সুদেষ্ণা মন্ডল, গঙ্গাসাগর: মকর সংক্রান্তির পূর্ণ লগ্নে শনিবার ভোর রাত থেকে গঙ্গাসাগর বেলাভূমিতে ভিড় করেছে কয়েক লক্ষ মানুষ। রবিবার সকাল থেকে গঙ্গাসাগরে চলছে চলছে পূণ্যের ডুব। মোক্ষ্য লাভের আশায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গঙ্গাসাগরে ভিড় জমিয়েছে মানুষজন। কার্যত গঙ্গাসাগর এখনো হয়ে উঠেছে মিনি ভারত। সাগরের জলে সার দিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে কয়েক জন। সিক্ত বসন, হাত জোড় করে তাকিয়ে রয়েছেন জলরাশির দিকে। একটু দূরে কোমর জলে দাঁড়িয়ে আরও কয়েক জন। হাত জোড় করে আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করছেন। আলো ফুটতে না-ফুটতেই ক্রমশ বাড়তে লাগল ভিড়। সবারই লক্ষ্য, সাগরসঙ্গমে ডুব দিয়ে পূণ্যলাভ।
{link}
মকর সংক্রান্তির শাহি স্নানের তিথি শুরু হয়েছে শনিবার সন্ধ্যা থেকে শাহী যোগ থাকবে রবিবার বিকেল পর্যন্ত। মকর সংক্রান্তিতে তিল ধারনের জায়গা নেই গঙ্গাসাগর সমুদ্র সৈকতে। গঙ্গাসাগরের স্নান ঘাট এক, দুই, তিন নম্বর.. সব রাস্তাতেই পুণ্যার্থীর ঢল চলেছে সাগর স্নানে। ভিড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নজরদারির দায়িত্বে থাকা কর্মীদের গলার স্বর। তাঁদের মুখে অবিরত শোনা গিয়েছে, ‘আগে চলিয়ে, আগে চলিয়ে’ নির্দেশ। সকালের আলো তত ক্ষণে ফুটে গিয়েছে। ভিড়ও তখন দ্বিমুখী। এক দল সাগরস্নানে ছুটছেন। অন্য দল স্নান সেরে কপিল মুনির মন্দিরের রাস্তা ধরেছেন। পরনে ভেজা জামাকাপড়। কারও কারও মাথায় পুঁটলি। ক্রমশ ভিড় এমনই বেড়েছে যে স্নান সেরে ২ নম্বর রাস্তা ধরে মন্দিরে পুজো দিতেই কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে গিয়েছে। ভিড়ের চরিত্রও ছিল রঙিন। এক দিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দেহাতি মানুষেরা, অন্য দিকে খোল, করতাল নিয়ে বিদেশি পুণ্যার্থীরা। দুপুরে ভিড় সামান্য কমেছিল বটে। শনিবার সন্ধ্যায় শাহি স্নানের যোগ শুরু হতেই ঢল নেমেছে মন্দির থেকে সাগরের মধ্যবর্তী তল্লাটে।
{link}
ভিড়ে অবশ্য বেগও পেতে হয়েছে পুণ্যার্থীদের। মধ্যপ্রদেশ থেকে এ বছরই প্রথম গঙ্গাসাগর এসেছেন এক তীর্থযাত্রী। তীর্থযাত্রী দিন জানান,চারধাম ঘুরে এখানে এসেছি। পুজো সেরে আজই বেরোনোর কথা। কিন্তু কখন যে বেরবো সেটাই বুঝতে পারছি না। ভিড় সামলাতে গঙ্গাসাগরে তৎপর পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা। বিপদ ঠেকাতে সক্রিয় আছে উপকূলরক্ষী বাহিনীও। জলপথে স্পিড বোট এবং জলযান নিয়ে চলছে নিরন্তর নজরদারি। প্রতি বছরের মতোই মেলা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত নজরদারি চলবে। গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে শনিবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুলক রায়, অরূপ বিশ্বাস, সুজিত বসু, ইন্দ্রনীল সেনের মতো রাজ্যের মন্ত্রীরা। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এ বছর ৩৯ লক্ষ পুণ্যার্থী সাগরে এসেছেন। অতিমারি পর্ব পেরিয়ে এই ভিড় ‘দেশের মিলন ভূমি’ বলেই দাবি করেছেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা। মকর সংক্রান্তিতে ইতিমধ্যে গঙ্গাসাগরে এসে পৌঁছেছে ৪০ লক্ষ মানুষ। সমুদ্র সৈকতে ধ্বনিত হচ্ছে জয় কপিল মনি কি জয়। পূণ্যতীর্থ গঙ্গাসগরের এই ছবি বাস্তবিকভাবেই মনমুগ্ধকর।
{ads}