শেফিল্ড টাইম্স ডিজিটাল ডেস্ক : গ্রামের নাম 'মাস্টারপাড়া' ৷ কারণ, এই গ্রামে শিক্ষকদের বসবাস ৷ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন স্কুলে চাকরি করতেন তাঁরা ৷ কিন্তু, সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) রায়ের পর ফিকে হয়ে গিয়েছে সেই নাম ৷ চাকরি হারিয়ে সর্বস্বান্ত বহু শিক্ষক ৷ ভবিষ্য়তে কী হবে, জানা নেই কারও ৷ জমি বাড়ি বিক্রি করে 'চাকরি কিনেছিলেন' গ্রামের বহু ছেলেমেয়ে । স্থানীয় বাসিন্দা চন্দন মণ্ডলের হাতে টাকা পৌঁছে দিতে পারলেই চাকরি পাকা ৷ তাঁর মাধ্য়মেই উত্তর 24 পরগনার বাগদা থানার মামা-ভাগ্নে গ্রামের বহু ছেলেমেয়ে চাকরি পেয়েছিলেন ।
{link}
একটা সময়ের পর গ্রামের নাম হয়ে যায় 'মাস্টারপাড়া' ৷ বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে সেই গ্রামের কয়েকশো ছেলেমেয়ের ৷ নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে গ্রামের প্রতিটি রাস্তায় ৷ এমনকী, হাঁড়িও চড়েনি অনেকের বাড়িতে ৷চাকরি দুর্নীতি নিয়ে প্রথম হাটে হাঁড়ি ভেঙেছিলেন প্রাক্তন সিবিআই কর্তা তথা তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক উপেন বিশ্বাস ৷ চন্দন মণ্ডলকে তিনি নাম দিয়েছিলেন 'সৎ রঞ্জন' ৷ একটা সময়ে সকলেই জানাতেন চন্দনকে টাকা দিলে শিক্ষকতার চাকরি পাওয়া যাবে ৷ চাকরি না-হলে সুদ-সহ পুরো টাকা ফেরত ৷ সুতরাং, টাকা মার যাওয়ার কোনও ভয় নেই ৷ এতদিন সবকিছু ঠিক চলছিল ৷ চাকরি দুর্নীতির তদন্ত শুরু হওয়ার পর সবকিছুই বদলে যায় ৷ তদন্ত গড়ায় আদালত দোড়গোড়ায় ৷ সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে ৷ শীর্ষ আদালতের নির্দেশে বাতিল হয়েছে 2016 সালের শিক্ষক নিয়োগের পুরো প্যানেল ৷ তালিকায় রয়েছে চন্দন মণ্ডলের মাধ্যমে চাকরি পাওয়া 'মাস্টারপাড়া'র সেই সমস্ত ছেলেমেয়েরাও ৷স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, চাকরির জন্য কেউ জমি বিক্রি করে টাকা দিয়েছেন ।
{link}
কেউ ঋণ করে টাকা দিয়েছেন । এখন তাঁদের কী হবে? জমি গেল, চাকরিও গেল । ধারের টাকা তাঁরা শোধ করবেন কেমন করে ? নামখানা স্কুলে ক্লার্কের চাকরি করতেন মিঠুন বিশ্বাস । আদালতের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে তাঁরও ৷ মা ষষ্ঠী বিশ্বাস জানান, গ্রামের ছেলে চন্দন মণ্ডল ছেলের চাকরি দিয়েছিলেন । চাকরির জন্য চাষের জমি বিক্রি করে দুই লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল । চাকরি চলে যাওয়ায় ছেলের বউ ও মেয়ের ভবিষ্য়ৎ কী হবে, জানা নেই কারও ৷ গ্রামের অপর বাসিন্দা শ্যামলী মণ্ডল জানান, তাঁর ছেলে ভীম মন্ডল গঙ্গাসাগরের পাশে চাকরি করে । গরীব পরিবার হওয়ায় খুব কষ্ট করে টাকা জোগার করে ছেলের চাকরি ব্যবস্থা করা হয়েছিল ৷ এখন কী হবে, তাঁর কাছেও কোনও উত্তর নেই ৷ স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, "সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গ্রামের বহু ছেলের চাকরি গিয়েছে । বহু লোকের ক্ষতি হয়ে গেল । অনেকে জমি, বাড়ি বিক্রি করে টাকা দিয়েছেন ৷ অনেকে আবার ধার করে টাকা দিয়েছেন । সকলের কাছে গ্রামের নাম খারাপ হয়ে গেল ৷"
{ads}