header banner

জীবিত কিন্তু কাগজে মৃত, ১৮ বছর ধরে নিজেকে জীবিত প্রমানের চেষ্টায় নদীয়ার রবীন্দ্রনাথ

article banner

নিজস্ব সংবাদদাতা, নদীয়া: ঠিক সিনেমার মতো, মনে আছে সেই পঙ্কজ ত্রিপাঠীর সেই অভিনীত সিনেমার কথা? উত্তরপ্রদেশের কৃষক লালবিহারীর জীবন আধারে তৈরি হয়েছিল সিনেমা ‘কাগজ’। ভূমি দফতরের নথিতে ১৯৭৬ থেকে ’৯৪ সাল— প্রায় ১৮ বছর জীবিতকে মৃত হিসাবে দেখানো হয়েছিল সিমেনায়। একটা সংলাপও খুব জনপ্রিয় হয়, ‘‘এই মরার মতো পড়ে ছিল! আবার এই উঠে কোথায় চলে গেল?’’ সিনেমার মতো নদিয়ার ভীমনগরের রবীন্দ্রনাথ গড়াইয়ের ক্ষেত্রেও বিভ্রান্তির বয়সটা ঠিক ১৮ বছর। ২০০৫ থেকে ২০২৩— এখনও জেলাশাসক থেকে পুলিশ-প্রশাসনের বিভিন্ন সরকারি দফতরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ। না, কোনও পরিষেবা পাওয়ার জন্য নয়। তিনি যে বেঁচে আছেন, তা প্রমাণ করার চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী রবীন্দ্রনাথ।

{link}
ভুল সরকারি নথির গেরোয় রোজগারের পথ খুইয়েছেন। স্থানীয় ব্লক অফিসের অস্থায়ী কাজ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে রবীন্দ্রনাথকে। সংসার চালাতে দেনার ভারে নিঃস্ব তিনি। তবু অশক্ত শরীরে নিজেকে জীবিত প্রমাণের চেষ্টা এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে প্রশাসনের সাফাই, ‘‘অনেক পুরনো ঘটনা।’’ নদীয়ার কৃষ্ণনগর ১ নম্বর ব্লকের ভীমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ। ২০০১ সালে কৃষ্ণনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতির ‘ব্লক স্বর্ণজয়ন্তী গ্রাম স্বরোজগার যোজনা’র একটি কাজে যোগ দেন রবীন্দ্রনাথ। অস্থায়ী পদে কাজ করছিলেন। কিন্তু ওই বছরই একটি পথদুর্ঘটনায় মারাত্মক ভাবে জখম হন রবীন্দ্রনাথ। অচল হয়ে পড়েন তিনি। এখনও শরীরের ৬০ শতাংশ জায়গায় সাড় নেই তাঁর। রবীন্দ্রনাথের অভিযোগ, তিনি কাজ করতে অসমর্থ। এই কারণ দেখিয়ে ওই কাজ থেকে সরানোর চক্রান্ত হচ্ছিল। যদিও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ২০০৩ সালে পদোন্নতি হয় রবীন্দ্রনাথের। কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে সেই নির্দেশ ব্লক অফিসে এসেই আটকে যায়। আচমকাই কাজ হারান রবীন্দ্রনাথ।কাজ হারিয়ে আইনি লড়াই শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। একে একে বিডিও, মহকুমাশাসক, জেলাশাসক-সহ একাধিক সরকারি দফতরে ছুটেছেন। অভিযোগ করেছেন, তাঁকে অন্যায় ভাবে কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে তদন্তের আবেদন করেন। ২০০৫ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসন একটি তদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু তার পরেই ঝটকা। রবীন্দ্রনাথের বরখাস্ত প্রসঙ্গে দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০০৫ সালে মৃত্যু হয়েছে রবীন্দ্রনাথের। এ বিষয়ে সরকারি আধিকারিকদের অবশ্য সাফ কথা ‘‘অনেক দিন আগের ঘটনা। তবে শুনেছি মৃত্যুর শংসাপত্র নিয়ে কোনও একটা গন্ডগোলের জেরে একটা সমস্যা হয়েছে। সেই সময় জেলা স্তর থেকে বেশ কিছু তদন্ত হয়েছিল। ব্যাস সে পর্যন্তই।’’‘কাগজ’ সিনেমার শেষ অংশে ১৯৯৪ সালে জেলা প্রশাসন ওই ত্রুটিযুক্ত নথি সংশোধন করে। ফলে রেকর্ড থেকে লালবিহারীর মৃত অন্তর্ভুক্তি বাতিল হয়ে যায়। লালবিহারী ১৮ বছর ধরে লড়াই করে প্রমাণ করেই ছাড়েন যে, তিনি জীবিত। তবে দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই লড়াই করতে ক্লান্ত রবীন্দ্রনাথ জানাচ্ছেন, তাঁকে কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পের কাদম্বিনীর মতো মরে প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি মরেননি! তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এবার মরে প্রমাণ করব যে, আমি মরিনি’’। পরিসমাপ্তির শেষ লাইন কি সেই হবে, কাদম্বরী মরিয়া প্রমান করিল সে মরে নাই!! এ কোন সমাজে বসবাস করছে সভ্য সমাজের মানুষ?

{ads}

news Kaagaz Nadia West Bengal সংবাদ

Last Updated :