধি আবিরের চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে । প্রয়োজনের সাথে বাজারে যোগান দিতে তাই এখন নাওয়া খাওয়া ভুলে আবির তৈরিতে ব্যস্ত কারিগরেরেরা । তাই গোটা আচনা গ্রামে এখন চরম ব্যস্ততা।
{link}
এই প্রসঙ্গে আবির প্রস্তুতকারী কৃষ্ণেন্দু পুরকাইত বলেন, "দু'বছর করোনার জেরে ব্যবসা খুবই খারাপ। তেমনভাবে কোনও অর্ডার আসেনি। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই এ বছর আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে ব্যবসা । ইতিমধ্যেই কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছে অর্ডার। তাই দিনরাত এক করে কাজ চলছে। রং-এর তুলনায় আবিরের চাহিদা অনেক বেশি । রাসায়নিক মেশানো রং-এ মানুষের ত্বকের অনেক সমস্যা হয় । কিন্তু আমাদের এই আবির ব্যবহার করলে ত্বকের কোনও সমস্যা হয় না। আমরা এখানে মোট সাতটি রংয়ের আবির তৈরি করি । তবে এটা মাত্র কয়েকটা মাসেরই ব্যবসা। বসন্ত উৎসব শেষ হয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যাবে আবির তৈরির কাজ । আবার আমরা চাষবাসে ফিরে যাব।
এদিকে আবার জমে উঠেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলার রং-এর বাজার। বিভিন্ন বাজারগুলিতে রংয়ের পসার সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত দু'বছর তেমন ব্যবসা হয়নি। বড়সড় ব্যবসায় লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়েছে। বাজারে আবার পসরা সাজিয়ে বসেছে রংয়ের ব্যবসায়ীরা। মানুষের মধ্যে রং এর তুলনায় আবিরের চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে। কিন্তু আবিরের দাম প্রায় আকাশ ছুঁয়েছে। গত দু'বছর আগে যে আবির ১০-১৫ টাকা শয়ে বিক্রি হতো সেই আবির এবছর বিকোচ্ছে ১৫-২০ টাকায়। করোনার মহামারি কেটে গেলেও মানুষের আবার নতুন করে মাথা ব্যাথার কারন হয়ে গিয়েছে এডিনো ভাইরাস। ইতিমধ্যেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বেশ উপরে । সেই নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসনও। যদিও বসন্ত উৎসবে এই ভাইরাসের কোন প্রভাব পড়বে না এমনটাই মনে করছে সাধারণ মানুষজন । বসন্ত উৎসবে নানান রঙের ছোঁয়ায় মেতে উঠবে আপামোর বাঙালি।
{ads}