নিজস্ব সংবাদদাতা, বর্ধমান: একজন রোগি ও তার পরিবার পরিজনদের কাছে ডাক্তার হলেন ভগবান। আর নার্সিংহোম বা হাসপাতাল হলো মন্দির। কিন্তু বর্তমানে ভগবান তুল্য সেই ডাক্তার ও নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধে ভুঁড়ি ভুঁড়ি অভিযোগ শোনা যায় প্রতিদিন। অভিযোগ বহু ডাক্তার বর্তমানে নিজেদের আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে অসৎ ভাবে টাকা রোজগারের প্রতিযোগিতায় সামিল হয়েছেন। বর্ধমান শহরও এর ব্যাতিক্রম নয়। কিন্তু তার মধ্যেই মাত্র এক টাকায় চিকিৎসা করে নজির গড়েছেন বর্ধমানের ডাক্তার বিকাশদেব বর্মণ।
{link}
ডাক্তার এবং নার্সিংহোমের সংখ্যায় বর্ধমান শহরের রেকর্ড সকলের জানা। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে তো বটেই ভিনরাজ্য থেকেও চিকিৎসার জন্য বর্ধমান শহরে আসেন। কিন্তু দিনের শেষে অধিকাংশই পকেটের টাকা শেষ করে একরাশ বেদনা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। আর এই সব বিষয় কাছ থেকে দেখে খুবই ভারাক্রান্ত হয়েছিলেন একদা ইণ্ডিয়ান আর্মিতে চিকিৎসক পদে কর্মরত বর্ধমানের ছেলে ডাক্তার বিকাশদেব বর্মন। বাড়ির এক মাত্র ছেলে হওয়ায় মায়ের অসুস্থার জন্য মাঝ পথেই ইণ্ডিয়ান আর্মির ডাক্তারের চাকরি ছেড়ে বর্ধমানে ফিরে আসেন তিনি। এর পর বেশ কিছুদিন বিভিন্ন নার্সিংহোমে রোগি দেখেন। কিন্তু এখানকার ডাক্তার ও নার্সিংহোম গুলোর হালচাল তাঁকে ব্যাথিত করে। রোগি ও তার আত্মীয়দের অসহায়তা তাকে ভাবায়। ডাক্তার বিকাশদেব বর্মন মনে মনে ভাবেন বহমান এই স্রোতে ভেসে থাকলে প্রচুর টাকা রোজগার হবে ঠিকই, কিন্তু তাঁর আদর্শের অপমৃত্যু হবে। এরপরেই তিনি মনস্থির করেন নিজেই তৈরী করবেন হাসপাতাল। আর ঐ হাসপাতালে রোগি দেখবেন কোন টাকা পয়সা না নিয়ে। এরই মধ্যে তাঁর সাথে পরিচয় হয় পদ্মশ্রীপুরস্কার প্রাপ্ত বোলপুরের এক টাকার ডাক্তার সর্গীয় সুশোভন ব্যানার্জীর। ডাক্তার সুশোভন ব্যানার্জীকে তিনি তাঁর ইচ্ছার কথা জানালে সুশোভনবাবু তাকে আশীর্বাদ করে বলেন এ কাজে তুমি অবশ্যই সফল হবে। তবে বিনা পয়সায় রোগি দেখোনা। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, গুরুদক্ষিণা না দিলে যেমন শিষ্যর শিক্ষা সম্পন্ন হয়না, ঠিক তেমনি ফি না নিলে রোগির রোগ সারেনা। তাই তুমি হাসপাতাল তৈরী করে এক টাকা নিয়ে রোগি দেখা শুরু করো।
{link}
এরপর তিনি তাঁর আদেশকে শিরধার্য মেনে নিয়ে স্ত্রী অনন্যা বর্মনের সাথে আলোচনা করেন এবং নিজেরাই বর্ধমান কেশবগঞ্জ চটির কাছে জি টি রোডের ধারে আধুনিক মানের একটি হাসপাতাল তৈরী করেন। যার নাম দেন অনন্যা হাসপাতাল। বর্তমানে ঐ হাসপাতালেই একমাস ধরে একটাকা ফি নিয়ে রোগি দেখছেন ডাক্তার বিকাশদেব বর্মন। সাংবাদিকরা বিকাশদেব বর্মনকে জিঙ্গাসা করেন আগামী দিনেও তিনি কি একটাকাতেই রোগি দেখবেন? উত্তরে তিনি বলেন, বর্ধমান শহরে এত বড়ো একটা হাসপাতাল তৈরী করে আমরা কোনো ভি আই পি বা রাজনৈতিক ব্যাক্তিকে দিয়ে উদ্বোধন করতেই পারতাম কিন্তুত তা না করে আমাদের বাবা-মা দের দিয়ে উদ্বোধন করে জুলাই মাসের নয় তারিখ থেকে পথ চলা শুরু করেছি। এর থেকেই কি মনে হচ্ছেনা এক টাকা ফি নিয়েই আগামী দিনেও রোগি দেখবো আমরা? দরিদ্র, সহায় সম্বলহীন মানুষের অমূল্য আশির্বাদই ডাক্তারের পথ চলার পাথেয়।
{ads}