নিজস্ব সংবাদাতা, বাঁকুড়াঃ ভূতে ধরেছে, সেই অভিযোগেই চিকিৎসা করছেন কোন ডাক্তার না, এখন ওঝা। চিকিৎসার নামে এক কিশোরীর উপর চলছে অকথ্য অত্যাচার, বাঁধা দিতে গিয়ে উপরন্তু রীতিমতো তিরস্কারের সম্মুখীন হতে হল বিজ্ঞাপন মঞ্চে সদস্যদের। ফের মধ্যযুগীয় বর্বরতা আর কুসংস্কারচ্ছনতার স্বাক্ষী থাকলো বাঁকুড়া। এবার এক সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রীকে 'ভূতে ধরেছে' দাবি করে তার পর ওঝা-গুণীনের অকথ্য অত্যাচার চললো। এমনকি শুকনো লঙ্কা পুড়িয়ে তার ধোঁয়া দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। আর ঐ ঘটনার প্রতিবাদ করলে বাধার সম্মুখীন হন বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরাও। ঘটনাস্থল মেজিয়ার রামচন্দ্রপুর গ্রামের বাউরী পাড়া।
{link}
স্থানীয় সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রামচন্দ্রপুর গ্রামের বাউরী পাড়ার এক স্কুল ছাত্রী অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। সে স্থানীয় তেলেণ্ডি-পুরুনিয়া হাই স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পাঠরতা। ঐ অস্বাভাবিক আচরণের পরেই পরিবারের লোকেরা 'মেয়েকে ভূতে ধরেছে' ধরে নিয়ে বেলিয়াতোড় থানার গদারডিহি গ্রামের এক মহিলা ওঝার স্মরণাপন্ন হন। বুধবার সকালে ঐ ওঝা এক সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে অসুস্থ ছাত্রীর বাড়ির অদূরে পূজার্চণা শুরু করেন। একই সঙ্গে 'ভূত তাড়ানো'র নামে ঐ ছাত্রীর উপর অকথ্য অত্যাচার চলতে থাকেও বলে অভিযোগ।
{link}
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের মেজিয়া বিজ্ঞান কেন্দ্রের সভাপতি স্বরূপ নারায়ণ মুখার্জী। তিনি ঐ ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাঁকেও গালিগালাজ করা বলে অভিযোগ। পরে খবর পেয়ে মেজিয়া থানার পুলিশ গ্রামে গিয়ে বিজ্ঞান মঞ্চের ঐ সদস্যকে উদ্ধার করেন। এবিষয়ে মুখ খুলতে চাননি ঐ ওঝা, গ্রামের মানুষ থেকে ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা। তবে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের মেজিয়া বিজ্ঞান কেন্দ্রের সভাপতি স্বরূপ নারায়ণ মুখার্জী বলেন, এই পরিস্থিতি মেনে নেওয়া যায়না। পুলিশের ভয় দেখিয়েও কাজ হয়নি। ঘটনার প্রতিবাদ করলে আমাকে আক্রমণের মুখে পড়তে হয়। পুলিশের সাহায্যে ঐ জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়। এই পরিস্থিতির আশু পরিবর্তন জরুরী বলে তিনি মনে করছেন বলে জানান। বর্তমান সময়ে আমরা সকলে নিজেদেরকে সভ্য সমাজের সদস্য বলে দাবী করি। কিন্তু প্রশ্ন হল আমরা আদৌ কি সভ্য হয়ে উঠতে পেরেছি? উত্তরটা হ্যাঁ হলে হয়ত এই ঘটনা আমাদের আজ খবরে দেখতে হত না। প্রশ্ন হল, এহেন কুসংস্কার ও তার প্রভাবে এরূপ নারকীয় অত্যাচারের শেষ কোথায়?
{ads}