“অল্পেতে খুশি হবে দামোদর শেঠকি, মুড়কির মোয়া চাই চাই ভাজা ভেটকি”- মাছ সম্পর্কে নিজের লেখায় একসময় এভাবেই ছন্দ মিলিয়েছিলেন বাঙালির প্রানের কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এটা ছাড়াও আরও বহু মাছ সম্পর্কিত কবিতার পরিচিত রয়েছে বাঙালির ঘরে ঘরে। যেমন- “খোকা গেল মাছ ধরতে ক্ষীর নদীর তীরে” কিংবা “গলদা চিংড়ির তিংরি মিংরি” একসময় বাঙালি শিশু ও তাদের দাদু ঠাম্মার মুখে সর্বদাই ঘোরাফেরা করত এইসব ছড়া। আজ ধীরে ধীরে কালের গ্রাসে সেই সব ছড়া হারাতে শুরু করলেও কিন্তু সিকিভাগও কমেনি বাঙালির মৎসপ্রেম। “ধুর মাছ না হলে আবার ভাত খাওয়া যায় নাকি?”- এই কথা প্রায় প্রতি ঘরের মানুষের নিত্যসঙ্গি। তাই “ভেতো বাঙালি”-র সাথে বাঙালির সঙ্গে বহুদিন আগে “মেছো বাঙালি”-র শিরোনামও যুক্ত হয়েছে। বাদ পড়েনি ভূতের সম্প্রদায়ও।
সেই মাছ প্রিয় বাঙালিদের জন্যেই এ যেন সাক্ষাৎ চাঁদের হাট। বসেছে মেলা, মাছের মেলা। যেদিকেই চোখ যায় চোখে পড়ছে চেনা অচেনা নানান ধরনের মাছ। বড় সাইজের কই, এমন ভেটকি দেখাই যায় না, রয়েছে কাতলা, বোয়াল আরও কত কি। এ যে সে মেলা নয়, বিরাট মাছের মেলা। কাঁকড়া, চিংড়ির সঙ্গেই পাওয়া যায় ইলিশ, কাতলা, ভেটকি, পারসে বাটা, আড় ও বোয়াল সহ বর্তমানে না দেখা বহু মাছ। শুধু মাছ কিনে যাওয়া নয়, মাছ কিনে মাঠের পাশেই বনভোজনে বসে পড়েন বহু মানুষ, চারিদিকে তৈরি হয়েছে একটা পিকনিকের আমেজ। হুগলি জেলার ব্যান্ডেলের দেবানন্দপুরের কৃষ্ণপুরে এই মেলা বসে প্রতি বছর। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মেলাটি ৫১১ বছরের পুরানো। কথিত আছে বহু বছর আগে গোস্বামী পরিবারের ছেলে রঘুনাথ দাস গোস্বামী ২৪ বছর বয়সে সন্ন্যাস নিয়েছিলেন। তার পর তিনি যখন প্রথম বাড়ি ফিরেছিলেন তখন তাঁর জন্য বিশেষ রান্নার ব্যবস্থা করা হয়। মাছের নানা পদ তৈরির জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ গোস্বামী বাড়ি সংলগ্ন মাঠে মাছমেলার আয়োজন করেছিলেন। দিনটি ছিল পয়লা মাঘ। তার পর থেকে প্রতি বছর মাঘ মাসের প্রথম দিনই একদিনের মাছ মেলা বসে। সকাল থেকে শুরু করে মেলা চলে রাত পর্যন্ত। মাঠ সংলগ্ন মন্দিরে চলে পুজোর কাজ। সারা দিন ধরে চলে বিকিকিনি।
মাছের সন্ধানে সারাক্ষনই বাজার জুড়ে রয়েছে বিপুল মানুষের সমাগম। সবাই এসে নিজেদের পছন্দমতো মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বাজার থেকে। ক্রেতা ও বিক্রেতা, খুশি দুই পক্ষেরই মানুষজন।
{ads}