header banner

জৌলুসহীন ডার্বি, দর্শকভর্তি স্টেডিয়ামে আত্মঘাতী গোলে জয়ের সান্ত্বনা পুরস্কার মোহনবাগানের

article banner

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ম্যাচর প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার কিছু সময় বাকি, লিস্টন কোলাসোর দুর্বল কর্নার থেকে ভেসে আসা বল সুমিত পাসির বুকে লেগে জড়িয়ে গেল ইস্টবেঙ্গলের জালে। সমর্থকে ঠাসা ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতে তখন নিস্তব্ধতা, অন্যদিকে উল্লাস মোহনবাগান গ্যালারিতে। এহেন আত্মঘাতী গোল বরাবরই ফুটবল মাঠে বড়ো বেদনাদায়ক। কিন্তু শেষমেষ এই একমাত্র আত্মঘাতী গোলেই পরাজিত হতে হল লাল-হলুদ শিবিরকে। রবিবারের ডার্বিতে গোল না করার অসুখ না সারলেও, বিপক্ষের দেওয়া ‘উপহার’-এর সৌজন্যেই জয়ী মোহনবাগান।


উত্তেজনা, উন্মাদনা, আবেগ, জনজোয়ার রবিবার কোন কিছুরই অভাব ছিল না যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। আড়াই বছর পর কোভিডের বিধিনিষেধ কাটিয়ে দর্শকভর্তি স্টেডিয়ামে রবিবার ফিরেছিল কলকাতা ডার্বি। বাংলার ফুটবলপ্রেমীরাও নিরাশ করেননি। কার্যত কানায় কানায় ভর্তি ছিল স্টেডিয়াম, স্লোগানের লড়াইয়ে গমগম করছিল সম্পূর্ন ফুটবল মাঠ। কিন্তু সব সম্পূর্নতা পেলেও খামতি রইল মূল যায়গাতেই। যার জন্য সমর্থকদের উপচে পড়া ভিড় যুবভারতীতে সেই দুই প্রধানের লড়াইটাই রবিবারের সন্ধায় রইল জৌলুসহীন। প্রথমার্ধের একদম শেষে সুমিত পাসীর করা আত্মঘাতী গোলে ডার্বি ও ডুরান্ড কাপে প্রথম জয় পেল মোহনবাগান। কিন্তু এই জয় যে একেবারেই আনন্দদায়ক নয় মোহনবাগান শিবিরের কাছে, তা একবাক্যে সমর্থন করবেন যে কোন সবুজ মেরুন সমর্থক। 


ম্যাচের শুরুটা হয়েছিল একদম স্বপ্নের মতোই, ডার্বির চেনা আবেগ ও উন্মাদনার ছবি ফিরে এসেছিল কলকাতার বুকে। মোহনবাগানের মতো দলের বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষণ ভারী করে নামা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও উপায় ছিল না কনস্ট্যানটাইনের কাছে। অন্যদিকে মোহনবাগানে অভাব স্ট্রাইকারের। একাধিক আক্রমণ, কিন্তু গোল নেই। মাঠে আজ ফিজির গোলমেশিন সবুজ-মেরুনে থাকলে আরও চাপে থাকত ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ, এ কথা বলাই বাহুল্য। ডিফেন্সে লোক নামিয়ে সামনে কেবল এলিয়ান্দ্রোকে রেখেছিলেন কনস্ট্যানটাইন। কিন্তু খেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মোহনবাগানের আক্রমণ এতটাই বেড়ে যায় যে সবুজ-মেরুনের রক্ষণের সামনে একা হয়ে যান এলিয়ান্দ্রো। তাঁকে বল দেওয়ার কেউ নেই। অন্যদিকে মোহনবাগানের আক্রমণ আছড়ে পড়ছিল ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণে। প্রথমার্ধে লাল-হলুদ একবারই ইতিবাচক আক্রমণ তৈরি করেছিল। ইভান গনজালেজের দূরপাল্লার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।


দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু অনিকেত যাদব লক্ষ্যভ্রষ্ট হন। মোহনবাগানের আক্রমণে তখন অনেক রং। আশিক প্রায় গোল করে ফেলেছিলেন। একাধিক বার ইস্টবেঙ্গলের বক্সে ভয়ের সঞ্চার করছিলেন কাউকো, লিস্টন কোলাসোরা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে কিছু সময় খেলা গড়ানোর পরেই কমে আসে খেলার গতি। দুই দলের কোন খেলোয়াড়দের মধ্যে মরিয়া ভাব চোখে পড়েনি। ডার্বিতে সাধারনত আজ থেকে ১০-২০ বছর আগে এই ছবি কল্পনারও অতীত ছিল। ডার্বি মানেই দুরন্ত গতির খেলা। কিন্তু সেই ছবিই চোখে পড়ল না মাঠে। শেষের দিকে দুই দলই অত্যন্ত গা ছাড়া ফুটবল খেলতে শুরু হয়। আত্মঘাতী গোলের সৌজন্যে ১-০ গোলেই শেষ হল খেলা। 
আজ সব হয়েও খামতি রইল আসল যায়গাতেই। আজ পরাজিত ইস্টবেঙ্গল দলের সমর্থকেরা মনে বেদনা নিয়ে ফিরবেন তো বটেই, কিন্তু খুশি হয়ে মাঠে ফিরবেন না মোহনবাগান সমর্থকেরাও। এই ডার্বি জয় কার্যত সান্তনা পুরস্কারের মতো। ফিনিশিং-এর সমস্যা এখনও মেটেনি সবুজ মেরুন শিবিরে, যা চাপ কমলেও কাঁটার মতো বিঁধবে হুয়ান ফেরান্দো কে। অন্যদিকে ডুরান্ড কাপে জয় অধরাই রইল ইস্টবেঙ্গলের, ডুরান্ড কাপের পরবর্তী পর্বের রাস্তায় কার্যত বন্ধ হয়ে গেল তাদের জন্য। 
 

news sports football Derby Mohun Bangan East Bengal India

Last Updated :