নিজস্ব সংবাদদাতা, হাওড়া: এমসি ঘোষ লেনে নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ৮ দিন পর অবশেষে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গ্রেফতার মূল অভিযুক্ত। নিজের মা, দাদা, বৌদি, ভাইজিকে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত দেবরাজ ঘোষ কে গতকাল গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ১০ আগস্ট এম সি ঘোষ লেনের তিনতলা বাড়ি থেকে রাতে চারটি দেহ উদ্ধারের পরেই পুলিশ দেবরাজের স্ত্রী পল্লবী ওরফে পূর্ণিমাকে গ্রেফতার করেছিল। পল্লবী বর্তমানে জেল হেফাজতে রয়েছে। ঘটনার পরই বাড়ি থেকে চম্পট দিয়েছিল দেবরাজ। সেদিন থেকেই গা ঢাকা দিয়েছিল সে। পুলিশ জানিয়েছে, গত ৮ দিন ধরে দেবরাজ বর্ধমানের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করছিল। আশ্রয় নিয়েছিল রেল স্টেশনে। তদন্তকারীরা তাঁর মোবাইল লোকেশন দেখে ক্রমাগত ট্র্যাকও করেছিল। কিন্তু বিভিন্ন সময় জায়গা পরিবর্তন করায় তাকে ধরতে পারছিল না পুলিশ। অবশেষে অভিযুক্তকে ধরতে হাওড়া থানার নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে হাওড়া সিটি পুলিশ। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ওই দলের সদস্যরা কাটোয়া স্টেশন থেকে পলাতক দেবরাজকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার ধৃতকে ৫ দিনের পুলিশ হেফাজত চেয়ে হাওড়া আদালতে তোলা হয়। হাওড়া আদালত এদিন তাকে ৩ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
{link}
অভিযোগ, গত ১০ আগস্ট রাতে দেবরাজ ও পল্লবী মিলে কুপিয়ে খুন করে বাড়ির কর্তা শিশির কুমার ঘোষের স্ত্রী তথা দেবরাজের মা মাধবী ঘোষ (৫৬)-কে। এছাড়াও খুন করা হয় দেবরাজের দাদা দেবীশীষ ঘোষ (৩৬), বউদি রেখা ঘোষ (৩০) ও তাঁদের একমাত্র মেয়ে তিয়াসা ঘোষ (১৩)-কে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, সম্পত্তিগত বিবাদ ও দেবরাজের স্ত্রী পল্লবীর সঙ্গে তার দাদা দেবাশীষের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের নিয়ে নিত্যদিনের গন্ডগোলের জেরেই একসঙ্গে চার জনকে কুপিয়ে খুন করা হয়। পুলিশের হেফাজতে থাকা দেবরাজের স্ত্রী পল্লবী অবশ্য পুলিশকে জানিয়েছে সে একাই চার জনকে খুন করেছে। তার স্বামী খুনে যুক্ত নয়, সে নির্দোষ। কিন্তু পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর দেবরাজের আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা সেই রাতে দেবরাজের হাতে রক্তাক্ত কাটারি দেখেছিল। তাঁদের অভিযোগ, দেবরাজ ও পল্লবী মিলেই চার জনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছে। এই অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখতেই পুলিশ দেবরাজকে গ্রেফতার করেছে।
{link}
ঘটনা সূত্রে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, বদমেজাজি দেবরাজ সম্পত্তি নিয়ে মা, বাবা, দাদা, বউদিকে নিত্যদিন মারধর করতো। এ নিয়ে তার মৃত মা মাধবী ঘোষের অভিযোগের ভিত্তিতে একবার জেলও খেটেছিল সে। যার ফলে পুলিশের খাতাতেও নাম রয়েছে তার। তাই এই খুনে সে যুক্ত থাকতে পারে বলে অনুমান করেই পুলিশ দেবরাজকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালাতে চাইছে। পুলিশের ধারণা পল্লবী তার স্বামীকে বাঁচাতেই নিজের ঘাড়ে পুরো দায় নিচ্ছে। কিন্তু দু’জনকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করেই পুলিশ প্রকৃত ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে চাইছে। এখন দেখার তদন্ত শেষে আরও কোন নতুন তথ্য উঠে আসে কি না।
{ads}