পরিস্থিতি যেমনই হোক মাথার ওপরে ছাদ থাকাটা ভীষণ জরুরি। প্রথমে মহামারী তারপর ভয়াবহ ঝড়ের তাণ্ডব। সব মিলিয়ে প্রায় এক দুর্বিষহ ব্যাপার হয়ে উঠেছে পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলা। এ যেন ঠিক মনে করিয়ে দেই ডারউইনের “জীবন সংগ্রাম”-এর সেই সুত্র। কিন্তু এত প্রতিকুলতার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলা মোটেও চারটিখানি কথা নয়। আর সেটা যদি একা হয়, তাহলে লড়াই আরো কঠিন হয়ে ওঠে। স্বামীর মৃত্যুর পরও প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে একাকী জীবনে গোয়াল ঘরে গবাদি পশুদের নিয়ে জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলেছেন মালদহের চাঁচলের ১ নং ব্লকের ভগবানপুর জিপির দক্ষিণ কালীগঞ্জ গ্রামের নিঃসন্তান বয়স্কা অসহায় চিত্রা দেবী। কিন্তু আমফান এসে সেই মাথার ওপরের ছাদটাও কেড়ে নিয়েছে। ঝড়ের সাথে উড়ে গেছে ছোট্ট কুটিরের বেড়া ও টিনের ছাউনি। দুবেলা ঠিক মতো খাবার জোটেনা, সেই খেত্রে বাড়ি মেরামত এই মুহূর্তে কল্পনারও অতীত।
এর পূর্বে অভাব নিয়েই এই দম্পতি ছোট্ট কুটীরে বসবাস করতেন। এই লকডাউন ওনার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে ওনার একমাত্র জীবনসাথীকেও। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তিনি। তারপর থেকে পেটের জ্বালা মেটাতে গবাদি পশু পালন শুরু করেছিলেন। বর্তমানে উপার্জনকারি বলতে রয়েছে একমাত্র গাভি গুলি। দুধ বিক্রি করে কোনোমতে জোটে একবেলার আহার , এক এক দিন রাত্রে না খেয়েই শুয়ে পড়তে হয়। এই প্রবল ঠাণ্ডাতে হিমেল বাতাস ঢুকে পড়ছে ছোট্ট কুটিরে। চিত্রা দেবির জীবন যন্ত্রণা এতো বেশী যে ওনার মতে যদি এই গবাদি পশু গুলো না থাকতো তাহলে হয়তো ওনাকে আত্মহত্যার মতো খারাপ পদক্ষেপ নিতে হত। নিজস্ব শৌচাগার নেই, গোটা গ্রামের সবাই গ্যাস সিলিন্ডারে রান্না করলেও চিত্রা দেবীকে মাটির উনুনে ফুটিয়ে রান্না করতে হচ্ছে আহার। ওনার ঘড়ের আনাচে কানাচে অভাবের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
স্বামীর মৃত্যুর পর কেটে গেছে দীর্ঘ আট মাস। কিন্তু এসে পৌঁছায়নি কোনোরকম সাহায্যের হাত। আবেদন ,অভিযোগ করলেও মেলেনি সমব্যাথি প্রকল্পের টাকা বা বিধবা ভাতা। তিনি দুঃখের সহিত যানান যে তিনি যথা সময়ে মতো আবেদন করেছিলেন এবং ওনার নামও তলিকার অন্তর্ভুক্ত ,তা স্বত্বেও আসেনি সেই টাকা। এমনকি আবাস যোজনারও সুবিধা এসে পৌছায়নি তার কছে। কবে মিলবে আবাস, সমব্যথী, ভাতা,সেটাই এখন দেখার বিষয়।“দুয়ারে সরকার” কি এখণও খবর পায়নি, নাকি কেউ খবর দেয়নি। সংবাদ মাধ্যমকে এও জানিয়েছেন যে তিনি এরপর স্বাস্থসাথীর জন্যও আবেদন করবেন। দ্রুত যেন তিনি সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা পেতে পারেন সেই বিষয় নিয়ে স্থানীয় বধু প্রভা মন্ডল, সবিতা মণ্ডল সহ গোটা গ্রামবাসী দাবি জানিয়েছেন এবং বলেছেন ওনারা চিত্রা দেবীর পাশে রয়েছেন। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য নাজিমুল হক জানিয়েছেন , সমব্যাথি প্রকল্পের টাকা পঞ্চায়েতে ঢুকলেই তা হাতে পেয়ে যাবেন চিত্রা দেবি এবং বিধবা ভাতার আয়ত্তাধীনে আনার জন্য পরিকল্পনা ছলছে, এছাড়াও ওনাকে ঘর পাইয়ে দেবারও দ্রুত প্রচেষ্টা চলছে।
নেই বিধবা ভাতা, নেই মাথার ওপরে ছাদ, পাননি সমব্যাথি প্রকল্পের টাকা। ভোট দেবেন কি? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে চিত্রা দেবী যানান, দেশের নাগরিক আছি, ভোট দেওয়া আমার গন্তান্ত্রিক অধিকার। ভোট আমি দেবই ,তবে কাকে দেব তা এখনো স্থির করিনি। হারিয়েছেন নিজের জীবনের একমাত্র সঙ্গীকে, মাথার উপরের ছাদটিও ভগ্নপ্রায়। পেটে খাবার পড়েনা দুবেলা, সঙ্গী বলতে সাথের ওই গরু বাছুরগুলি। এহেন অবস্থাতে যখন মাঝে মাঝে মনে আত্মহত্যার চিন্তাও দেখা দেয়, এহেন অবস্থাতেও তিনি ভাবেন দেশের কথা, ভোট দেওয়ার কথা, একজন নাগরিকের কর্তব্যের কথা। কিন্তু সরকার তার জন্য ভাবে কি?