‘সূর্য’ , এই পৃথিবীতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করার অন্যতম কারিগর , লক্ষ্য লক্ষ্য বছর আগে পরিপূর্ণ জীবনচক্র সৃষ্টিতে অন্যতম ভুমিকা নেয় ‘সূর্য ’। তাই সভ্যতার আদি সময়কাল থেকে ‘সূর্যকে’ দেবতার ন্যায় আরাধনা করা হয় ।
পুরান মতে হিন্দুধর্মের সৌর দেবতা হলেন ‘সূর্য ’। তাঁর রথের ঘোড়াগুলি সাতটি পৃথক পৃথক রঙের, যা রামধনুর সাত রঙের প্রতীক। তিনি রবিবারের অধিপতি। রামায়ন ও মহাভারতে সূর্যের ভুমিকা কথিত আছে , ভারতবর্ষে সূর্য্যদেব ও তার পত্নী ঊষার প্রতি সমর্পন করে ছট পূজা পালন করা হয় , যেখানে তাকে পৃথিবীতে জীবনের স্রোত বহাল রাখার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও আশীর্বাদ প্রদানের কামনা করা হয়। ছটে কোনও মূর্তি পূজা করা হয় না।ছট পূজা এখন সম্পূর্ণ বিশ্বে ভিন্ন জায়গায় পালন করা হয় । হিন্দু বর্ষপঞ্জীর কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে উদযাপিত এটি একটি প্রাচীন হিন্দু পার্বণ ।
এই পুজার একটি ঐতিহাসিক পরিচিতি আছে , হাজার হাজার বছর আগে ভিন্ন পুরানে সূর্য দেবের আরাধনার কথা উল্লেখ আছে ।ঋগ্বেদের শ্লোকসমূহে সূর্য্যবন্দনার স্পষ্ট নিদর্শন আছে।ভিন্ন প্রাচীন সভ্যতা তথা গ্রীক , রোমান , মিশরীয় ও অন্যান্ন নানান সভ্যতার সঙ্গে এই আরাধনার মিল পাওয়া যায়।রামায়ণে উল্লেখ থাকা মতে, ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের কুলদেবতা সূর্য্যের জন্য রাম এবং সীতা এই পূজা করেছিলেন। মহাভারতে উল্লেখ থাকা মতে, মহাবীর কর্ণের কোমর পর্যন্ত জলে নেমে সূর্য্যের উপাসনা করা উল্লেখ আছে। শুধু তাই নয় কর্ণের সঙ্গে ভগবান সূর্যের পিতা-পুত্রের সম্পর্কও প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ।{ads}
ভারতবর্ষে দেবতা সূর্যের আরাধনার জন্য প্রসিদ্ধ পার্বণ হল ছট পূজা।দেশের ভিন্ন রাজ্যে বছরে দুবার পালিত হয় , বিহার , উত্তর প্রদেশ , ঝাড়খণ্ড প্রভৃতি রাজ্যের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ।প্রথমবার চৈত্র মাসে এবং দ্বিতীয়বার কার্তিক মাসে ।পারিবারিক সুখ-সমৃদ্ধি তথা মনোবাঞ্ছিত ফল লাভের জন্য এটি পালন করা হয়। নারী-পুরুষ সমানভাবে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন।
আলোকিত মাটির প্রদীপ সৌরশক্তির প্রতীক । সূর্য উদয় ও সূর্যাস্তের সময় এই পুজা করা হয় ।চারদিন ধরে এই পূজা করা হয় । পূজার দুদিন আগে লাউ ভাত এবং একদিন আগে খির ভাত খাওয়ার সঙ্গে ৩৬ ঘণ্টার এক কঠোর ব্রত পালন করতে হয়। পূজায় সম্পূর্ণ সাত্বিক নৈবেদ্য ইত্যাদি কুলো, ডলা বা পাচিতে রেখে উৎসর্গ করা হয়। বিভিন্ন ফলমূল, মিঠাই ও ঠেকুয়া প্রস্তুত করে নৈবেদ্যরূপে প্রদান করা হয়। এই সময় নুন-মশলাবর্জিত সম্পূর্ণ নিরামিষ খাদ্য গ্রহণ করা হয়। পূজার শেষে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীদের প্রসাদ বিতরণ এই পূজার অন্যতম নিয়ম। এই পূজায় অনেককে বাগরি নদীর ঘাটে গিয়ে পূজা করার দৃশ্যও দেখতে পাওয়া যায়।
ভারতবর্ষ একটি ভিন্ন ধর্ম , ভিন্ন ভাষার এবং ভিন্ন সংস্কৃতির সমন্বয়ের একটি আনন্দক্ষেত্র । এই আনন্দ ভুমিতে সমস্ত ধর্ম বিশেষে সমস্ত পুজার যথাযথ মর্যাদা দিয়ে আরাধনা করা হয় এবং একইসঙ্গে ভিন্ন ধর্মের মানুষ বন্ধু রূপে মিলিত হন । না আছে কোন ভেদাভেদ না আছে কোন বিরোধ এই ভুমিতে স্থান পেয়েছে সমস্ত জগৎ।
{ads}