header banner

গ্রামের এক কোনের কুঁড়েঘরে আজও যায় শোনা...

article banner

পিঠাকে ঘিরে পল্লী মায়ের কোল কবিতায় বাংলাদেশের কবি বেগম সুফিয়া কামাল লিখেছেন,
“পৌষ পার্বনে পিঠা খেতে বসি খুশীতে বিষম খেয়ে
আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে” 

-বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর পৌষ মাসের পৌষ পার্বণের জন্য অপেক্ষারত প্রত্যেক বাঙালী। টাটকা তাজা নলেন গুড়ের সাথে ভাপা পিঠে জমিয়ে তোলে শীতের সন্ধ্যেটাকে। হেন কোন বাঙালী নেই যিনি উপভোগ করেন না এই উৎসব। কিন্তু আধুনিক যন্ত্র সভ্যতার মাঝে কোথাও যেন হারিয়ে যাচ্ছে মা-দিদিমার হাতের সেই পিঠের স্বাদ। আগে পিঠে পুলি উৎসব মানে সারা গ্রাম বাংলার ঘরের মা, বউরা মেতে উঠতেন ঘর সাজিয়ে লক্ষ্মীর পুজোর আয়জনে। সারা বাড়িতে নতুন ধানের আগমনকে স্বাগত জানিয়ে শুরু হয় পৌষপার্বণ। আগে এই পিঠেপুলির উৎসবের সময়ে যেটার খোঁজ সবার আগে পড়ত তা হল ঢেঁকি। কাঠের  বিশালাকৃতি এই যন্ত্রের তৈরি চাল গুঁড়ি ছাড়া ভোজনরসিক বাঙালির পিঠের স্বাদ যে পূরণ হয় না। প্রায় ‘ন’ থেকে দশ রকমের পিঠে গড়ে উঠত। আর এই ঢেঁকি যেন এই আধুনিক সভ্যতার সাথে পা মিলিয়ে চলতে না পেরে প্রায় বিদায় জানাবার পথে। সেই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি যে এখনও নিরুদ্দেশ হয়ে যায়নি, তার প্রমান পাওয়া গেল বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর শহর সংলগ্ন চক্রবর্তী বাড়ি গ্রামে। ঐ গ্রামে পৌঁছাতেই কানে ধপাধপ শব্দ এলো নিকানো উঠান থেকে। চোখে পড়ল গ্রামের মহিলারা চালের গুঁড়ি তৈরি করছেন ঢেঁকিতে। রাত পোহালেই ছিল পৌষপার্বণের সুচনা। খুব জোরদার ভাবেই এগোচ্ছে প্রস্তুতি। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তারা গুঁড়িয়ে চলছে চাল। এখন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগে এখনও এত কষ্ট করে চাল গুঁড়োনোর কথা বলতে ওনারা বললেন, থাকতে পারে নতুন যন্ত্রাদি হয়তো তা দিয়ে কমসময়ে চাল গুঁড়ানো সম্ভব,এছাড়াও বাজারে চাল গুঁড়ি কিনতেও পাওয়া যায় কিন্তু সেই চালগুঁড়ির তৈরি পিঠে টেক্কা দিতে অক্ষম হাতে গুঁড়নো চালের তৈরি পিঠেকে। ওনারা স্পষ্ট বললেন কেনা চালের তৈরি পিঠে হয় চটচটে। আর স্বাদও তেমন উন্নত মানের নয়। আর অপরদিকে হাতে তৈরি পিঠের যেমন অতুলনীয় স্বাদ আছে তেমনই তার রূপের বাহার। ঢেঁকি দিয়ে চাল গুঁড়িয়ে শুধু পরিবারের জন্য পিঠে তৈরি করছেননা বাঁকুড়ার ওই গ্রামের মহিলারা সাথে দুপয়সা আয় করে সংসারের লক্ষ্মী সচল রাখারও প্রচেষ্টা করছেন।

প্রায় অগ্রাহান মাসের পর শেষ থেকেই ওনারা শুরু করেন ঢেঁকিতে চাল গুঁড়োতে। এই চালগুঁড়ি ওনেক দূর দূর থেকে লোকেরা এসে কিনে নিয়ে যান। মাঘ মাস পর্যন্ত পাওয়া যায় এই চাল গুঁড়ি। কিন্তু বর্তমান সমাজেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে শুরু করেছে গ্রামবাংলার এইরূপ ঐতিহ্যগুলি। এই সকল গ্রামবাংলার ঐতিহ্য কি তবে আজ বিলুপ্তির পথে, একসময় প্রতি ঘরে ঘরে যার অস্তিত্ব বজায় ছিল, সেই কালের গ্রাসে পড়ে আজ সেই ঐতিহ্য তার অস্তিত্ব বজায় রাখার লড়াইয়ে। পরিস্থিতি মনে করিয়ে দিচ্ছে রবি ঠাকুরের গানের কয়েকটা লাইন,”যখন পড়বেনা মোর পায়ের চিহ্ন এই বাঁকে, তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে…” এখানেও চিত্রটা ভবিষ্যতে এইরকমই হয়ে দাঁড়াবে না তো? 

{ads}
 

Makar Sankranti Pithe Puli History Villages Beauty of Bengal Cultures of Bengal Bengali Culture Bankura West Bengal India

Last Updated :