header banner

লক্ষ মানুষের মাঝে হারিয়ে গিয়েও ফিরে আসা যায়, গঙ্গাসাগরে ত্রাতার ভূমিকায় হ্যাম রেডিও

article banner

সুদেষ্ণা মন্ডল , গঙ্গাসাগর:-  সব তীর্থ বারবার কিন্তু গঙ্গাসাগর একবার। এবছর গঙ্গাসাগরে প্রায় ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ পুণ্য লাভের আশায় ভিড় জমিয়েছে। যদ্দূর চোখ যায় মানুষের  থিকথিকে ভিড়। আর বিভিন্ন জায়গা থেকে মাইক থেকে ভেসে আসছে  রাজিব যোশী,(৭০) ঠিকানা ঝাড়খণ্ড। গৌরী কাপুর বয়স ৬৫, জব্বলপুর মধ্যপ্রদেশ। রুপম পাণ্ডে, বয়স ৬৫, নদীয়া। চোঙার আওয়াজ ভিড়ে মিশে যায় হারিয়ে যাওয়া লোকগুলোর মতো। প্রতি বছর গঙ্গাসাগর মেলায় পূণ্য অর্জনে এসে হারিয়ে যান বহু মানুষ। পুলিশ-প্রশাসন, মেলা কমিটির অনুসন্ধান কেন্দ্রে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকেন কেউ। কেউ আবার দিগ্‌ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ান। কার অত সময় আছে জনে জনে মানুষ খোঁজার! কিন্তু ওঁরা খোঁজেন। বাতাসে ইথার তরঙ্গে ভর করে ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের ৩৯জন সদস্য মেলা শুরুর দিন থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে খুঁজে বের করেন। নেহাতই স্বেচ্ছাশ্রম, শখের রেডিওর ব্যবহারের নেশা থেকে। নীল রঙের টি শার্ট, তাতে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ‘হ্যাম’। সবার হাতে একটা করে ভিএইচএফ (ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি) ওয়াকিটকি।

কচুবেড়িয়া, লট ৮, নামখানা, চেমাগুড়িতে হোগলা পাতার ঘরে হ্যাম রেডিওর কন্ট্রোল রুম। মূল কন্ট্রোল রুমটি গঙ্গাসাগরে প্রশাসনিক কার্যালয়ের পাশে। পুলিশ বা জেলা প্রশাসনের ওয়্যারলেস ব্যবস্থা গোটা গঙ্গাসাগর মেলা জুড়ে ঠিকমতো কাজ করে না কখনওই। ফলে কোথায় যানজট, কোথায় বেশি ভিড়, কোথায় কে আহত হল, জলের ট্যাঙ্ক ফাঁকা হল বা কল নষ্ট হয়ে আছে এ সব তথ্যই প্রশাসন আর মেলা কমিটির কাছে দ্রুত পৌঁছোচ্ছে হ্যাম রেডিও মারফৎ। যেহেতু মোবাইল পরিষেবাও এখানে দুর্বল তাই বহু ক্ষেত্রে প্রশাসনিক যোগাযোগেও সাহায্য করছে হ্যাম।গঙ্গাসাগরে এই নিয়ে ২৪ বছর হয়ে গেল ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের।  বিভিন্ন সময়ে প্রকৃতিক  বিপর্যয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন এই শখের রেডিও অপারেটররা। নিজেদের তৈরি করা অ্যান্টেনায় বাতাসের গতি প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উচ্চ তরঙ্গে ভর করে কথা পৌঁছে যায় দূর থেকে দূরে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হ্যাম সদস্যদের কাছে। এরপর হারানো মানুষকে খোঁজার কাজটা নেহাতই তাঁদের নজরদারি আর প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব।

বাকি সব ক্ষেত্রে সরকারী স্বীকৃতি মিললেও গঙ্গাসাগরের এই স্বেচ্ছাশ্রমের কোনও স্বীকৃতি পাননি হ্যাম রেডিও এই স্বেচ্ছাকর্মীরা। ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের কর্তা অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস জানান, গঙ্গাসাগর মেলায় এসে বহু পুণ্যার্থীরা নিজের দের আপন জনে  কাছ থেকে হারিয়ে তাদের কে পুনরায় আমরা পরিবারের সাথে মিলন ঘটাই। প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন মানুষ কে তাঁদের পরিজনের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছি ।যাঁদের বাড়ির লোকদের খোঁজ এখনও মিলছে না অথচ তাঁরা অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছে সেখানে অন্য কেউ দায়িত্ব নিতে না চাইলে আমাদের সদস্যরা বন্ড সই করে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করাচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসন যদি তাঁদের সহযোগী হিসাবে আমাদের স্বীকৃতি দিত আরও উৎসাহ পেতাম।এক হারিয়ে যাওয়া পুণ্যার্থী জানান, আমরা একদল ঝাড়খণ্ড থেকে এসেছিলাম স্নান করার সময় আমি আবার দলের কাছ থেকে হারিয়ে যায় ।আমি খুব খোঁজাখুঁজি করেছি কিন্তু কোন মতে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বাড়িতে ফেরার বিষয় দিয়ে আমি খুব সংকোচের মধ্যে ছিলাম হঠাৎ করে শুনতে পাই মাইকে আওয়াজ আবার নাম ধরে কেউ ডাকে।আমি সেই  আওয়াজের অনুসন্ধান করি ও তথ্য কাছ থেকে আমার হারিয়ে যাওয়া দলের সাথে  আবার হারিয়ে যাওয়া দলের কাছে।আমি খুশি।
 

news Gangasagar Ham Radio West Bengal সংবাদ

Last Updated :