নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর ২৪ পরগনা: সালটা ১৯৫৭, গোবরডাঙার গৈপুরে তৈরি হয়েছিল গোবরডাঙা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। পরবর্তীতে তা গোবরডাঙা গ্রামীন হাসপাতালের রূপ নেয়। আর এই হাসপাতালে রোগী ভর্তির ব্যবস্থা, অপারেশন থিয়েটার, প্যাথলজি, এক্সরে সহ বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা পেত সাধারণ মানুষ। গর্ভবতী মহিলাদের সন্তানের জন্ম দেওয়া সহ চিকিৎসার সু বন্দোবস্ত ছিল এখানে। ২০০১ সালের ১৭ জানুয়ারি হাসপাতালটির দায়িত্ব নেয় উত্তর ২৪ পরগণা জেলা পরিষদ। তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী পার্থ দে ও সে সময়ের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পরিষধের সভাধিপতি অপর্ণা গুপ্তের উপস্থিতিতে তার উদ্বোধন করা হয়।
এলাকার বাসিন্দারা বলছেন প্রথমদিকে পরিষেবা বেশ ভালোই চলছিল। তবে রাজ্যে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে জেলা পরিষদ থেকে হাসপাতালের উপর নজরদারি কমাতে থাকে। ফলে রোগী ভর্তি বন্ধ হতে থাকে হাসপাতালে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হতে থাকে। কোনক্রমে একজন চিকিৎসক দিয়ে ঢিমে তালে চলছিল পরিষেবা। মাস দুয়েক আগে হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা একমাত্র চিকিৎসক জর্জে অগাস্টিন অবসর নিয়েছেন।এর পরপরই হাসপাতালে থাকা বাকি দুই কর্মীও হাসপাতালে তাদের কাজ থেকে অব্যাহতি নেন। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসকের দেখা তো নেই! দেখা নেই স্বাস্থ্যকর্মীদেরও।
{link}
একপ্রকার মানুষ বাঁচানোর আস্তানা যেন শ্মশানের নীরবতা পালন করছে। প্রায় ছয় বিঘা জায়গা জুড়ে হাসপাতালের বড় বিল্ডিং পড়ে রয়েছে সেখানে হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, পর্যাপ্ত ঘর, রোগীদের থাকার জায়গা, চিকিৎসা পরিষেবা চালানো মোটামুটি যা যা দরকার সবই রয়েছে। শুধু নেই চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী কোন কিছুই। এদিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল হাসপাতালের একটি ঘরে একটি মোটর বাইক, সিকিউরিটি গার্ডের দুটি পোশাক ঝুলছে তবে সিকিউরিটি গার্ডের দেখা নেই। প্রায় ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করে ডাকাডাকি করেও কোন কারো কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। এলাকার বাসিন্দারা চান হাসপাতাল থেকে পরিষেবা পেতে। শুধু গোবরডাঙা নয় আশেপাশের অন্তত ৫০ টি গ্রামের মানুষ এই হাসপাতালের উপর নির্ভর করেছিল। বর্তমানে কোন রোগী অসুস্থ হয়ে পড়লে যেতে হয় সেই হাবড়া হাসপাতাল বা বনগাঁ অথবা চাঁদপারা ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালে । যদিও গোবরডাঙা থেকে রোগী নিয়ে যেতে ওই সমস্ত জায়গায় ৬০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।
কখনও বামেদের তরফে কখনো গেরুয়া শিবিরের তরফে হাসপাতালের বেহাল অবস্থার কথা তুলে ধরে আন্দোলন মাইক ফুকে আওয়াজ তোলা হয়েছে। তবে লাভের লাভ কিছুই হয়নি। গোবরডাঙা পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত একসময় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে গোবরডাঙার হাসপাতালের কথা তুলে ব্যাঙ্গাত্মকভাবে ধমক খান। হাসপাতালের পরিষেবা বন্ধ নিয়ে নিজেও খানিকটা বিব্রত বর্তমান পুরপ্রধান শঙ্কর দত্ত। তিনি বলেন এলাকার বাসিন্দাদের কাছে হাসপাতাল না থাকাটা দুঃখজনক স্বাস্থ্য দপ্তর ও জেলা পরিষদে এ বিষয়ে একাধিকবার জানিয়েছি। আশা করি হাসপাতালের হাল খুব দ্রুত ফিরবে।
{ads}