নিজস্ব সংবাদদাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: খিদের জ্বালায় কান্নাকাটি করার শাস্তি মৃত্যু। মদ্যপ পিসেমশাইয়ের হাতে বেধড়ক মার খেয়ে মৃত্যু হল চার বছরের এক শিশুর। তিন বছরের আরেক শিশু আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর থানার বেনেবউ গ্রামের লস্করপুরে। মৃত শিশুর নাম আফসারা খাতুন। ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত পিসেমশাই প্রসেনজিৎ মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
{link}
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ধৃত ওই ব্যাক্তির স্ত্রী ও তার শ্যালকের স্ত্রী কলকাতায় পরিচারিকার কাজ করেন। প্রসেনজিতের এক ছয় মাসের বাচ্চাও রয়েছে। শিশুটিকে নিয়েই কাজে যান তার স্ত্রী। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে শ্যালকের দুই মেয়েকে নিজের কাছে দেখভালের জন্য রাখছিলেন অভিযুক্ত ওই ব্যাক্তি। মঙ্গলবারও তারা পিসেমশাইয়ের কাছেই ছিল। অভিযোগ, ওই দিন রাতে নেশা করে বাড়ি ফিরেছিলেন প্রসেনজিৎ। সেই সময় আফসারা খাতুন এবং আলিয়া খাতুন নামে ওই দুই শিশু তার কাছে খাবার চায়। সেই কথায় প্রথমে তিনি আমল দেয়নি । এরপর খিদের জ্বালায় কান্না জুড়ে দেয় বাচ্চারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেশ কিছুক্ষণ এরকম চলার পর আচমকাই আফসারা ও আলিয়াকে তুলে দেওয়ালে মাথা ঠুকে দেয় প্রসেনজিৎ। সেই সঙ্গে ব্যাপক মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। মারধরের জেরে গুরুতর জখম হয় ওই দুই বাচ্ছা। শরীরে আঘাত লাগায় যন্ত্রণায় আর্তনাদ শুরু করে দুই শিশু। আর্তনাদ করার পরেই আফসারাকে গলা টিপে মেরে ফেলে প্রসেনজিৎ, এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের। এরপর বাচ্চাদের চিৎকার শুনে তড়িঘড়ি আশপাশের লোকজন ছুটে যায়। কিন্তু তাঁরা এসে দেখেন, সব শান্ত। প্রসেনজিতকে তাঁরা জিজ্ঞাসা করেন, কেন বাচ্চারা কাঁদছিল? উত্তর সন্তোষজনক না হওয়ায় সন্দেহ দানা বাঁধে। এরপরই তাঁরা ঘরের দরজা খুলে দেখেন, আফসারার নিথর দেহ মাটিতে পড়ে রয়েছে। জখম অবস্থায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে আলিয়া।
{link}
এই মর্মান্তিক ঘটনার পরেই স্থানীয় বাসিন্দারা তৎক্ষনাত বাচ্চা দুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই চিকিৎসকরা একটি বাচ্চাকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর বাচ্চাটি আপাতত গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। এই ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারাই থানায় খবর দেয়। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, প্রায় দিনই ওই দুই বাচ্ছাকে তাদের পিসেমশাই মারধর করতেন। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিবাদ করলে তিনি অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতেন। বাচ্ছা দুটিও প্রতিবেশীদের কাছে কাতর আবেদন করত তাদের মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু তাও শেষ রক্ষা হল না। মঙ্গলবার রাতেই পুলিশ অভিযুক্ত পিসেমশাইকে গ্রেফতার করে। এলাকাবাসীরা চান, এহেন নির্মম অপরাধের জন্য অভিযুক্তকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।
{ads}