পূর্ব মেদিনীপুর এবং সমগ্র জঙ্গলমহল সহ বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম ও অন্যান্য জেলাগুলিতে অধিকারী পরিবারের যে নিজস্ব প্রতাপ রয়েছে তা সত্যিই অবাক করে। রাজনীতির সূত্রপাত হয়েছিল ছাত্রজীবনে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদের হাত ধরে। সেই অল্প বয়সেই ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বাবা কংগ্রেসের অভিজ্ঞ নেতা শিশির অধিকারীর হাত ধরে মাত্র ২৫ বছর বয়সেই কাঁথি পৌরসভার পৌরপিতা হন শুভেন্দু অধিকারী। বাবার সাথেই বহু সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। সেই থেকেই যাত্রা শুরু মেদিনীপুরের ভূমিপুত্রের।
আজকাল লোকের মুখে যে কথা বারবার ঘোরা ফেরা করছে, তা হল শুভেন্দু অধিকারী চাইলে একাই বিধানসভার ১১০ টি আসনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারেন। ফলত, দল থেকে তার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতরূপে দিতে পারে দলের বিপদের সংকেত। ২০০৪ সালে শুভেন্দুবাবু তমলুক লোকসভা আসনের হয়ে লড়েছিলেন বামফ্রন্টের শীর্ষ স্থানীয় নেতা লক্ষণ শেঠ-এর প্রতিপক্ষ হিসেবে। তবে সেই বারে পরাজিত হয়ে যান তৃণমূলের যুব নেতা শুভেন্দু। সেই হারকেই পরাস্ত করেন ২০০৯ এর লোকসভার নির্বাচনে। সেবার প্রথম তৃণমূল পাকাপাকি ভাবে শুভেন্দুর ক্যারিশমার ফলে ঘুঁটি সাজিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনাতে। কখনো দলের পর্যবেক্ষক হিসেবে আবার কখনো যুব সমাজের দাদা হিসেবে, তৃণমূলের উত্থানের নানান কারণের মধ্যেই শুভেন্দু অধিকারীর অবদান জ্বলজ্বল করছে সর্বক্ষণ। {ads}
নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পূর্বে পূর্ব মেদিনীপুর ছিল লক্ষণ শেঠের অধীনে। কিন্তু ধীরে ধীরে ২০০৯-এর পর থেকে যুব নেতা তার প্রভাব বিস্তার করেন পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, জঙ্গলমহল, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ দিনাজপুর, হুগলী এবং হাওড়ায়। তার জনমত গঠনের দক্ষতা এবং নিপুন রাজনৈতিক জ্ঞানের দ্বারা উপকৃত হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের সম্প্রসারণের বিভিন্ন পর্যায়ে দলনেত্রী শুভেন্দু বাবুর মতামত এবং দক্ষতাকে শীর্ষ স্থানে রেখেছেন।
ভাঙন ধরলো ঠিক ২০১৪ সালের পর থেকে, সেই মুহূর্তে তৃণমূলের যুবরাজ হিসেবে দলে প্রাধান্য পেল অভিষেক ব্যানার্জি। ধীরে ধীরে সর্বক্ষেত্রে তার পরিসীমার বৃদ্ধি তৈরী করল অন্তদ্বন্দ্ব এবং জমালো অভিমান। ফলত, বিগত ৩ থেকে ৪ বছরে দলের বহু অনুষ্ঠানে দেখা মেলেনি শুভেন্দু অধিকারীর। উনিশের পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, মালদা, পূর্ব মেদিনীপুর সহ ৯টি লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের হার ছিল তার প্রত্যক্ষ প্রমান। ফলত, বিগত কয়েকদিনের শুভেন্দুর সভা এবং সেখানে জনগণের জমায়েত ইঙ্গিত দিয়েছিল অনেক গুলো বিষয়ের। বহুজন মনে করেন, শুভেন্দু অধিকারীর তৃণমূল থেকে প্রত্যাবর্তন শুধু কে ১১০টি বিধানসভা কেন্দ্রের তা নয়, এই প্রত্যাবর্তন প্রভাব ফেলতে পারে সমগ্র ২৯৪টি আসনেই। সাম্প্রতিক কালে দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতা সৌগত রায়, অভিষেক ব্যানর্জি সহ অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পরেও শুভেন্দুর নীরবতা কি প্রমাণ করছে ? শেষ পর্যন্ত কি বলবেন ৬ তারিখের সাংবাদিক বৈঠকে? হাজার পর্যালোচনার মাঝেও শেষ মুহূর্তে শুভেন্দুবাবুর প্রতিক্রিয়া কিছুটা ইঙ্গিত দিতে পারবে আসন্ন নির্বাচনের ফলাফলের। {ads}