সাল ১৯৪৩, ৩রা ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ ঠিক ৭৮ বছর আগে আজকের দিনেই সাধারন মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল রবীন্দ্র সেতু। রবীন্দ্র সেতু নামটা একটু অপরিচিত ঠেকতে পারে কারন ১৯৬৫ সালের ১৪ই জুন সেতুটির পূর্ব নাম পরিবর্তন করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে সেতুটির নাম রাখা হয় রবীন্দ্র সেতু। সেতুটির পূর্ব নাম হাওড়া ব্রিজ, যে নামেই আজও সেতুটি জনসাধারনের কাছে পরিচিত। হুগলী নদীর উপর অবস্থিত এই সেতু কলকাতা ও হাওড়ার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ন যোগসূত্র। দৈনিক ৮০,০০০ যানবাহন এবং প্রায় ১০ লক্ষ্যের কাছাকাছি মানুষ এই ব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করে। কিন্তু এই ব্রিজটি দ্বিতীয় হাওড়া ব্রিজ, এবং এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে বিপুল ইতিহাস।
বর্তমানে যে হাওড়া ব্রিজ হুগলী নদীর উপরে অবস্থিত তা আদপে নিউ হাওড়া ব্রিজ। কারন যে ব্রিজটি বর্তমানে রয়েছে সেটি একটি বহির্বাহু সেতু যা অনুমোদিত হয়েছিল ১৯৪৩ সালে। এর পূর্বে এই একই স্থানে একটি ভাসমান সেতু ছিল। ১৮৭১ সালে বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কথায় একটি ট্রাস্ট তৈরি হয় সেই ট্রাস্টের অধীনেই প্রথম ভাসমান সেতু নির্মিত হয়। স্যার ব্র্যাডফোর্ট লেসলির তৈরি করা নকশায় তৈরি হয়েছিল পুরোনো হাওড়া ব্রিজ। ব্রিজটি ছিল ১৫২৮ ফুট লম্বা এবং ৪৮ ফুট চওড়া। জাহাজ বা স্টিমার যাতায়াত করার সময় সেতুটি মাঝবরারবর ২০০ ফুট খুলে দেওয়া যেত।
পরে ১৯০৬ খ্রীষ্টাব্দে একটি নতুন বহির্বাহু সেতু নির্মান করার প্রস্তাব দেওয়া হয় বন্দর কতৃপক্ষের থেকে। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার ফলে সেই কাজে বাঁধা পড়ে। পরে ১৯২১ সালে স্যার রাজেন্দ্রনাথ মজুমদার কে নিয়ে একটি কমিটি গড়ে তোলা হয়। পরামর্শ নেওয়া হয় বিশিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার বেসলি মট-এর। তিনিই প্রথম ‘সিঙ্গেল স্প্যান আর্চড’ ব্রিজ নির্মানের প্রস্তাব দেন। ১৯২২ সালে আর এন মুখার্জী কমিটি চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করে। প্রযুক্তিগত ভাবে এমন ব্যাবস্থা নেওয়া হয় যাতে অনায়াসে সেতুর নীচে দিয়ে জাহাজ ও স্টিমার যাতায়াত করতে পারে। ১৯২৬ সালে “দ্যা নিউ হাওড়া ব্রিজ অ্যাক্ট” পাশ হয়। ১৯৩৫ সালে সেই আইন সংশোধিত হয় এবং ১৯৩৬ সালে সেই ব্রিজ নির্মানের কাজ শুরু হয়। সেই ব্রিজই আজও বুক ফুলিয়ে দন্ডায়মান হয়ে আছে হুগলী নদীর উপর।
কলকাতার কথা উঠলেই যেমন চোখের সামনে ভেসে ওঠে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কিংবা সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালের তেমনই হাওড়ার কথা উঠলেই চোখের সামনে হাওড়া স্টেশনের সাথেই ভেসে ওঠে হাওড়া ব্রিজের ছবি, যা হাওড়াকে এক আলাদা পরিচিতি প্রদান করেছে। হাওড়ার বহু ঐতিহ্য বহন করে চলেছে এই সেতুটি। যেখানে বর্তমানে সমস্ত এইরূপ নির্মানগুলির স্থায়িত্বগত কাঠামো ও ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সেখানেই ৭৮ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও আজও কার্যত নিজের যৌবন নিয়ে সদম্ভে দন্ডায়মান এই সেতু। যা সহ্য করে নিতে পারে যে কোন বঙ্গোপসাগরীয় ঝড়ঝাপটার প্রবল আঘাতকে। তাই আজকের দিনে হাওড়া তথা বঙ্গের গর্ব এই সেতুকে শুভ জন্মদিন না জানিয়ে পারা যায় কি?
{ads}